খবরঃ
বেশ কিছুদিন থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের ‘পুশ ইন’ করছে ভারত। এই পুশ ইনের বিষয়ে গতকাল বুধবার (২২ মে) সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আরও ২ হাজার ৩৬০ জন ‘বাংলাদেশী’কে পুশ ইনের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে দেশটি। (https://www.ntvbd.com/world/news-1561113 )
মন্তব্যঃ
কাশ্মিরের পেহেলগামের ঘটনার পর ভারতের মুসলিম নিপীড়ন ও উচ্ছেদের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আহমেদাবাদ, রাজস্থান ইত্যাদি প্রদেশে হাজার হাজার মুসলিমকে উচ্ছেদ করা ও গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেককে বাংলাদেশী বলে পুশ ইন করা হচ্ছে। এসব যখন চলমান তখন বাংলাদেশ সরকার আরাকানে তথাকথিত মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। আরাকানের জন্য তাদের হঠাৎ মানবিক হয়ে উঠার সাথে ভারতে নির্বিচারে মুসলিম এবং বাংলাদেশী নিধনে নির্বিকার থাকাটা কোনভাবে কি মিলে? আরাকানে দুর্ভিক্ষ হতে পারে এতে প্রচুর রাখাইনি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে এই ভীতি তাদের মানবিক ও দায়িত্বশীল করে তুললো, অথচ ভারতের মুসলিমদের ক্ষেত্রে তাদের মানবিকতা কোথায়, দায়িত্ববোধ কোথায়, বেপরোয়া ভাব কোথায়?
ক্রুসেডার আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের বন্ধু ইউনুসের কর্মকান্ডে এটা স্পষ্ট যে, তাদের মন ও মগজ দুইই পরিচালিত হয় আমেরিকা, জাতিসংঘ, আইএমএফ ইত্যাদির মেসেজ ও রিপোর্টের ভিত্তিতে। এরা বাস্তবতাকে নির্মোহভাবে দেখে না বরং দেখে পশ্চিমা লেন্সে। এদের দৃষ্টিভঙ্গী ও চিন্তা পশ্চিমাদের সাথে দীর্ঘদিন লাগিয়ে রাখার ফলে এদের মনও তাদের সাথে লেগে গেছে। ফলে পশ্চিমারা যেবিষয়ে সিরিয়াস হয়, মানবিক হয় এরাও ঐ একই বিষয়ে সিরিয়াস হয় একই বিষয়ে মানবিক হয়ে উঠে। গাজায় দখলদার ইসরাইলী গণহত্যায় সারা দেশের মানুষ যখন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তখনও নির্বিকার ছিল বরং বিরক্তি প্রকাশ করেছিল। অর্থাৎ আরকানের সাথে রিলিফ চ্যানেল অথবা মানবিক করিডর কিংবা রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো কোন কিছুই আসল কথা নয়, আসল কথা হলো তাদের মন ও মগজের প্রভুরা তাদেরকে আরাকন আর্মির জন্য কাজ করতে বলেছে। এজন্য তারা ঐকাজে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
খলিফা ছাড়া আর কোন শাসকই মুসলিমদের জন্য দায় ও দরদ দেখাবেন না। একদিকে ইসলাম প্রদত্ত দায়িত্ব হিসেবে এবং অন্যদিকে জনগণ কর্তৃক খলিফাকে শক্তভাবে জবাবদিহিতা করার সুযোগ খলিফাকে প্রতিটি নাগরিকের জান, মাল ও মর্যাদার সুরক্ষা দেয়ার প্রতি আরো মনযোগী করে তুলে। যুগযুগ ধরে খলিফারা এটাই করেছেন। ১৯২৪ সালে খিলাফত ধ্বংস হওয়ার পর থেকেই মুসলিমরা এমন অভিভাবহীন হয়ে পড়লো। একেকটা ফিলিস্তিন, কাস্মীর, আরাকনের জন্ম হলো। মুয়াবিয়া (রা.)-এর খিলাফতের সময় কতক মুসলিমকে বন্দি করে কনস্টান্টিনোপোলের রোমান সম্রাটের সামনে হাজির করা হলো। সেখানে একজন মুসলিম বন্দি সম্রাটের সামনে কথা বলে উঠলে ক্ষিপ্ত হয়ে একজন পাদ্রী তাকে সজোরে চপেটাঘাত করে। তখন ঐ মুসলিম চিৎকার করে বলে উঠেন, “হায় আফসোস, কোথায় তুমি হে মুয়াবিয়া! তুমি আমাদের কথা ভুলে গেছ, আমাদের সীমান্ত অরক্ষিত রেখেছ এবং শত্রুদেরকে আমাদের ইজ্জত-আব্রুতে আঘাত করার সুযোগ দিয়েছো!” একথা মুয়াবিয়ার কানে পৌছলে তিনি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিলেন। একাকী নিভৃতে চিন্তা করতে লাগলেন। একপর্যায়ে তিনি বন্দি বিনিময় করে তাদেরকে ফেরত নিয়ে এসে সেই বন্দিকে নিজ দরবারে এনে বললেন, “আমি তোমার কথা ভুলিনি”। এদিকে তিনি কাউকে না জানিয়ে দামেশক উপকুলের টয় নগরের একজন অত্যন্ত দক্ষ নৌসমর নায়ককে নির্দেশ দিলেন একটি বিশেষ উদ্যোগ নিতে। তিনি তাকে অত্যন্ত দ্রুতবেগের একটি জাহাজ ও দক্ষ নাবিক ও সৈনিকদের দিলেন। এবং সমর নায়ককে দামী ও বিলাস পণ্যের সওদাগর সাজিয়ে কনস্টান্টিনোপোলের রোমান সম্রাট ও পাদ্রী জন্য অনেক মূল্যবান উপঢৌকন নিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে বিশ্বাস অর্জন করার জন্য বললেন। অনেক দিন ধরে কয়েকবার মালামাল আনা নেয়া করে, কেনাবেচা করে ঐ সমর নায়ক রোমানদের বিশ্বাস অর্জন করেন। একবার অত্যন্ত চতুরতার সাথে সওদাগররুপী সমর নায়ক মুসলিম ভাইকে চড় দেয়া সেই পাদ্রীকে কৌশলে বন্দি করে মুয়াবিয়ার দরবারে এনে হাজির করেন।” [ডঃ আলি মুয়াম্মদ সাল্লাবির উমাইয়া খিলাফতের ইতিহাস প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ৩২৩-৩২৯]।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন