বাংলাদেশে লাইসেন্স পেলো স্টারলিংক



খবরঃ

মার্কিন ইন্টারনেট সেবাদাতা স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের উপর্যুপরি ইন্টারনেট বন্ধের প্রতিবাদে স্টারলিংককে বাংলাদেশের নিয়ে আসা একটা গণদাবিতে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের দুর্গম পার্বত্য এলাকায়, বিশেষভাবে উপকূলীয় দুর্যোগপ্রবণ এলাকার যেসব অঞ্চলে এখনো ফাইবার কেবল পৌঁছেনি, সেখানে দ্রুততম সময়ে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা উদ্যোগী হয়ে ইলন মাস্ককে ফোন করে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংককে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-669446)

মন্তব্যঃ

দুর্গম পার্বত্য এলাকায় মানসম্পন্ন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেটের চাহিদাটি কী? স্টারলিংক সংযোগ কিটের (রিসিভার, স্ট্যান্ড ও রাউটার) মূল্য সর্বনিম্ন ৪৩,০০০ থেকে ৭৪,০০০ টাকা ‍ও মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা)। এত দাম দিয়ে যে ইন্টারনেট সংযোগ নিতে পারে সে কেন শহরে বসবাস না করে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাস করে? নি:সন্দেহে দুর্গম অঞ্চলের জনগণ এই ইন্টারনেটের মূল ব্যবহারকারী নয়। মূল ব্যবহারকারী হল পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আরাকান ঘিরে ভূরাজনৈতিক সংঘাত সৃষ্টিকারী আমেরিকা নিজে। আমেরিকার মদদপুষ্ট আরাকান আর্মি অনেক অঞ্চল দখলে নিয়েছে, কিন্তু তারা এখনো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর রাষ্ট্রীয় সরঞ্জাম ও যুদ্ধপ্রস্তুতির বিরুদ্ধে ডিসাইসিভ বিজয় অর্জন করার সামর্থ্য অর্জন করেনি; যা যেকোন অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীরই বাস্তবতা। মধ্যপ্রাচ্যের নতুন নতুন মুসলিম অঞ্চল দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্রের সীমানাকে বৃদ্ধির আগ্রাসী নীতি নেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্মা-এক্ট’কে তার ‘প্রতিরক্ষা বাজেটের’ মধ্যে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডারের আরাকান অঞ্চলে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের ছক কষছে। বিদ্যুৎগতিতে স্টারলিংকের বাংলাদেশে লাইসেন্স প্রাপ্তিকে বার্মা-এক্ট এর আলোকে দেখতে হবে। 

আমেরিকা ইরাক-আফগানিস্তান ও সিরিয়াতে সামরিক ড্রোন ব্যবহার করে কৌশলগত আধিপত্য বিস্তার করেছিল। আরাকান আর্মির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমেরিকা যদি ড্রোন মোতায়েন করে তাহলে সেই ড্রোন অপারেট (ব্যবহার ও কন্ট্রোল) করার জন্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট একটি অপরিহার্য উপাদান। মার্কিন গুপ্তচর বাহিনীর এজেন্টদের সাথে আরাকান আর্মি সহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নিরাপদ ও সার্বক্ষণিক যোগাযোাগের জন্যও স্টারলিংক গুরুত্বপূর্ণ। স্টারলিংকের ৬,৯৯৪টি স্যাটেলাইট রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গোয়েন্দাগিরি, মিসাইল/ড্রোন ইত্যাদি বিভিন্ন সমরাস্ত্রের গাইডিং সিস্টেম পরিচালনা, রাডার সিস্টেম দিয়ে ইলেক্ট্রনিক কাউন্টারমেজার ও ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার পরিচালনা এবং বিভিন্ন সামরিক ফরমেশনের মধ্যে আন্ত:যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি ভারত মহাসাগরের ডিয়েগো গার্সিয়াতে আমেরিকা তার কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো জড়ো করেছে, যেখান থেকে একসময় ইরাক-আফগানিস্তানে সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছিল। এই বিমানগুলো আমেরিকা কোথায় ও কখন ব্যবহার করবে তা সময়ই বলে দিবে; কিন্তু এর মাধ্যমে আমেরিকা ইতিমধ্যে চীনকে বার্তা দিয়েছে যেন চীন মিয়ানমার নিয়ে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া না দেখায়।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের মার্কিন নতজানু অন্তর্বর্তী সরকার মিয়ানমারের সাথে মানবিক করিডরের নামে বর্ডার খুলে দিয়ে ও স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন দিয়ে রক্তপিপাসু আমেরিকার এই ভয়ানক পরিকল্পনায় দেশকে জড়িয়ে ফেলেছে। একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের সব আলামত এখানে বিদ্যমান যা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের জীবনের জন্য বিরাট হুমকি। এখন দ্রুত ACSA ও GSOMIA সামরিক চুক্তি করে আমেরিকা বাংলাদেশের ভূমি, এবং সামরিক স্থাপনা ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করার প্রহর গুনছে। মার্কিন-ভারতের নতজানু রাজনৈতিকগোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবিদের কারণে দেশের স্বার্বভৌমত্ব ও জনগণের জীবন আজ হুমকির মুখে। এই নিরাপত্তা হুমকি থেকে মুক্তির জন্য অনিতিবিলম্বে ইসলামী ফিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। 

    -    যুবায়ের আহমেদ


Previous Post Next Post