খবরঃ
দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মিছিল-সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছেড়ে মারধর-ভাঙচুরসহ নানা বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা রোধে শিক্ষা-সংশ্লেষবিহীন মিছিল ও সমাবেশে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এমন নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। [শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ]
মন্তব্যঃ
যেই ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে দীর্ঘ পনের বছরের ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে, সেই ছাত্রদের আন্দোলন করার অধিকারকেই বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্র-আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের সূচনালগ্নের মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদবিরোধী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি সবগুলো আন্দোলনেই শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষার্থীদের ত্যাগের উপর ভর করে নতুন কোন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতালোভী নতুন রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদ তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ছাত্রদের ন্যায় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে আকাংক্ষা তা কখনোই আশার আলো দেখতে পায়নি। একই পরিক্রমা পরিলক্ষিত হচ্ছে ২৪ এর জুলাই আন্দোলনের বেলাতেও। ভারতের তপ্ত কড়াই থেকে আমেরিকার চুল্লীতে সরাসরি নিক্ষেপ করা হচ্ছে এই অঞ্চলটাকে। আমরা দেখেছি, ভারত কর্তৃক রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অবমাননা বিরুদ্ধে, ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণার দাবীতে, ফিলিস্তিনে মুসলিম গণহত্যাকারী ইসরায়েল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মত ইসলাম ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার এসব ইস্যুতে বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরব ছিল ও এখনও আছে। ক্ষমতালোভী সেকুলার সরকার ও রাজনৈতিকগোষ্ঠীর নিকট যা অস্বস্তিকর কারণ এগুলো তাদের প্রভু মার্কিন-ভারতকে অসন্তুষ্ট করে এবং তাদের ক্ষমতার ভীত নড়বড়ে হয়ে যায়। আমরা দেখেছি, গাজায় গণহত্যা ইস্যুতে আমেরিকা-ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিছিলে অংশগ্রহণ করায় নটোরডেম ও বিএএফ শাহীন কলেজ হতে কতিপয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা বর্তমানে ছাত্রদের আন্দোলন করার অধিকারকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে যেন তারা আবার সহসা রাস্তায় না নামে।
এই প্রতারণার চক্র থেকে ছাত্ররা যদি সত্যি সত্যি বের হয়ে আসতে চায়, তাহলে তাদের বুঝতে হবে, এই সমস্যার মূল প্রোথিত আছে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের সেকুলার ব্যবস্থার মধ্যে। প্রতিবার ছাত্রদের পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে ব্যবহার করে শুধু চেহারা পরিবর্তন করানো হয়েছে, কিন্তু পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের সেকুলার ব্যবস্থা অক্ষত থেকেছে। এই ব্যবস্থা পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও লোভী পুঁজিপতিগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য শাসকদের যেকোন আইন তৈরির স্বার্বভৌম ক্ষমতা দেয়। যেমন, আমরা দেখেছি, পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা যেমন মার্কিন ইন্দোপ্যাসিফিক কৌশলের আলোকে ইন্দো প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করেছিল, মার্কিন স্বার্থে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর জাপানকে দিয়েছিল, ভারতকে ট্রানজিন, ট্রান্সশিপম্যান্ট দিয়েছিল, ঠিক তেমনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন স্বার্থে দেশের চট্টগ্রাম বন্দর ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দিচ্ছে, মার্কিন স্বার্থে দুর্বৃত্ত আরাকান আর্মিকে তথাকথিত মানবিক করিডর দিচ্ছে। তাই ছাত্রদের এরকম ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন যেগুলোর মাধ্যমে শুধু পশ্চিমা দালালদের চেহারা পরিবর্তন হয়, এতে সীমাবদ্ধ না থেকে সামগ্রিকভাবে পশ্চিমা উপনিবেশবাদী সেকুলার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে, তার জায়গায় আমাদের নিজস্ব জীবনাদর্শ তথা ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে হবে। একমাত্র ইসলামী জীবনাদর্শ তথা খিলাফতই পারে জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট পলিসি দিতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে। কারণ স্রষ্টাই সৃষ্টি সম্পর্কে সবচেয়ে ওয়াকিবহাল। তাই, ছাত্র-তরুণ সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে, পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও তাদের দালালদের দ্বারা আর ব্যবহৃত ও প্রতারিত না হয়ে সত্যিকারের পরিবর্তন তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করা। আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “মু‘মিনগণ একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না” (সহীহ্ মুসলিম)। যুবকদের হাত ধরেই পরিবর্তন এসেছে এবং ইসলামের ভিত্তিতে আগামীর পৃথিবীর বুনিয়াদ গড়ে উঠবে, ইনশা‘আল্লাহ্।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আমি তোমার কাছে তাদের সঠিক ঘটনা বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক, যারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল, এবং আমি তাদের সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম” [সূরা কাহাফঃ ১৩]।
- জাবির জোহান