খবরঃ
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মুক্তমত প্রকাশে কোনো দল বা ব্যক্তির স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করবে না বলে আশা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।… (https://bangla.bdnews24.com/politics/15bcaccbe805)
মন্তব্যঃ
‘মুক্তমতে বাধা’ দোহাই দিয়ে যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, তাদের নিজেদের এই মুক্তমতের পক্ষে অবস্থান কতটুকু, তা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। এদের মধ্যে প্রধান হলো, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর প্রভুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ‘ভারত’, যারা নিজ রাষ্ট্রে মুসলিমদের মুক্তভাবে মত প্রকাশ তো দূরের কথা নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পর্যন্ত দিতে নারাজ (https://www.newsclick.in/indias-free-speech-crisis-deepens-329-violations-4-months)। আবার সরকার তথাকথিত যে জনস্বার্থের কথা বলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, তাও কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ একদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা বেশিরভাগ হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের মুখোমুখি না করে দীর্ঘদিন তাদের আশ্রয় দিয়ে তারপর বহাল তবিয়তে বিদেশে চলে যেতে দিয়েছে, অন্যদিকে আওয়ামীলীগ কর্তৃক ৫ই মে গণহত্যা, পিলখানা সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ড, জুলাই গণহত্যা ইত্যাদির বিচারের ব্যপারে নানারকম টালবাহানা করছে।
আর যে মুক্তমতের চর্চার বিষয়টিকে ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধিতা করা হচ্ছে, সেটিও আসলে একটি অবাস্তব ধারনা। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (স্রষ্টা বিবর্জিত বিশ্বাস) থেকে উৎসারিত এই ‘মুক্তমতের স্বাধীনতা’কে ব্যবহার করে কেউ যদি এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং ইসলামী আক্বিদার ভিত্তিতে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে, তাহলে তাকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় (যেমন, হিযবুত তাহ্রীর)।
মূলত মুক্তমত চর্চার বিষয়টির উদ্ভব হয়েছিল ইউরোপীয় দার্শনিক ও চিন্তাবিদ (গ্যালিলিও, ব্রুনো ইত্যাদি) কর্তৃক চার্চের অসাঢ় মতবাদ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর বাস্তবতায়। তারপরে এক দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চিন্তাবিদদের নিকট চার্চের মতবাদগুলোর পতন ঘটে। সেই বাস্তবতায় ইউরোপে খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করাই ‘মুক্তমত’ বলে প্রতীয়মান হয়। তখন তারা ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে স্রষ্টাবিবর্জিত এক সমাজ গড়ে তুলে। কালক্রমে পশ্চিমারা বিশ্বনেতৃত্বে আসীন হলে উপনিবেশ তৈরির মাধ্যমে পুরো বিশ্বে তাদের এই চিন্তা চাপিয়ে দেয়। এই বাস্তবতা ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে আগ্রহী এই মুসলিম উম্মতের সাথে কখনোই সংগতিপূর্ণ নয়। এমনকি স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে পশ্চিমাদের নিকটও এই মুক্তমতের বিষয়টি অবান্তর। যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে কেউ যদি ফিলিস্তিনে ইহুদি কর্তৃক মুসলিম গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে তারা তাকে ‘অ্যান্টিসেমিটিক’ আখ্যা দিয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানে আর তাদের ‘মুক্তমত’র তত্ত্বকথা কাজ করে না।
তাই যে মুক্তমতের ধারণার উপর ভিত্তি করে একদিকে আওয়ামীলীগের মতো গণহত্যাকারী দলটির বৈধতা দেওয়ার রাস্তা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র জমীনে আল্লাহ্ কর্তৃক আদেশকৃত খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। পশ্চিমা প্রতারণাপূর্ণ এই মুক্তচিন্তার কোনো স্থান ইসলামে নেই। একজন মুসলিম কিংবা কোন দল অথবা রাষ্ট্র তার চিন্তা, কথায় এবং কর্মে এমন কিছু সে করতে পারে না বা বলতে পারেনা যেটা আল্লাহ্ নিষেধ করেছেন, কারণ স্রষ্টা হিসেবে ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দের বিধি-নিষেধগুলো সম্পর্কে তিনিই একমাত্র সঠিক জ্ঞান রাখেন।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম