খবরঃ
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার সোনাইপুল এলাকায় নদীর তীর থেকে গত ২২ মে উমেদ আলী (৪৭), তার স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪১) ও তাদের তিন মেয়েকে উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, উমেদ, সেলিনা এবং তাদের কন্যা রুমি খাতুন (১৬), রুম্পা খাতুন (১৫) ও ছয় বছর বয়সী সুমাইয়া খাতুনের শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। পরিবারটিকে প্রথম দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রানা। তিনি বলেন, 'তারা স্তম্ভিত ছিল। বাচ্চারা ছিল ভীত এবং মনে হচ্ছিল ঠান্ডায় জমে গেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ফোন করে বিজিবিকে জানাই।' তাদের অভিযোগ, ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা ফেনী নদীতে তাদের ফেলে দিয়েছিল। …..গত মঙ্গলবার লালমনিরহাট সীমান্তের শূন্যরেখায় এক বছর বয়সী মরিয়াম আক্তারকে জড়িয়ে ধরে বসেছিলেন মানিকজান বেগম। আর এক পা এগোলেই নতুন জীবন শুরু হতে পারে। কিন্তু সে জীবন অনিশ্চয়তার। এসব ‘পুশ ইন’-এর ঘটনা এবং অসহায় নারী-শিশুদের হেফাজতে নিয়ে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা খুবই হৃদয়বিদারক। বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মোট এক হাজার ৫৩ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-676256)
মন্তব্যঃ
ভারতের মুসলিম নাগরিক এবং বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীদের জোরপূর্বক ‘পুশ ইন’ বাংলাদেশ এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতের ষড়যন্ত্রের একটি নতুন অস্ত্র। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় শিক্ষককে বাংলাদেশে পুশ-ব্যাকের ঘটনায় আসামে মামলা, বিবিসি বাংলা, ২৮ মে ২০২৫)। এই অস্ত্রটি ব্যবহার করে ভারতের মোদি সরকার বাহ্যিকভাবে বাংলাদেশ এবং আভ্যন্তরীণভাবে ভারতের স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠীকে চাপে রাখতে চাচ্ছে। তথাকথিত অধিক সভ্য এবং উন্নত গণতন্ত্রের তীর্থ ভূমি হিসেবে পরিচিত বৃটেন এবং আমেরিকার রাজনীতিতেও মুসলিম এবং অভিবাসী বিদ্বেষ এখন অন্যতম রাজনৈতিক এজেন্ডা। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অভিবাসীদের উপর খড়গ আরও বিস্তৃত হয়েছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ভারতীয়দের ধরে আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে ট্রাম্প!, জনকন্ঠ, ২২ জানুয়ারি ২০২৫)। অর্থাৎ, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা লিবারেল ব্যবস্থা (Word order) যতই ইনক্লুসিভ, মানবাধিকার, বৈচিত্র্যের কথা বলুক না কেন প্রকৃতঅর্থে নিজেদের স্বার্থ ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে না। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য তারা সস্তা অভিবাসী শ্রমিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসলেও এখন পশ্চিমারা রাজনৈতিক কারণে অভিবাসীদের তাড়াতে চাচ্ছে।
মুসলিম শাসকরা কখনো ক্ষুদ্র জাতিস্বার্থের আলোকে অভিবাসী বা অন্য জাতির সমস্যা দেখে নাই। ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মুসলিম কিংবা অমুসলিম সবাই রাষ্ট্রের নিজস্ব নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তাদের অধিকারসমূহ প্রাপ্ত হবে, শুধুমাত্র সক্ষম অমুসলিম নাগরিকরা জিজিয়া কর প্রদান করবে। ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে নির্যাতিত মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল মুসলিম শাসক বা খলিফাদের অন্যতম মূল এজেন্ডা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৪৯২ সালে স্পেনের দখলের পর একটি ডিক্রি জারি করার মাধ্যমে স্পেন থেকে ইহুদিদের বহিষ্কারের করা হয়। ওই সময় প্রায় ১৩ হাজার ইহুদিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছিল তৎকালীন স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ। তখন ইহুদীদের রক্ষার জন্য তৎকালীন সুলতান দ্বিতীয় বেয়াজিদ জাহাজ প্রেরণ করে আশ্রয়হীন ইহুদীদেরকে উদ্ধার করেন এবং তাদেরকে রাজধানী ইস্তাম্বুল ও থেসালোনিকিত অঞ্চলে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দিয়েছিলেন। নির্যাতিত মানুষদের দুর্দশাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার নয়, বরং তাদের পরিপূর্ণ পুনর্বাসনই ছিল মুসলিম শাসক বা খলিফাদের মূল এজেন্ডা বা রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। বর্তমানে আমরা যে তীব্র অভিবাসী সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা ইসলামী বিশ্ব ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া সম্ভব নয়। খিলাফত ব্যবস্থার নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার ছায়াতলে অভিবাসী সমস্যা বন্ধ হবে এবং খিলাফত নির্যাতিত মানবতার রক্ষার ঢাল হিসাবে কাজ করবে।
- মো: সিরাজুল ইসলাম