অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান: মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্তের এখতিয়ার এ সরকারের নেই


খবরঃ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জনগণের কোনো রকম ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবে না এবং কাউকেই এমন কোনো কাজ করতে দেবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। গত ৯ মাস ধরে সেনাপ্রধান হিসেবে অভিভাবকহীন হয়ে রয়েছেন বলে তিনি কয়েকবার উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, তিনি চাতক পাখির মতো একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। একটি নির্বাচিত সরকার সেনাবাহিনীর জন্য অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং যার ফলে সার্বিকভাবে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। যথা শিগগিরই সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। (https://dailynayadiganta.com/printed-edition/8qwpM4jy7uHm)

মন্তব্যঃ

সেনাপ্রধান যেই অভিভাবকের প্রত্যাশা করছেন, তা কি এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থেকে আদৌ পাওয়া সম্ভব? বাংলাদেশের জুলাই ২৪-এর পূর্বে বিগত সকল নির্বাচিত সরকারগুলোর দিকে আলোকপাত করলেই তার উত্তর পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচিত সরকার ছিল, যা পরবর্তীতে জনগণের অভিভাবক নয়, বরং স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছিল এবং মার্কিন-ভারত-বৃটেনের দালাল হিসেবে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছিল। ১৯৯১, ২০০১ সালে নির্বাচিত বিএনপি সরকারও কি জনগণের অভিভাবক হতে পেরেছিল? ১৯৮৩ তে এরশাদও একটি নির্বাচিত সরকার ছিল তিনি কি বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের বলয় ও দাসত্বের বাইরে থেকে দেশের অভিভাবক হতে পেরেছিলেন? জুলাই’২৪ পরবর্তী কর্মকান্ডেও এসব রাজনৈতিক দলের অভিভাবক হয়ে উঠার কোন প্রতিফলন নাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দ্বারা গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ইসলামী আক্বিদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের প্রকল্পকে “ধর্মীয় উগ্রতা বা চরম পন্থা”আখ্যা দিয়ে প্রকৃতপক্ষে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে” তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, কোন কোন ইসলামী রাজনৈতিক দল পশ্চিমা দূতাবাসসমূহে দৌড়ঝাপ করছে এবং পশ্চিমাদের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নিজেদেরকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে। জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের নামে ‘রেইনবো নেশন’-এর ধারণাকে গ্রহণ করেছে, অথচ ‘রেইনবো’ হচ্ছে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি LGBTQ-এর প্রতীক, যার মধ্যে সমকামিতার মত নিকৃষ্ট সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত। তারা তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গীবাদ-উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে পশ্চিমাদের “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” নীতিকে সমর্থন করেছে। তাছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার সহ নতুন-পুরাতন রাজনৈতিক দলসমূহের পশ্চিমামুখী নীতি ও স্বার্থের রাজনীতি, প্রত্যাশা পূরণের পরিবর্তে জনগণকে হতাশ করেছে।

সুতরাং, সৃষ্টিকর্তা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় নির্বাচিত কিংবা তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যেই সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তাদের কারোই না আছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌’র নিকট জবাবদিহিতা কিংবা না আছে জনগণের নিকট। তাদের জবাবদিহিতা কেবল উপনিবেশবাদীদের নিকট। তারা উপনিবেশবাদীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাকে মূল প্রাধান্য দেয়, জনগণের কাছে নয়। উপনিবেশবাদী বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান দলগুলোর জবাবদিহিতামূলক বিভিন্ন বৈঠক থেকে স্পষ্ট যে, জনগণের অভিভাবক তো দূরের কথা তারা উপনিবেশ শক্তি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ দাস ও দালাল; আর নির্বাচন একটি নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।

সুতরাং, মুসলিম সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে, সেই অভিভাবক তালাশ করা যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ, যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ করো এবং নিজেদের রক্ষা করো” [হাদিস: মুসনাদ আহমদ]। মুসলিমদের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন খলিফা। তাই মুসলিম সেনাবাহিনীর উচিত এমন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করা যারা নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় কর্মরত। হিযবুত তাহ্‌রীর-ই হচ্ছে সেই দল, যারা যমীনে নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই, আর বিলম্বিত না করে মানবজাতির জন্য ওমর, আবু বকর ও সুলতান আব্দুল হামিদের মত অভিভাবক নিযুক্ত করুন। মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে উপনিবেশবাদী আধিপত্যমুক্ত করে বিশ্বের বুকে একজন খলিফার (অভিভাবক) অধীনে একটি নেতৃত্বশীল জাতি হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করুন, এবং সর্বোপরী, হাশরের ময়দানে আল্লাহ্‌’র সামনে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।

    -    সাবা আবদুল্লাহ্‌ 

Previous Post Next Post