খবরঃ
পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ১২ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৪ সালের ঈদুল আজহায় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছিল। বিগত ঈদুল আজহার সাথে তুলনা করলে সড়ক দুর্ঘটনা ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, আহত ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। (https://www.risingbd.com/national/news/610349)
মন্তব্যঃ
প্রতি বছর এই মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়? এটা কি নিছকই সড়ক দুর্ঘটনা? এ বিষয়টি যদি আমরা গভীরভাবে দেখি তাহলে দেখব সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে মূলত অনেক বিষয় এখানে কাজ করছে। সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক, যানবাহনের চালকদের নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না করা, চালকদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার স্থাপন না করা, চালকদেরকে প্রতি ট্রিপ হিসেবে টাকা দেওয়ার কারণে তারা সাড়াদিনে কত বেশি ট্রিপ দেয়া যাবে সেই প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালায়, ফলে ওভারটেকিং এর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও এভাবে একজন চালক অমানুষিক ও বিরতিহীনভাবে গাড়ি চালালে ক্লান্তি ও তন্দ্রার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সবমহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, রেললাইন সংস্কার কিংবা সম্প্রসারণ করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে সড়ক পথের মানুষকে ট্রেনমুখী করা এবং নদীপথ সংস্কার ও জনবান্ধব করা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়গুলো কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা যদি বিগত আওয়ামীলীগ সরকার, তার পূর্বে বিএনপি সরকার, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলি প্রত্যেকটি সরকারের সময়ে এ বিষয়গুলো ঘটছে এবং কেউই এ বিষয়ে কোন ধরনের দায়িত্ব নিচ্ছে না। তাদের কাউকেই এ বিষয়ে জবাবদিহিতার অধীনে আনা যাচ্ছে না। তারা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে এর কারণ হচ্ছে, সড়কের ক্ষেত্রে সরকার এমনসব প্রকল্পকে গুরুত্ব দেয় যেসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুঁজিপতি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর মত দাতাগোষ্ঠীর লাভের পাল্লাই বেশি ভারী হয়ে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছে তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধাগুলোই তারা বেশি দেখে থাকে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকার কর্তৃক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় খসড়া হাইওয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। ঢাকার পরিবহণ ব্যবস্থায় ৪০০টি ইলেকট্রিক বাস যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও বর্তমান সরকার সড়ক সম্পর্কিত এসব নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পুঁজিপতি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হয় এবং বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এর মত দাতাগোষ্ঠীকে ঋণের ব্যবসা করার সুবিধা দেয়া হয়। যেহেতু বিএনপি, আওয়ামীলীগ, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরা সবাই সেকুলার পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দ্বারা দেশ পরিচালনা করেছে এবং বর্তমানে করছে- যা মুলত কতিপয় পুঁজিপতি ও বিদেশী শক্তির স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত থাকে- তাই স্বাভাবিকভাবে জনগণের স্বার্থ এখানে সর্বদাই উপেক্ষিত থাকে। তাই, এদের কাছ থেকে জনগণের কল্যানে ভাল কিছু আসা করা যায় না।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের এমন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে, যেখানে সরকার বা কর্তৃপক্ষ জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনকে এবং এটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়াকে পরকালে মহান আল্লাহ্’র নিকট দায়বদ্ধতার সাথে সম্পৃক্ত করবে। সরকারের উদ্দেশ্য থাকবে জনগণের কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জন। তাছাড়া, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জনস্বার্থকে প্রাধান্য না দেয়ার কোন অবকাশ নাই, কারণ এর জন্য জনগণ শাসকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগ দাখিল করতে পারবে। ইসলামের দৃষ্টিতে, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদের মতো গণমালিকানাধীন সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত সম্পদ সড়ক, রেল, নৌ সহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের খরচ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ, নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন জনকল্যান খাত ইসলামে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কিছু না থাকলে প্রয়োজনে ধনীদের উপর ট্যাক্স আরোপ করে তা পূরণ করা হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের জন্য দায়িত্বশীল” [বুখারী]। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান খলিফার অন্যতম দায়িত্ব। এজন্য তিনি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিবহণ সেক্টরের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও আধুনিকায়ন করতে বাধ্য। এছাড়াও এসব সেক্টরের সাথে শিল্পের উন্নয়ন ও বহু মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। খলিফা উমর (রাঃ) বলেন, “রাস্তা উচু নিচু হওয়ার কারণে যদি রাজ্যের কোথাও একটি প্রাণিও হোঁচট খেয়ে পা ভেঙ্গে ফেলে তবুও আমি উমর আল্লাহ্’র কাছ থেকে জবাবদিহি থেকে রেহাই পাবোনা”।
- মো. হেলাল
