অধ্যাদেশ জারি, এনবিআর ভেঙে হলো দুই বিভাগ



খবরঃ 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব খাতকে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। সোমবার (১২ মে) রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অনুমোদনের পর ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়। এরফলে ‘এনবিআর’ নামের প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এনবিআরের দীর্ঘদিনের কেন্দ্রীয় কাঠামো ভেঙে পৃথক দুটি বিভাগ গঠনের মধ্য দিয়ে রাজস্ব প্রশাসনে এক যুগান্তকারী সংস্কার এলো। এনবিআরের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটি প্রথম বড় প্রশাসনিক বিভাজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংস্কার রাজস্ব প্রশাসনের গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা থাকবে বলেও সতর্ক করছেন তারা। (www.banglatribune.com/national/898280/এনবিআর-ভেঙে-দুই-ভাগ-হলো-অধ্যাদেশ-জারি)

মন্তব্যঃ 

আইএমএফের পরামর্শে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দুই ভাগ করার আগে আমাদের প্রশ্ন করা উচিৎ, রাষ্ট্র কি শুধু জনগণের টাকায় চলবে, নাকি রাষ্ট্রের নিজস্ব সম্পদ রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কোন ভূমিকা রাখবে? নাকি প্রাকৃতিক গ্যাস, নদী ও সমুদ্র বন্দরের উপর শুধু বৈদেশীক শক্তির একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে? ‘স্বচ্ছতা’ ও ‘জবাবদিহিতা’র কথা বলে আইএমএফের পরামর্শক্রমে এর আগেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকেও বিতরণ, সঞ্চালন ও উৎপাদন কার্যের ভিত্তিতে নানাভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এর কোন সুফল কি সমগ্র বাংলাদেশ পেয়েছিল? বরং, আমরা দেখতে পেয়েছি ‘কুইক রেন্টালের’ নামে ‘ক্যাপাসিটি চার্জের’ ভার জনগণকে সহ্য করা লেগেছে এবং এখনো লাগছে। যদি প্রকৃতই আইএমএফ এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যই থাকতো, তাহলে তারা বিদেশী কোম্পানীগুলোকে ট্যাক্স প্রদানে বাধ্য করত। এনবিআর এর ২০২১-২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ইউনিলিভার, নেস্টলে বাংলাদেশ এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো- এর মত কোম্পানীগুলো মোট ১২০০ কোটি টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দেয়। গ্রামীণফোনের কাছে রাষ্ট্রের প্রাপ্য ৫০০০ কোটি টাকার বেশী কর এখনো শোধ করা হয়নি। মূলতঃ বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৌশলগত অবস্থানকে দখল করে শুধুমাত্র রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে কিভাবে জনগণকে শুষে ছিবড়ে বানিয়ে দেয়া যায় সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত আইএমএফ ও তার তাবেদার শাসক ও নীতিনির্ধারকগোষ্ঠী। [দেখুনঃ ব্যক্তির ন্যূনতম কর ৩,০০০ থেকে বাড়িয়ে ৫,০০০ টাকা করার প্রস্তাবঃ ২৫ মে,২০২৫ বাংলা ট্রিবিউন]। এভাবেই তারা তাদের ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ জারি রাখতে চায় যেন সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের রাষ্ট্রগুলো তাদের দেয়া পলিসির ফাঁদেই সারাক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকে।

তাই বাংলাদেশের মত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক ঔপনিবেশিক আধিপত্য থেকে মুক্তি পেতে হলে পশ্চিমাদের পলিসি এবং পলিসি প্রণেতাদের ছুঁড়ে ফেলে ইসলামী পলিসিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন এবং পরকালকে সুনিশ্চিত করতে হলে ইসলামী পলিসি প্রয়োগের জন্য দরকার ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফত। খিলাফত শাসনব্যবস্থার খলিফা তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ জ্বালানী খাতকে দেশী-বিদেশী পুঁজিবাদী কোম্পানীগুলোর হাত থেকে রক্ষা করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আনবেন। ফলে জ্বালানী সহজলভ্য হবে, ক্যাপাসিটি চার্জ বিলুপ্ত হবে, শিল্পোৎপাদনের খরচ কমবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমে আসবে। বাস্তব জায়গা থেকেই বিদেশী রাষ্ট্রের কাছ থেকে শুধুমাত্র বৈদেশিক বাণিজ্যের রিসিপ্রোকাল কর আদায় ছাড়া জনগণের কাছ থেকে আলাদা করে কোন কর আদায়ের প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও ইসলামে অন্যায়ভাবে কর আদায় নিষিদ্ধ। কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “যে মাক্স (কর বা শুল্ক) আদায় করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না”। 

    -    জাবির জোহান


Previous Post Next Post