“রাফাহ অভিমুখে মার্চ: জনগণের পক্ষ থেকে ম্যান্ডেট”
(অনুবাদকৃত)
আধুনিক ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব মুহূর্তে, পূর্ব ও পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ মহাদেশ থেকে মানুষ মিশরে একত্রিত হয়ে অবরুদ্ধ রাফাহ সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে। জাতিরাষ্ট্র প্রবর্তনের পর থেকে এটিই প্রথমবারের মতো যেখানে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছে, কোন জাতীয় পতাকার নীচে নয়, পৃথক দেশের নাগরিক হিসেবে নয়, বরং এক উম্মাহ্—একটি দেহ, একটি কারণ হিসেবে—গাজার অবরোধ ভাঙার জন্য। এটি কেবল একটি কনভয় নয়। এটি আনুগত্যের ঘোষণা—সীমান্তের প্রতি নয়, বরং বিশ্বাসের প্রতি। রাষ্ট্রের প্রতি নয়, বরং আমাদের ভাই ও বোনদের দুঃখ-কষ্টের প্রতি। কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সীমান্তরেখা, ঔপনিবেশিক সীমান্ত দেয়াল যা আমাদের বিভক্ত করেছিল, বিভিন্ন রং ও ধরণের কাপড় পরিধান যা দ্বারা আমাদের পরিচয় শেখানো হয়েছিল—সবই এই আন্দোলনের পদচিহ্নের নীচে বিলীন হয়ে গেছে।
জনগণ অনুরোধ করছে না—তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই কনভয় কোনও প্রতিবাদ নয়। এটি একটি ম্যান্ডেট। একটি বিশ্বব্যাপী ঐক্যমত্য, যেকোনো সংসদীয় প্রস্তাব বা রাজকীয় ডিক্রির চেয়েও শক্তিশালী একটি ঐক্যমত্য। এটি আরও আলোচনা বা যুদ্ধবিরতির জন্য নয়—বরং পদক্ষেপের জন্য একটি ম্যান্ডেট। এবং এটি কোন রাষ্ট্রপ্রধান বা এনজিওর দিকে নির্দেশিত নয়—এটি মুসলিম সেনাবাহিনীর জন্য একটি ম্যান্ডেট।
এই ম্যান্ডেট অস্ত্র বহনকারী কিন্তু আদেশের জন্য অপেক্ষা করা প্রতিটি সৈনিকের জন্য: আপনার আদেশ এসে গেছে। কোন জেনারেলের ডেস্ক থেকে নয়, বরং উম্মাহ্’র হৃদয় থেকে। আপনি যদি গাজাকে রক্ষা করতে অভিযানে বের হন তবে একজন মুসলিমও আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না। প্রকৃতপক্ষে, তারা আপনার পাশে হাঁটবে, আপনার পিছনে আল্লাহ্’র নিকট ফরিয়াদ করবে এবং আপনার নাম দু‘আয় উচ্চারণ করবে। এই ম্যান্ডেট আপনার শাসকদের চেয়ে শক্তিশালী, কারণ তাদের কাছে কোনও ম্যান্ডেট নেই। তাদের প্রাসাদগুলো নীরবতার উপর নির্মিত। তাদের বৈধতা কাগজের মতো পাতলা। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরাও এটা অনুভব করতে পারে। রাষ্ট্রপতি আবদেল-ফাত্তাহ আল-সিসি এই ক্রমবর্ধমান গতি সম্পর্কে দৃশ্যমান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের সামনে একটি সামরিক একাডেমিতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সে বলতে বাধ্য হয়েছে: “আমরা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর কথা বলছি... রাফায় অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর সতর্কীকরণ জানাচ্ছি।” এটি কেবল ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছিল না। এটি বিশ্বের জন্য একটি সতর্কীকরণ ছিল যে মিশরের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত রাফাহ গেট খোলা হবে না। তবে এই ধরনের বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাই প্রকাশ করে যে, প্রতিটি শাসক কী ভয় পায়: কারণ উম্মাহ্ তার পা খুঁজে পেয়েছে আর রাস্তাগুলো এখন রাষ্ট্রের চেয়ে জোরে কথা বলছে।
রাফাহের দিকে এই পদযাত্রা কেবল একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয় - এটি একটি আধ্যাত্মিক বিবৃতি। এটি জাতি-রাষ্ট্রের মরণযাত্রা। তত্ত্বগতভাবে নয়, বাস্তবে। ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, নাইজেরিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মুসলিমরা সকলেই গাজাকে তাদের নিজস্ব মনে করে। তরুণরা আর তাদের পতাকার জন্য স্লোগান দেয় না—তারা উম্মাতুন ওয়াহিদা (এক উম্মাহ্) ধ্বনি দেয়। সীমান্ত পেরিয়ে, দূতাবাস, মন্ত্রণালয় এবং বিদেশী অফিসগুলোকে এড়িয়ে সাহায্য করতে সংগঠিত হচ্ছে। কেউ অনুমোদনের অপেক্ষায় নেই। কেউ নীরবতার কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। তারা জিজ্ঞাসা করে না যে, একজন শহীদ কোন জাতীয়তা পালন করেছিলেন। সীমানা এখনও রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উম্মাহ্ তাদের ছাড়াই এগিয়ে চলেছে। হজ্বে, কোনও পতাকা নেই। শোকে, কোনও পাসপোর্ট নেই। গাজায় কোনও বিভাজন নেই। এবং এটিই সিসির মতো শাসকদের আতঙ্কিত করে - সাহায্যের ট্রাক নয়, স্লোগান নয়, বরং সত্য যে, জনগণ আর মিথ্যা দেয়ালে বিশ্বাস করে না, যা তাদের বিভক্ত এবং নিয়ন্ত্রিত রাখে।
মিশর, জর্ডান, তুরস্ক এবং তার বাইরের সেনাবাহিনীর নিকট প্রশ্ন: দাবি করবেন না যে আপনারা স্পষ্টতার জন্য অপেক্ষা করছেন যখন বিশ্ব ইতিমধ্যেই কথা বলেছে এবং উম্মাহ্ জেগে উঠেছে। পতাকাগুলো পড়ে গেছে, এবং ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা প্রতিটি শিশুর ওজন রাফার ধুলো বহন করছে। এখন আর এই প্রশ্ন করার সুযোগ নেই যে, কখন আপনারা অভিযানে অগ্রগামী হবেন, বরং প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এখনও আপনারা অগ্রগামী হননি? যেখানে আপনার কাছে যেকোনো শাসকের চেয়ে শক্তিশালী, যেকোনো সংসদের চেয়ে জোরে এবং যেকোনো ফতোয়ার চেয়ে স্পষ্ট ম্যান্ডেট আছে—এটি সরাসরি সেই উম্মাহ্’র কাছ থেকে আসা, যাকে রক্ষা করার জন্য আপনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কালিতে নয়, রক্তে। রাজনীতির জন্য নয়, নীতির জন্য করুন; ক্ষমতার জন্য নয়, বরং ফিলিস্তিনের জন্য; খ্যাতির জন্য নয়, বরং ঈমানের জন্য। সরকারগুলো দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও, উম্মাহ্ ইতিমধ্যেই মার্চ করছে, এবং আপনারা যখন অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছেন, রাজপথগুলো ইতিমধ্যেই সেই অনুমতি আপনাদের দিয়ে দিয়েছে। (সংকলিত)। নিউজ: মিশরের পথে গ্লোবাল মার্চ টু গাজা (লিঙ্ক: https://www.jagonews24.com/probash/news/1028740)