আরাকানে নতুন দেশ নিয়ে ভারত ও চীন মিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে?

 


খবরঃ

নিরাপত্তা বিশ্লষকরা বলছেন, আরাকানে নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি বা নতুন রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবর্তন হলে ভারতের জন্য বড় ধরণের ঝুকি তৈরী করতে পারে। এতে ভারতের কালাদান প্রকল্প মাঠে মারা যেতে পারে। এবং পূর্বের রাজ্যগুলো বাংলাদেশকে এড়িয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের সুযোগ হারাতে পারে। কুকি চিনে যুদ্ধের প্রভাবে ভারতের রাজ্যগুলোতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি বিরোধীতা করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। (https://www.youtube.com/watch?v=CtoNnuLDKeg)

মন্তব্যঃ

আমেরিকার চীন মোকাবেলার ব্লুপ্রিন্ট ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ বাস্তবায়নের জন্য আমেরিকা তার সকল রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতাকে একত্রিত করতে চাইছে। বিষয়টিকে আমেরিকা এতটাই গুরুত্বের সাথে দেখছে যে, ইরানের সাথে আগ বাড়িয়ে আনবিক চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে যেন মধ্যপ্রাচ্য তুলনামূলক স্থিতিশীল হয় এবং আমেরিকা চীনের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে সাময়িক স্বস্তি দেয়ার মাধ্যমেও আমেরিকা রাশিয়াকে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্র্রচেষ্টা করছে, যেন একদিকে চীন একা হয়ে পরে এবং অপরদিকে ‍ইউক্রেনের অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য করা নিয়ে আমেরিকাকে আর মাথা ঘামাতে না হয়। এই বাস্তবতায় দেশের অভ্যন্তরে যখন কতিপয় ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদেরকে বলতে শুনি যে, বাংলাদেশকে ভারতের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে আমেরিকাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাতে হবে, তখন এই ন্যারেটিভকে অবশ্যই আমেরিকার ‍‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’-এর আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে।

আমেরিকার ‍‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে’ (IPS) ভারত হল কৌশলগত অংশীদার। ভারতের মিসাইল সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মহাকাশযান তৈরীতে আমেরিকার গোপন কারিগরী সহায়তা রয়েছে। চীনের মুখোমুখী দাড় করানোর লক্ষ্যে ভারতকে আঞ্চলিক শক্তির আসনে বসানোর জন্য আমেরিকা প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করে আসছে এবং এই লক্ষ্যে ভারতের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করা ও ভারতের প্রভাব ভারত মহাসাগরের আফ্রিকা ও আরব উপকূল পর্যন্ত বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছে। ভারতের গুরুত্বকে আলাদাভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আমেরিকা তার Grand Strategy-তে ভারত মহাসাগরের নাম অন্তর্ভূক্ত করে নাম দিয়েছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি’ এবং ২০১৮ সালে আমেরিকান নেভির দীর্ঘদিনের ‘প্যাসিফিক কমান্ডের’ নতুন নামকরণ করেছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড’ যদিও এর কাজের পরিধির কোন পরিবর্তন হয়নি। এমনকি ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ভারতকে সেখানে অন্তর্ভূক্তির মূলাও ঝুলিয়ে রেখেছে আমেরিকা। ভারত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সামরিক জোট ‘কোয়াডের’ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যার নাম দিয়েছিল ‘এশিয়ার ন্যাটো’। যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাঙ্ক সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি (CNAS) এর ভাষ্য মতে, এশিয়ায় একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা খুবই ‘বিশ্বাসযোগ্য’, যা ইঙ্গিত করে IPS নিয়ে আমেরিকা কতটা সিরিয়াস। সুতরাং, ভারতকে আমেরিকার মুখোমুখী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিন্তা করাটা বাস্তবতার পরিপন্থী, যদিও ভারতের বৃটিশ-অনুগত ‘দুর্বল’ রাজনীতিবিদ ও আমলারা কিছু প্র্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

বাংলাদেশের মুসলিমদের চরম ভারত বিরোধীতার উপর ভর করে আমেরিকার দালালীকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকা অত্যন্ত চতুরতার সাথে এই ন্যারেটিভ বাজারে ছেড়েছে যে, ‘ভারতকে কোনঠাসা করার জন্য আমেরিকার সাহায্য নিতে হবে’। মূলত: আমেরিকা ও ভারত হল ভাই-ভাই ও এই অঞ্চলের সকল দুষ্কর্মে পরষ্পরের সহযোগী। এই বাস্তবতা অনুধাবন করেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও সকল সেকুলার দল ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য ভারত-বিরোধীতা পরিত্যাগ করেছে; মাঝেমধ্যে তারা কিছু ভারতবিরোধী ফাকা বুলি দিয়ে তাদের জনপ্রিয়তাকে বাড়ানোর চেষ্টা করে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে, আমেরিকার ‘চীন ঠেকাও’ পরিকল্পনায় ভারত খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং ভারতের কাছ থেকে আমেরিকা যা আশা করে ভৌগোলিক কারণে তা কোয়াডের বাকি দুই সদস্য জাপান বা অষ্ট্রেলিয়ার দ্বারা করা সম্ভব নয়। তাই, আমেরিকাকে খুশি করার জন্য যারা ভারত বিরোধীতা পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের জনগণের সাথে প্রতারণা করছে, জনগণের উচিত তাদেরকে পরিত্যাগ করা।

    -    যুবায়ের আহমেদ


Previous Post Next Post