কে কী বলল, যায় আসে না: আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে খলিলুর

 


খবরঃ

সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, নিজেদের স্বার্থে যার সঙ্গে ইচ্ছা তার সঙ্গে দেখা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কে কী বলল, যায় আসে না। ... প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিয়ে মিয়ানমার সম্ভবত একটা রিঅ্যাকশন দিয়েছে, একটা চিঠি দিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান কী? উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, “আরেকটা জিনিস বিবেচনায় রাখতে হবে, আমাদের সীমান্তের ওপারে এখন নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির। এটা তো আমাদের সীমান্ত এবং এটা আমাদের সার্বভৌম সীমান্ত। এই সীমান্ত আমাকে ম্যানেজ করতে হবে, রক্ষা করতে হবে, শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। এটাতো একটা আন্তঃসীমান্ত। এজন্য ওপারে যেই থাকুক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব। https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/45b3b2a6e2cd 

মন্তব্যঃ

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার যুক্তি হচ্ছে, সীমান্তের ওপারে যেহেতু আরাকান আর্মির কর্তৃত্ব সেহেতু আন্তঃসীমান্ত বিষয় এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি এগিয়ে নিতে আমাদেরকে আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু, রাখাইন রাজ্যে কি আসলে আরাকান আর্মির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? বাস্তবতা হচ্ছে, আরাকান আর্মি আরাকানের নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোর একটি পক্ষ মাত্র? এই মুহূর্তে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে আরাকান আর্মির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে চরম সংঘাত চলছে। যার কারণে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি করেছে যে, গত কয়েক মাসে রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এরকম বিবাদমান পরিস্থিতিতে, অন্তর্বর্তী সরকার কেন আরাকানের বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র দুর্বৃত্ত আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে? ইতিমধ্যে সরকার তাদেরকে বাংলাদেশে জামাইয়ের মর্যাদা দিয়ে দেশের ১০ কিঃমিঃ অভ্যন্তরে সামরিক ইউনিফর্মে জলকেলি করার সুযোগ দিয়েছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ parbattanews.com/বাংলাদেশের-১০-কি-মি-ভেতরে, এপ্রিল ২০, ২০২৫)। অন্যদিকে, সরকার রোহিঙ্গাদের সংগঠিত হওয়ার সকল প্রচেষ্টাকে শক্ত হাতে দমন করছে। সম্প্রতি, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরসা প্রধান আতাউল্লাহকে পরিবারসহ গ্রেফতার করে বন্দি করা হয়েছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ নারায়ণগঞ্জে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ গ্রেপ্তার, সমকাল, ১৯ মার্চ ২০২৫)। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন যদি মূল ইস্যু হয় তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার কেন রোহিঙ্গাদের নিধনে অংশগ্রহণকারী খুনী আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে? অর্থাৎ, এখানে দেশের স্বার্থ কিংবা রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন মূল ইস্যু নয় বরং, এই ইস্যুটি আরকানে একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আমেরিকান প্রকল্পের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। আমেরিকা দীর্ঘদিন যাবৎ আরাকান এবং বাংলাদেশের কিছু অংশ নিয়ে এই অঞ্চলে পূর্ব তিমুরের মত একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই অঞ্চলে আমেরিকার কর্তৃত্বকে সুদৃঢ় করার মাধ্যমে চীনের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত এবং এই অঞ্চলে খিলাফত প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করা। (বিস্তারিত জানতে দেখুন: বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র: এনডিটিভিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান, বাংলা ট্রিবিউন, ১৭ মার্চ ২০২৫)।

মুসলিম শাসকের কাছে যদি উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করা মূল এজেন্ডা হয়, তাহলে এই রকম নতজানু শাসকগোষ্ঠীর কি মুসলিমদের শাসন করার কোনপ্রকার বৈধতা আছে? রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্য করা মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেছেন, “মু‘মিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা” (মুসলিম, হাদিস: ৬৪৮০)। এই হাদিসের বাস্তব প্রতিফলন হিসেবে, মুসলিম শাসকদের নির্যাতিত মুসলিমদের মুক্ত করার মডেলর অসংখ্য উদাহরণ এই ভারত উপমাহাদেশেই রয়েছে। ভারত উপমাহাদেশের হিন্দু শাসকদের মুসলিমদের নিরাপত্তা প্রদানের ব্যর্থতার কারণেই তৎকালীন খিলাফত মুসলিম বীর মুহাম্মাদ বিন কাসিমকে হিন্দুস্তান অভিযানে প্রেরণ করেছিলেন যার মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামী শাসন শুরু হয়। বর্তমান সেকুলার ব্যবস্থার ন্যায় খিলাফত কখনও নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষার নামে কোন জালিম গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে নাই এবং করবেও না। ভবিষ্যত খিলাফত প্রকৃতপক্ষে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বার্থে মুসলিম সেনাবাহিনীকে প্রেরণের মাধ্যমে অধিকৃত আরাকানকে মুক্ত করবে, কারণ এই ভূখণ্ডের মালিক মুসলিমরা। 

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post