খবরঃ
ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া এবং গাজায় একই দিনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার রাতে যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে এ হামলা চালানো হয়। (https://www.jugantor.com/international/950362 )
মন্তব্যঃ
দখলদার ইসরায়েল অনেক শক্তিশালী এবং মুসলিম দেশগুলো এতই দুর্বল যে এসব হামলাকে না তারা থামাতে পারে, না এর সমুচিত জবাব দিতে পারে, এইধরণের ন্যারিটিভ যার মূলে রয়েছে উপনিবেশবাদ বাস্তবায়নের অন্যতম পদ্ধতি – “দখলদাররা দখলকৃত মানুষদের থেকে উন্নত জাতের, উন্নত যোগ্যতা সম্পন্ন, উন্নত বুদ্ধি এবং মেধাসম্পন্ন, উন্নত নৈতিক গুনাবলীর, অধিক শারিরিক শক্তিসম্পন্ন ইত্যাদি”, এই ধারণা দখলকৃত মানুষের মনস্তত্বে ঢুকিয়ে দেয়া। আমরা জানি, বৃটিশ সহায়তায় অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র তৈরির পর একাধিক আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক আরব শাসকদের ষড়যন্ত্রে আরবদের পরাজিত দেখানো হয়, যাতে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, ইসরায়েল অপরাজেয়। উপনিবেশবাদীরা দখলকৃত দেশের মিডিয়া, শিক্ষাব্যবস্থা, ধর্মীয় মিশনারী, বুদ্ধিজীবি ইত্যাদিকে ব্যবহার করে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে যে আমরা নিজেরা খারাপ, অযোগ্য, কম শক্তি ও কম বুদ্ধিসম্পন্ন ইত্যাদি। বৃটিশরা তাদের উপনিবেশবাদের ন্যয্যতা দিত এটা বলে যে, তারা ‘এংলো-সেক্সন’ জাত যা অন্যজাতের থেকে উত্তম। বিশিষ্ট বৃটিশ উপনিবেশবাদী সেসিল রোডস বলেছিল, “I contend that we are the finest race in the world and that the more of the world we inhabit the better it is for the human race”। বৃটিশরা যখন এই উপনিবেশবাদের স্বার্থে জায়োনিষ্টদের দিয়ে ফিলিস্তিনের ভুমি দখল করে ইহুদীদের জন্য একটি রাষ্ট্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলো তখন তারা ইহুদীদেরকে একইভাবে ‘Super Human’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিলো। ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন বলেছিল, “The Arabs are primitive and need to be uplifted by the superior Jewish civilization”। ইহুদী বুদ্ধিজীবি রিচার্ড হার্ণষ্টেইন ও চার্লস মারি বলেছিল, “Ashkenazi Jew have the highest mean IQ of any ethnic group for which reliable data exist”. আলবার্ট আইনষ্টাইন যিনি নিজে একজন ইহুদী ছিলেন, একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, “The Jewish people as a whole have a special gift for intellectual and cultural life”।
ইহুদীরা এবং ইসরায়েল অনেক শক্তিশালী এবং বিশেষ মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন এটি প্রচার-প্রসারের জন্য বিভিন্ন ইহুদী লবি ও ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী অনেক প্রোগ্রাম পরিচালনা করে অনেক টাকা খরচ করে থাকে। Hasbara এমনই একটি প্লাটফর্ম, এছাড়া Taglit-Birthright Israel, Masa Israel Journey ইত্যাদি প্রোগ্রামে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য তারা অনেক টাকা ব্যয় করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের হয়ে কাজ করার জন্য ইসরায়েল লোক ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে থাকে। যেমন Mashav (Israel’s Agency for International Development Cooperation) নামে একটি প্রতিষ্ঠান সাব-সাহারান আফ্রিকা, সাউথইস্ট এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ইত্যাদি দেশে কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা, ফার্মা ইত্যাদি খাতের কারিগরি সহায়তার নামে ইসরাইলের ভালো ইমেজ তৈরিতে কাজ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও কিছু বুদ্ধিজীবি টকশোতে ১৯৭১-এ ইসরায়েল সবার আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীতা করতে চেয়েছিল ইত্যাদি বলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ককে প্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টা করছে। এরা এমনকি এটাও বলছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ভারত-মিয়ানমার-বাংলাদেশ জুড়ে একটি ইহুদী উপস্থিতি আছে এবং এখানে কোন একসময় একটি নতুন ইসরায়েল হলেও হতে পারে!
এসবের মাধ্যমে মুসলিমদের মনোজগতে উপনিবেশবাদের, দখদারিত্বের, পবিত্র ভুমি দখল করার ও বর্বর গণহত্যা চালানো ইত্যাদি অপরাধকে মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করা হয়। যেসব মুসলিমরা তথাকথিত বাস্তববাদী বা Pragmatic তারা এসব প্রপাগান্ডায় আক্রান্ত হয়। মুলতঃ ইসরায়েল অপরাজেয় শক্তি এটা শুধুই একটি মিথ্যা প্রচারণা, যা ৭ অক্টোবর, ২০২৩ অকুতোভয় কতিপয় মুসলিম মুজাহিদ অতি সামান্য অস্ত্র নিয়ে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েল তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধারে তৎপর। মুসলিম বিশ্বের শাসকদের নীরবতা ও পশ্চিমা সমর্থন ছাড়া অভিশপ্ত ইহুদী গোষ্ঠী একমুহুর্তও টিকতে সমর্থ নয়। তারপরও, কেউ যদি তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে বুঝাতে চায় যে, তারা শক্তিশালী ও সুপেরিয়র, তবুও মুসলিম হিসেবে আমরা তা বিশ্বাস করি না, কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের উপর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে লাঞ্ছনা, তবে আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে কোন প্রতিশ্রুতি এবং মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি থাকলে আলাদা কথা। আর তারা আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে গজব নিয়ে ফিরে এসেছে। আর তাদের উপর দারিদ্র্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে (আলি ইমরান: ১১২)। অর্থাৎ তারা মূলত লাঞ্চিত, দুর্বল ও অনিরাপদ। এবং পশ্চিমা গোষ্ঠী ও মুসলিম দেশসমূহে পশ্চিমা দালাল শাসকদের কারণেই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের এই আস্ফালন। যে মুহুর্তে মুসলিমদের অভিভাবব খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে সেই মূহর্ত থেকে তাদেরকে সেই সহযোগিতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে, ফলে আবারও আমরা ইহুদীদের লাঞ্চিত রুপ প্রকাশ্যে দেখতে পাবো, ইনশা‘আল্লাহ্।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন