“দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি পিন্ডির দাসত্ব করতে নয়। ওয়াশিংটন কিংবা মস্কোর দাসত্ব করতেও নয়: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ”

 

খবরঃ

দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি পিন্ডির দাসত্ব করতে নয়, ওয়াশিংটন কিংবা মস্কোর দাসত্ব করতেও নয় বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। রোববার (১১ মে) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা কঠিন। এর চেয়ে কঠিন সত্য আর নেই। লড়াই যেন থামছেই না। মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে দিয়ে চলে যাই রাজপথে। সেটাই আমার জায়গা, যা করতে অভ্যস্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তিনি বলেন, ‘ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় এলেও থেকে যেতে হয় গণ-অভ্যুত্থানের পাহারাদার হওয়ার জন্য। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আওয়াজটা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র অনেক বড় এবং জটিল জায়গা। এখানে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। (https://www.jugantor.com/national/952862)

মন্তব্যঃ

জনগণ বিদেশীদের দালালীমুক্ত রাজনীতি চায় এবং বিদেশীদের আগ্রাসন ও প্রভাবমুক্ত সার্বভৌম রাষ্ট্র চায়, যা জুলাই আন্দোলনের অন্যতম স্পিরিট ছিল। তাই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এই বক্তব্যটির মাধ্যমে জনগণের উপনিবেশবাদ বিরোধী ও দেশপন্থী (Anti Colonialist & Pro Country) রাজনৈতিক স্পিরিটিকে নিজের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দিল্লী-পিন্ডী, ওয়াশিংটন-মস্কো কিংবা যেকোন পশ্চিমা উপনিবেশবাদ-বিরোধী এবং দেশ-পন্থী রাজনীতির জন্য আসিফ মাহমুদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবনা কী? পশ্চিমা শক্তির দাসত্ব থেকে দেশ ও জনগণকে মুক্ত করতে তাদের সত্যিকার রোডম্যাপ কি? এগুলো না থাকলে এটি কেবল ফাকা বুলি ছাড়া আর কিছু হিসেবে পরিগণিত হবে না। 


জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মুখে “Pro Country” রাজনীতির বক্তব্য শুনলেও তাদের বাস্তবিক কর্মকান্ডে “Pro Colonialist” রাজনীতি প্রত্যক্ষ করছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে দিল্লীর দ্বাসত্ব থেকে মুক্ত করার কথা বললেও তারা এখনো ভারতের সাথে হাসিনার দেশবিরোধী সকল চুক্তি বহাল রেখেছে, ভারতের সাথে যৌথ টহল ‘CORPAT’ ও দ্বিপক্ষীয় মহড়া ‘বঙ্গোসাগর’ আয়োজন করেছে, পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারে দীর্ঘসুত্রিতা অব্যাহত রেখেছে। আর অন্তর্বর্তী সরকারের ভারত বৈরিতার মুখোশে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার রাজনীতি এখন আর কারোই অজানা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে শতাধিক পণ্যের উপর উচ্চহারে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করে জনগণের গলা চিপে ধরা, আইএমএফ থেকে বের হয়ে যাওয়ার চটকদার বক্তব্য দেয়ার পরপরই টাকার বিপরীতে ডলার রেটকে ফ্লোটিং করার সুযোগ দিয়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানোর নতুন বন্দোবস্ত করা, মার্কিন কোম্পানি আর্জেন্ট এনার্জির সাথে বৃহৎ এলএনজি চুক্তি, রাখাইনে মানবিক করিডরের নামে দেশকে মার্কিন প্রক্সিযুদ্ধে জড়ানোর অপচেষ্টা, এবং দেশের কৌশলগত চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল মার্কিন নেভীর অংশীদার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে তুলে দেয়ার মত দেশবিরোধী কর্মকান্ডের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে মার্কিন নতজানু হিসেবে জনগণের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তাহলে, ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে জনগণের আত্মত্যাগ এবং তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা কি এটা ছিল যে দেশকে ভারতের কবল থেকে মুক্ত করে মার্কিন উপনিবেশবাদীদের হাতে তুলে দেয়া হবে?


প্রকৃতপক্ষে, উপনিবেশবাদীদের সমর্থিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও তাদের দালাল রাজনীতিবিদদের টিকিয়ে রেখে “Pro Country” রাজনীতিও যেমন সম্ভব নয় তেমনি জনগণকে বিদেশী গোলামী থেকে মুক্ত করাও সম্ভব নয়। কারণ মার্কিন-ভারতের দালালগোষ্ঠী দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে হলেও তাদের উপনিবেশবাদী প্রভুদের ভু-রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষায় বদ্ধপরিকর। তাই রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে আমাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে আকড়ে ধরতে হবে, যে রাজনীতির মূল স্পিরিটই হচ্ছে জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ সঠিক তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে জনগণকে রক্ষা করা। সত্যনিষ্ট ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক দল হিয/বুত তা/হ্‌রীর সেই রাজনীতিই পরিচালনা করে আসছে। যারা নতুন বাংলাদেশ খিলাফত রাষ্ট্র হিসেবে এর প্রশাসনিক কাঠামো, সংবিধান, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি এবং মার্কিন-ভারত ও পশ্চিমাদের আগ্রাসন মোকাবেলার সুস্পস্ট রোডম্যাপ সহ নীতিমালা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রস্তুত। তাই ছাত্র-জনতাকে বিদেশীদের আগ্রাসন ও প্রভাবমুক্ত সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য হি/যবুত তা/হ্‌রীরের নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আল্লাহ্‌’র ইচ্ছায় অচিরেই তাদের নেতৃত্বে ইসলামী বিশ্বব্যবস্থার গোড়াপত্তণ ঘটবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তিনিই আল্লাহ্‌, যিনি তাঁর রাসুলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়েত ও সত্য জীবনব্যবস্থাসহ যাতে তা অন্য সকল জীবনব্যবস্থার উপর বিজয় লাভ করে” (সুরা আস সফঃ ৯)। 

    -    কাজী তাহসিন রশীদ


Previous Post Next Post