আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে পোস্ট ‘আমি নাস্তিক নই, গ্রামের সবাই আমাকে নাস্তিক বলছে


খবরঃ

…শাকিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি দক্ষিণ জামশা গ্রামের নাসিরুদ্দিন আহমেদের ছেলে। স্বজনেরা জানিয়েছেন, ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে এক ব্যক্তির পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন শাকিল। পরে সেটি ঘিরে স্থানীয় কিছু লোক তাকে হুমকি দেন। বাড়িতে গিয়েও বিভিন্নজন তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। এ পরিস্থিতির কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/727ygax8ls)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সমাজে, যেখানে ইসলামী আবেগ গভীরভাবে প্রোথিত, সেখানে জোর করে অবাস্তব ও অযৌক্তিক ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদা বাস্তবায়ন করার খেসারত হচ্ছে এই ‘শাকিল আহমেদ’ নামক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হলো সেই আক্বীদা, যা একদিকে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে; অন্যদিকে তার সাথে সম্পর্ককে অস্বীকার করে। এটা একদিকে বিচার দিবসে বিশ্বাস করে, অন্যদিকে সেটার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াকে অস্বীকার করে। এটা একদিকে স্রষ্টার প্রতি জবাবদিহিতাকে স্বীকার করে, অন্যদিকে সেটার জন্য কাজ করাকে অস্বীকার করে। আর এই শিক্ষার্থী যেখানে পড়েছেন, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ হলো, ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদার মানুষ তৈরির কারখানা। যারা মঙ্গল শোভাযাত্রা সহ অন্যান্য আরো অনেক সেকুলার কর্মকাণ্ডের প্রবর্তনকারী। এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামক আক্বীদা এই ‘শাকিল আহমেদ’-দেরকে শিখিয়েছে, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ও তাঁর রাসুলের (সঃ) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেও, তাদেরকে কটুক্তি করা যায় বা অবমাননা করা যায়, যেহেতু এটা এটা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করলেও তার সাথে সম্পর্ককে অস্বীকার করে।

কিন্তু রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী যতই চেষ্টা করুক, এই দূষিত আক্বীদা সমাজে গভীরভাবে প্রথিত ইসলামী আবেগে যে এতটুকু আঁচড় কাটতে পারেনি, তার প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ্‌’র রাসুলের (সঃ) সম্মান রক্ষায় জনগণের এই সম্মিলিত প্রতিরোধ (যাকে এই শাসন ব্যবস্থা ‘মব’ বলে ডাকে)। যেহেতু আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই সেকুলার রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমাদের ঈমান এবং আক্বীদাকে ‘প্রটেক্ট’ করে না, সেহেতু জনগণ বাধ্য হয়ে সম্মিলিতভাবে সেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তাই একদিকে ইসলামকে বাদ দিয়ে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’কে রাষ্ট্রীয় প্রটেকশন দেওয়া এবং কিছু মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে ধর্মান্তরিত করা, অন্যদিকে সমাজের গভীরে প্রোথিত ইসলামী আবেগ, এই দুইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ হলো এই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা। 

আর যেখানে যেকোন রাষ্ট্রব্যবস্থার উচিত, জনগণের সঠিক আবেগের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কিংবা জনগণ যদি ভুল পথে পরিচালিত হয়, তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, সেখানে আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা জনগণের সঠিক ইসলামি আক্বীদাকে অবহেলা করে, অযৌক্তিক ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা দেখছি, বিগত পলাতক হাসিনা সরকারের পথেই এই সরকারের উপদেষ্টারাও ‘সেকুলারিজমকে অক্ষত রেখে দায় ও দরদের সরকার’ প্রতিষ্ঠার নোংরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা যদি এই ধারা চালাতে থাকে, সমাজে এরকম দ্বন্দ্বও চলতে থাকবে, কারণ, মুসলিমরা ইসলামকে কখনোই সম্মিলিতভাবে ছেড়ে দিবে না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, "আল্লাহ আমার উম্মতকে ভূলের উপর একমত [একসাথে] করেন না।" এবং সেইসব দ্বন্দ্ব হতে ‘শাকিল আহমেদের আত্মহত্যা’র মতো বিভিন্ন অনভিপ্রেত ঘটনারও সৃষ্টি হবে। তখন সেগুলোকে তথাকথিত ‘মব’ বলে আর দমন করা যাবে না। 

অন্যদিকে, ইসলামী আক্বীদা একটি সঠিক আক্বীদা, কারণ এটা সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করার সাথে সাথে তাঁর হুকুমগুলো ব্যক্তি পর্যায়ে পালনের পাশাপাশি রাষ্ট্র কর্তৃকও প্রতিষ্ঠা, প্রটেকশন ও প্রচারের বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই আক্বীদার বাস্তবায়নই সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবে। কারণ এতে করে জনগণের আক্বীদাপ্রসূত আবেগ ও দৃষ্টিভঙ্গিগুলো রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গী বা নিয়ম-কানুনগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তখন এই রাষ্ট্রের বিদ্যাপীঠগুলো নাস্তিক বা সেকুলার উৎপাদনের কারখানা হওয়ার পরিবর্তে ইমাম আবু হানিফা, বুখারী প্রমূখদের মতো কালজয়ী দার্শনিকদের তৈরি করবে, ইনশা‘আল্লাহ্‌।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post