খবরঃ
রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো চার যুবক বিষপান করেছেন।হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে চলমান বৈঠকের সময় ওই চারজন দাবি নিয়ে তার কক্ষে যান। সিইও তাদের অপেক্ষা করতে বললে ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানেই বিষপান করেন তারা। বিষপানকারীরা হলেন- শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন (আবু তাহের)। পরে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জুলাই গণ-আন্দোলনে চোখ হারানো আহতরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ ৯ মাসেও তাদের উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানা বাহানা করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললেও তা বাস্তবে ঘটেনি। (https://www.jugantor.com/national/958344)
মন্তব্যঃ
এই আহতরা সুচিকিৎসার দাবী আদায়ে বারবার আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ঋণ করে নিজেদের চিকিৎসার ভার এবং পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে গিয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে সর্বশান্ত হয়েছে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনকে কেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে না?
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের দেখভালে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও নিজেদের, কতিপয় পুঁজিপতিগোষ্ঠীর ও উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়নি। তাই আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হলেও সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নিজের ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬৬৬ কোটির টাকার কর মওকুফের সুবিধা গ্রহণ করা সহ নির্বাহী ক্ষমতাবলে তার এবং তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে থাকা বিচারাধীন মামলাগুলো প্রত্যাহার করেছে, অথচ জনগণকে শোষণ করার হাসিনার হাতিয়ার কালো আইন (সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন) বহাল রেখেছে। পুঁজিপতি কোম্পানী আদানীর সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করে নাই এবং কুইক রেন্টাল কোম্পানীসমূহকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ অব্যাহত রেখেছে। পশ্চিমাদের খুশি করতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকে হস্তান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ, রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার আরেক দুর্বৃত্তগোষ্ঠী মার্কিন মদদপুস্ট আরাকান আর্মিকে মানবিক করিডোর বা চ্যানেল প্রদানের নামে দেশের উপর উপনিবেশবাদী মার্কিনীদের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
তাই, ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, যতদিন ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা বহাল থাকবে, ততদিন জনগণ উপেক্ষিত হতে থাকবে। অন্যদিকে, ইসলামী ব্যবস্থা তথা খিলাফতে আল্লাহ্’র হুকুম পালন এবং পরকালে জবাবদিহিতার মতো সর্বোচ্চ মূল্যবোধ লালিত হওয়ায় খলীফা ও শাসকদের রাজনীতি দেশের অভ্যন্তরে জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা এবং বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেয়াকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। ফলে শাসকগণ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কাধে তুলে নিবেন এবং জনগণের প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে সর্বদা আল্লাহ্’র ভয়ে ভীত থাকবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “যেকেউ মুসলিমদের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় কিন্তু সে বিষয়ে অমনোযোগী থাকে এবং তাদের প্রয়োজন ও দারিদ্রতার বিষয়ে খামখেয়ালী করে, আল্লাহ্ তার ব্যাপারে কিয়ামতের মাঠে উদাসীন থাকবেন এবং তার প্রয়োজন ও দারিদ্রতার বিষয়ে অমনোযোগী থাকবেন” [আবু দাউদ]। এছাড়া খিলাফত রাষ্ট্রে যেহেতু শাসকদের লোভী পুঁজিপতিগোষ্ঠীর ডোনেশনের উপর নির্ভর করতে হয়না এবং তাদের ক্ষমতার উৎস কোন উপনিবেশবাদী রাষ্ট্র নয়, তাই এই রাষ্ট্রের রাজনীতি পুঁজিপতি ও উপনিবেশবাদীগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত। এভাবে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী নিপীড়ক ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিপরীতে খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে রাষ্ট্র একটি জনস্বার্থ সুরক্ষার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠে। তাই ছাত্র-জনতাকে কালক্ষেপণ না করে নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে মুসলিমদের মুক্তির একমাত্র এই প্রকল্পকে আরও বেগবান করতে হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের সেই আহ্বানে সাড়া দাও, যখন তোমাদেরকে এমনকিছুর দিকে আহ্বান করা হয় যা তোমাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে” [সুরা আল-আনফালঃ ২৪]
- কাজী তাহসিন রশীদ
