জুন মাসে এনবিআরকে দিনে গড়ে ৪৭০০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে




খবরঃ

চলতি অর্থবছরের শেষ মাস, অর্থাৎ জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। এনবিআর এর আগে কখনো এক মাসে এত শুল্ক-কর আদায় করতে পারেনি।...এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। (https://www.prothomalo.com/business/economics/epggj73mpc)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের প্রতি অর্থ-বছরের বাজেট ঘোষণায় আয়ের মূল উৎস হিসেবে এনবিআর কর্তৃক শুল্ক-কর আদায়কে দেখানো হয়। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট প্রস্তাবনায় লক্ষ্য করা গেছে বাংলাদেশ সরকারের আয়ের ৮৮ শতাংশ আসবে এনবিআর কর্তৃক শুল্ক-কর আদায়ের মাধ্যমে। এই বছর প্রস্তাবিত বাজেট ৭ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকার ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার কোটি টাকাই এনবিআরকে শুল্ক-কর আদায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। অর্থ্যাৎ, মাথাপিছু কর রাজস্ব চাপ প্রায় ২৯,৩৮২ টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি রাষ্ট্রের অবস্থা কেন এতটাই দেউলিয়া যে তাকে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের সিংহভাগ জনগণের পকেট থেকে আদায় করতে হবে? 

মূলত, বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিকে যেকোন সম্পদের “মালিকানার স্বাধীনতা” দেওয়া হয়েছে। অর্থ্যাৎ, কোন ব্যক্তি চাইলেই এখানে যেকোন সম্পদের মালিক হতে পারবে। এর বদৌলতে কতিপয় পুঁজিপতি একটি রাষ্ট্রের গণ-মালিকানাধীন সম্পদ যেমন বিভিন্ন ধরনের খনিজ, জ্বালানী, ভূমি ও পানি সম্পদ এবং বিভিন্ন ধরণের  রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো অতি সহজে কুক্ষিগত করে নেয়। ফলে, রাষ্ট্রের মোট সম্পদের সিংহ ভাগই এসব পুঁজিপতিদের হাতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিআইডিএস-এর তথ্য মতে মাত্র ৫% মানুষের কাছে দেশের মোট সম্পদের ৪০% এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আর দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী মাত্র ১০-১৫% সম্পদের নাগাল পাচ্ছে। একই চিত্র বিশ্বব্যাপী। মাত্র ১% লোক বিশ্বের ৫০% সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছে। আর ১০% লোকের কাছে বিশ্বের ৮৭% সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে গেছে। তাহলে, একটি দেশের সরকার পরিচালিত হওয়ার জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে যখন সিংহভাগ সম্পদই ৫-১০% মানুষের নিয়ন্ত্রণে? তখন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পদের এই অসম বন্টনকে নিয়ন্ত্রণ না করে, বরং উল্টো রাষ্ট্রের ব্যয়ভার জনগণের উপর চাপায় এবং তা আদায়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। পরবর্তীতে, এই পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী তাদের এহেন জুলুমকে আড়াল করতে জনগণকে “কর না দিলে রাষ্ট্র কিভাবে চলবে?”- ধাঁচের ন্যারেটিভ তৈরি করে যেন জনমনে অতিরিক্ত করের বোঝার ধরুন ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এবং বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়ে যেন পৃথিবীতে রাষ্ট্রগুলো চিরকাল এভাবে চলে আসছে এবং এর বাহিরে আর কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল না।

অথচ, এমন জুলুমের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিপরীতে রয়েছে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা যার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়, সম্পদ যাতে গুঁটি কয়েক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়ে না পড়ে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যায় মেটাতে যেন জনগণকে করের বোঝায় পিষ্ট না হতে হয় তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইসলামী ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল সম্পদকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। (১)ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি ,(২) গণমালিকানাধীন সম্পত্তি এবং (৩) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পত্তি। কোন ব্যক্তি মানুষ চাইলে এখানে গণমালিকানাধীন কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির মালিক হতে পারেনা। কেননা, এই সম্পদগুলো কিংবা এর থেকে অর্জিত অর্থ শুধুমাত্র জনগণের দেখভাল এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “তিনটি বিষয়ে সকল মুসলিমের সমান অধিকার রয়েছে “পানি, খনিজ এবং চারণভূমি” (আবু-দাউদ)। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের শুধুমাত্র গ্যাসক্ষেত্র থেকে বার্ষিক উত্তোলিত সম্পদের পরিমাণ বাজার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ১.২ ট্রিলিয়ন থেকে ৭.৪১ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই পরিমাণ সম্পদ যখন শুধুমাত্র একটি গণমালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে আহোরিত হয় তাহলে অন্যান্য গুলো থেকে একত্রিতভাবে কত পরিমাণ সম্পদ হবে তা ধারনাতীত। অথচ, বর্তমানে তা শেভরন, টাল্লোওয়েল এর মত অনেকগুলো বিদেশী কোম্পানীর কাছে কুক্ষিগত। কিন্তু, ইসলাম যেহেতু এই সম্পদগুলোকে প্রাইভেট কোম্পানী কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানীর হাতে কুক্ষিগত হওয়া থেকে সুরক্ষিত করে তাই ইসলামি রাষ্ট্রে সরকারকে জনগণের করের উপর নির্ভরশীল হতে হয়না। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম


Previous Post Next Post