খবরঃ
গাজায় এগারো সপ্তাহের অবরোধের পর সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রাণের লরি আসলেও এখনো কোন সহায়তা বিতরণ করা যায়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ..জাতিসংঘ জানিয়েছে, কেরেম শালোম ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশে ত্রাণের ট্রাক পৌঁছালেও এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, “দলটি ওই অঞ্চলে প্রবেশ করতে ইসরায়েলের অনুমতির জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তারা আমাদের গুদামে সেই সরবরাহগুলো আনতে সক্ষম হয়নি।” ..জাতিসংঘের সংস্থাগুলো অনুমান করছে গাজার দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট মোকাবেলা শুরু করতে প্রতিদিন ছয়শো ট্রাক সহায়তা প্রয়োজন। এর আগে, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বিবিসিকে বলেছিলেন, “আমরা যদি তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারি, তাহলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশু মারা যাবে।” (www.bbc.com/bengali/articles/crmkkdlyg9no)
মন্তব্যঃ
গাজায় অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের এই নজিরবিহীন বর্বরতা এবং এতে পশ্চিমা কুফর শক্তি বিশেষত আমেরিকার মদদ প্রদানে আমরা অবাক নই, কারণ তারা মুসলিমদের শত্রু। কিন্তু আমরা অবাক হই, বিশ্বাসঘাতক-নির্দয় মুসলিম বিশ্বের শাসকদের আচরণে, যারা ফিলিস্তিনে মুসলিমদের সাহায্যেতো এগিয়ে যায়নি বরং গণহত্যায় ইসরায়েলের মদদদাতা আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে মিলিয়ন ডলারের প্রমোদ বিমান উপহার এবং বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এই অঞ্চলে মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে তথাকথিত মানবিক করিডর এবং ডি.পি ওয়ার্ল্ডকে সমুদ্র বন্দর প্রদানের মাধ্যমে মার্কিনীদের স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া। মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর নতজানু নীতির কারণেই ইহুদী গোষ্ঠী মুসলিমদের উপর এসব বর্বরতায় উৎসাহ পাচ্ছে।
আমরা এরচেয়ে বেশী অবাক হই, যখন আমরা প্রত্যক্ষ করি, কিভাবে আমাদের ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিরা এসব নিকৃষ্ট শাসকদেরকে সহ্য করছে এবং তাদেরকে আনুগত্য করে যাচ্ছে, যারা গাজার সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছে না শুধুমাত্র কাফিরদের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে। আমাদের ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিরা কি ভুলে গেছেন আল্লাহ্’র আনুগত্যের উপরে অন্য কারো আনুগত্য গ্রহণযোগ্য নয়? আল ওয়ালা ওয়াল বারা (আনুগত্য এবং শত্রুতা) ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিশ্বাসগুলোর মধ্যে একটি, যা প্রতিটি মুসলিমের অবশ্যই বুঝতে হবে এবং তাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। মূলত, এর অর্থ হলো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং বিশ্বাসীদের প্রতি আনুগত্য এবং কুফর, কাফির ও তাদের সহায়তাকারী সকলের থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করা। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “যেকেউ আল্লাহ্’র জন্যই ভালবাসে এবং আল্লাহ্’র জন্যই ঘৃণা করে এবং (কাউকে কিছু) দিয়ে থাকে আল্লাহ্’র জন্যই এবং (কাউকে কিছু) দেয়া থেকে বিরত থাকেও আল্লাহ্’রই জন্য; তাহলে তার ঈমান পরিপূর্ণ হলো” [আবু দাউদ: ৪০৬১, দ্বাদশ খণ্ড, পৃ-২৯১]।
ইতিহাসের বিভিন্ন সময় মুসলিমদের কোন একটি অংশ যখন বিপর্যয়ে সম্মুখীন হয়েছে তখন অন্য মুসলিমরা আল ওয়ালা আল বারারে আলোকে ভৌগলিক দূরত্ব, জাতি, ভাষার সীমানা অতিক্রম করে নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষায় জালিমের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতো। ইতিহাসের অসংখ্য উদাহরণের মাঝে আজকের সিলেটের একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। ইংরেজী ১৩৪৪ সালে সিলেটে হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দের রাজ্যের একটি মহল্লায় মাত্র ১৩টি মুসলিম পরিবার বাস করতেন যার মাঝে একজন ছিলেন নিঃসন্তান শেখ বুরহান উদ্দিন। সন্তানের জন্য মহান আল্লাহ্ পাকের নিকট দোয়া করে তিনি নিয়ত করলেন, যদি তার একটি সন্তান হয় তাহলে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ মহান আল্লাহ্’র নামে একটি গরু কুরবানী করবেন। পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ায় আল্লাহ্’র শুকরিয়া আদায়ের জন্য তিনি গোপনে একটি গরু কুরবানী করে গোশত মুসলিমদের মধ্যে বিলি করার সময় একটি কাক এসে ছোঁ মেরে এক টুকরা গোশত রাজার প্রসাদে ফেলে। গরু কোরবানীর অপরাধে জালিম হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দ বুরহান উদ্দিনের ডান হাত কেটে দিলো এবং নিষ্পাপ সদ্য জন্ম নেয়া শিশুকে কথিত দেবতার সামনে বলি দেয়।
এ অবস্থা দেখে শিশুটির মা অর্থাৎ শেখ বুরহান উদ্দিনের স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। পরবর্তীতে, গোবিন্দ বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে ওই এলাকার সকল মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে শহীদ করে ফেললো! মুসলিমদের প্রতি এই নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদে হেজাজের শাহজালাল (র.) সিলেট অভিযান পরিচালনা করেন। সিলেটের একজন সাধারণ কৃষকের জন্য শাহজালালের এই অভিযানের পিছনে আল ওয়ালা আল বারা ছাড়া আর কিছু ছিল কি? মুসলিম সেনাবাহিনীর দায়িত্ব আল ওয়ালা আল বারা আলোকে নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষার জন্য সামরিক অভিযানে বের হওয়া এবং অভিযান পরিচালনায় বাধা বিশ্বাসঘাতক শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করা এবং তদস্থলে মুসলিমদের প্রকৃত অভিভাবক খলিফাকে ক্ষমতাসীন করা, যিনি তাদেরকে অভিযানে প্রেরণ করবেন। কারণ শারীয়াহ্’র একটি মূলনীতি হচ্ছে: ওয়াজিব/ফরজ পালনের জন্য যাহা জরুরী তা সম্পাদন করাও ওয়াজিব/ফরজ। আল্লাহ্ আমাদেরকে আল ওয়ালা আল বারা অনুযায়ী মুসলিমদের ভালবাসা এবং মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
- মো: সিরাজুল ইসলাম