নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা: সম অধিকার দাবী

 

খবরঃ

নারী-পুরুষ সমানাধিকারের দাবীতে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে 'নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা'-শীর্ষক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নারীর সমান অধিকারের দাবীতে অংশগ্রহণকারীরা নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, মূলত নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে এই কর্মসূচি হচ্ছে। পাশাপাশি নারীদের প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কর্মসূচি হচ্ছে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরপরই আয়োজকেরা একটি ঘোষণা পাঠ করেন। তাদের ঘোষণাপত্রে জমির অধিকার, বৈবাহিক সমতা এবং প্রজনন অধিকার সুরক্ষায় আইনি সংস্কারের দাবী জানানো হয়। এছাড়া এই ঘোষণাপত্রে যৌনকর্মী ও এলজিবিটিকিউ+ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘোষণাপত্রের লেখকরা বলেন, ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে না ওঠা পর্যন্ত তারা তাদের লড়াই চালিয়ে যাবেন। (https://www.tbsnews.net/bangla/bangladesh/news-details-343736)

মন্তব্যঃ

তথাকথিত এই নারী মৈত্রী যাত্রায় ‘আমরা সবাই বেশ্যা, বুঝে নিবো হিস্যা’‘, আমরা বেশ্যা তো?, ‘আমি আদিবাসী ট্রান্স নারীবাদী, যৌনকর্মীদের অধিকার নিশ্চিত কর, ‘Intersex Women Exist, Respect our Right’, ‘Trans Women are Women, No Debate’, ‘I am trans woman, No Debate’  ইত্যাদি লেখা সংবলিত স্লোগাণ থেকেই এই মৈত্রী যাত্রার আয়োজক পশ্চিমাপন্থী কতিপয় সেকুলার নারীবাদী সংগঠন, সমাজকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের কর্তৃক সমঅধিকারের মুখোশে নষ্ট পশ্চিমা পুঁজিবাদী ধারণা ও উদারনৈতিক মূল্যবোধের পক্ষে অবস্থানের বিষয়টি পরিস্কার।

প্রথমত, তারা নারীদের প্রতি চলমান বৈষম্য ও সহিংসতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামী আইনের সাথে যুক্ত করে ইসলামকে কটাক্ষ করছে এবং উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিতের জন্য পশ্চিমা কুফর আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের ইসলামবিদ্বেষী অবস্থান স্পষ্ট করছে। অথচ বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রসমূহে মাতৃত্বজনিত ছাটাই, গার্মেন্টস সেক্টরে নারীদের সস্তা শ্রম শোষণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের হিজাব-নিকাব পরিধানে বাঁধাসহ ও অন্যান্য লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যের কারণ ইসলামী উত্তরাধিকার আইন নয় বরং এসব বৈষম্য পশ্চিমা সেকুলার পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের ফলেই উদ্ভূত। 

দ্বিতীয়ত, নারী স্বাধীনতার ফেরিওয়ালারা নারীদের প্রতি চরম অবমাননাকর এবং করুণ অবস্থার একটি অন্যতম চিত্র পতিতাবৃত্তিকে নির্মূল করে নারীদেরকে সম্মানজনক পেশায় পুনর্বাসনে রাষ্ট্রকে জবাবদিহি করার পরিবর্তে এই পেশাকে যৌনশ্রমিকের আইনী স্বীকৃতির দাবী জানাচ্ছে। পুরুষদের আত্মতৃপ্তির জন্য হাজার হাজার নারীকে যৌন সামগ্রী হিসেবে শোষণ করার অধিকার মেনে নিয়ে তারা কিভাবে নারীর প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির আশা করে? মূলত যৌনশ্রমের আইনী স্বীকৃতি দাবীর মাধ্যমে তারা এই নোংরা পেশাকে সমাজে স্বাভাবিক করতে চায় এবং সাধারণ জনগণের ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে কোনঠাসা করতে চায়।  

তৃতীয়ত, এই মৈত্রী যাত্রায় এলজিবিটিকিউ+ জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ দাবী করা হয়েছে যে “এলজিবিটিকিউ” বলতে বোঝায় “লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার” অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী যা মুলত পশ্চিমা স্রষ্টা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ব্যক্তি-স্বাধীনতা (Personal Freedom) ও লিঙ্গ-সমতা (Gender Equality) নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। মুসলিম দেশসমূহে লিঙ্গ পরিবর্তন বা ট্রান্সজেন্ডার নীতি ইসলামের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে এই সেকুলারগোষ্ঠী ইসলামের পারিবারিক কাঠামো, উত্তরাধিকার আইন, বিবাহ আইন সহ ইসলামের শারীআহ্ কাঠামো ভেঙ্গে ফেলতে চায়, যেগুলো মূলত নারী-পুরুষের পরিচয়ের উপর নির্ভরশীল। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিরস্তন ক্রুসেডের পদানত সৈনিক হিসেবে মুসলিম সমাজকে কওমে লুতের (আঃ) নিকৃষ্ট ও ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাজে পরিণত করতে চায়। 

ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক মূল্যবোধগুলো হচ্ছে Sugar-Coated Poison যেগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা বিভিন্ন মোড়ক ও আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে পুশ করে তাদের ঈমান-আক্বীদা এবং সমাজের নৈতিক অবকাঠামোকে ধ্বংস করছে। এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী না হলে আমাদের ঈমান, আক্বীদা, পরিবার-পরিজন দুনিয়া ও আখিরাতে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থা পশ্চিমা সংস্কৃতির ক্রুসেড থেকে মুসলিমদেরকে রক্ষা করবে। খিলাফত রাষ্ট্র পরিপূর্ণভাবে শরীয়াহ আইন বাস্তবায়ন করে নারী-পুরুষের অসম দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে নারী-পুরুষের পরস্পরের সহযোগিতামূলক সমাজ গঠন করবে, নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবে। এছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র পারিবারিক কাঠামোসহ সামগ্রিকভাবে সমাজের ইসলামী চিন্তাধারা ও আবেগকে সুরক্ষিত করবে এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুপ্রবেশের সকল দরজা বন্ধ করে দিবে। “আলিফ–লাম–রা; এটি একটি কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি যাতে আপনি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন – পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে” [সূরা ইব্রাহীম : ০১]।

    -    কাজী তাহসিন রশীদ


Previous Post Next Post