খবরঃ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের যানজট নিরসনে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি রুটে মনোরেল নির্মাণ করতে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) করেছে সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টরস। আজ রোববার নগরের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার মিলনায়তনে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/dct0s6j0j5)
মন্তব্যঃ
চট্রগ্রাম নগরীর চলমান জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট জনদুর্ভোগের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নিয়ে মনোরেলের মত অতি-বিলাসী এবং ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন জনগণের মৌলিক সমস্যা আড়ালের নামান্তর। আমরা দেখেছি, পতিত হাসিনাও জনগণের মৌলিক জীবনযাত্রার সঙ্কট নিরসনে তার ব্যর্থতা আড়াল করতে এবং শুধুমাত্র গুটিকয়েক দেশীয় পুঁজিপতি ও উপনিবেশবাদীদের স্বার্থে অসংখ্য ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। হাসিনা সরকার ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের নামে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও ঢাকার সার্বিক যানজটের কোন পরিবর্তন হয়নি, বরং সে জনগণকে মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর ঋণের দুষ্টুচক্রে নিপতিত করেছে। আমরা প্রত্যক্ষ করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও হাসিনার মত জনগণের দেখাশুনার বিষয়াদি উপেক্ষা করে উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-আইএমএফ এর নীতির অনুসরণ করছে। সরকার আইএমএফ এর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে এক শর বেশি পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে (প্রথম আলোঃ ১০ জানুয়ারি, ২০২৫)। চট্রগ্রামে প্রস্তাবিত ব্যয়বহুল মনোরেল প্রকল্প অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপনিবেশবাদী নীতিরই অনুসরণ। কেননা উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে আমাদেরকে এমন সব অনুৎপাদনশীল প্রকল্প নিতে বাধ্য করে, যার সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি কিংবা জনগণের জীবনমান উন্নয়নের কোন সম্পর্ক নেই, বরং ঋণের শর্ত হিসেবে আমাদের দেশের উপর উপনিবেশবাদী দেশসমূহের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। যেমন, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাসের মজুদ থাকা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেই এলএনজি সরবরাহের জন্য মার্কিন কোম্পানীর সঙ্গে একটি বড় চুক্তি করেছে (যুগান্তরঃ ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫)। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এক শাসকশ্রেণীর পরিবর্তে অন্য শাসকশ্রেণীকে কখনো নির্বাচিত সরকার কিংবা কখনো বিপ্লবী সরকারের নামে শুধুমাত্র পুঁজিপতি শ্রেণী এবং উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এ ব্যবস্থায় জনগণের স্বার্থসমূহ সবসময় উপেক্ষিতই রয়ে যায়।
অপরদিকে, মেগা প্রকল্পের বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে এসব প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হতে হবে জনগণের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের ভিত্তিতে; কেননা ইসলাম জনগণের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণকে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই প্রত্যেক আদম সন্তানের থাকার জন্য একটি ঘর, পরিধারেন জন্য এক টুকরো কাপড়, খাওয়ার জন্য এক টুকরো রুটি, এর চেয়ে বেশি জরুরী আর কিছুই থাকতে পারে না” [সুনানে আত তিরমিযি ২৩৪১]। ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদাসমূহ যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিতে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে এবং একই সাথে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক, এবং তিনি তার নাগরিকদের জন্য দায়িত্বশীল” [বুখারী]।
- মোঃ জাফর আহমেদ
