খবরঃ
… আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক মার্কিন কমিশনের (ইউএসসিআইআরএফ) চেয়ারম্যান স্টিফেন শ্নেক আজ সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।… প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ১৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের এই দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।… (https://dailynayadiganta.com/bangladesh/politics/3S7INeeaOQTx)
মন্তব্যঃ
পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় বৈচিত্র্য ফেরি করে বেড়ালেও, তাদের নিজেদের দেশে তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ইসলামোফোবিয়া’ তৈরি করে ইসলাম ও মুসলিম নিধনে ব্যস্ত রয়েছে। তারা মুসলিমদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে নিধনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে। তারা জন বোল্টন, ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড, সেবাস্তিয়ান গোর্কা, স্টিফেন মিলারের মতো কট্টর ইসলাম-বিদ্বেষী ব্যক্তিদেরকে মার্কিন সরকারের সর্বোচ্চ পদ দ্বারা পুরস্কৃত করেছে। মুসলিমদেরকে যেখানে বলতে হয়, “আই এম এ মুসলিম এন্ড আই এম নট এ টেরোরিস্ট”। সেখানে ইসলাম বিদ্বেষ এত ভয়াবহ যে, কিছু দিন আগে দেখা গেছে, ৭১ বয়সী এক ব্যক্তি শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার অপরাধে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৬ বছর বয়সী এক শিশুকে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। একদিকে, শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার অপরাধে মার্কিনীরা বর্তমানে ফিলিস্তিনে ইহুদীদেরকে বোমা, অস্ত্রসহ সর্বাত্মক সহযোগীতা ও রসদ দিচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো ৯০% মুসলিমের দেশে তাদের ধর্মীয় বৈচিত্র্য, ধর্মীয় স্বাধীনতার তত্ত্বকথা প্রচার করছে।
এর কারণ হলো, এত বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠী, যাদের মূল শক্তি হলো তাদের ‘ইসলামী আক্বিদা’, তাদের (মার্কিনীদের) স্বার্থের জন্য হুমকি। কারণ, এই শক্তিশালী ইসলামী আক্বীদার ভিত্তিতে কোন নিষ্ঠাবান শাসক তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেলতে পারে। ইতিপূর্বে এই আক্বীদা এমন বর্বর জাতিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো, যারা একটি উটের রশি নিয়ে যুগের পর যুগ যুদ্ধ করেছিলো। এমনকি মারা যাওয়ার সময়ও তারা তাদের সন্তানদেরকে বলতো, তারা যেন তাদের উটের রশির দাবি না ছাড়ে। তাই বর্তমানেও তারা (মার্কিনীরা) এজন্য ভীত যে, বহু বছর ধরে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে রাজনৈতিক বিভাজন, সেক্টেরিয়ান বিভাজনের যে তাসের ঘর তৈরি করেছে, ইসলামী আক্বীদার ভিত্তিতে মুসলিমরা একত্রিত হলে, তা নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই তাদের টার্গেট মুসলিমদের বিশ্বাস বা আকিদা। এ যেন ইসলামী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাদের ‘ক্রুসেড’। এক্ষেত্রে তাদের অস্ত্র হচ্ছে তথাকথিত এ ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’র চিন্তা। এই ধর্মীয় স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে, তারা ‘কে কতটুকু ইসলাম নিবে?’, ‘ইসলাম থেকে কতটুকু বাদ দিবে?’, ‘ইসলামে নতুন কিছু কি অনুপ্রবেশ করাবে?’, ‘যখন খুশি তখন ইসলামকে ছেড়ে দিবে’, ‘মনে মনে মুসলিম হলেও আচার-আচরণে সেকুলার হয়ে যাবে!’, ‘জুম্মা মুসলিম’, ‘রমজান মুসলিম’, ‘ঈদের মুসলিম’, ‘সমকামী মুসলিম’- এরকম সকল ধরনের মুসলিম হওয়ার স্বাধীনতা তারা দিতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা ১৯৯৮ সালে ‘The International Religious Freedom Act’ তৈরি করে। এই আইন অনুযায়ী, আমেরিকা কর্তৃক ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে মুসলিম দেশগুলোতে অমুসলিমদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের প্রকাশ্য আয়োজন এবং সেগুলোতে মুসলিমদের অংশগ্রহণে ব্যাপক উৎসাহিত করা হয়।
অন্যদিকে, ইসলামী হুকুম অনুযায়ী বিভিন্ন ধর্মের পালনের হস্তক্ষেপ না করা হলেও, সেগুলোর আচার অনুষ্ঠান অবশ্যই নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে পালন করতে হবে। যেমন, কোন ধর্মে মদ খাওয়া বা মূর্তি পূজার অনুমতি থাকলেও তা তাদের গণ্ডির বাইরে চর্চা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। কেউ যদি ইসলাম পরিত্যাগ করে, ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী তার উপরে মুরতাদের শাস্তি প্রযোজ্য হবে। যা পশ্চিমাদের ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’র ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক। মূলত মুসলিম উম্মাহ্’র একক ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র খিলাফত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর, রাষ্ট্রীয়ভাবে না হলেও সামাজিকভাবে এখনো ইসলামী আক্বীদা প্রটেক্টেড অবস্থায় আছে, যার ভিত্তিতে যেকোন সময় মুসলিমগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তাই এই আক্বীদাটিকে বিকৃত করাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। যেন সত্যের সাথে মিথ্যা কে মিশিয়ে দিয়ে মুসলিমদের মন মগজে বিকৃত আক্বীদাটি প্রতিষ্ঠা করা যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠির ‘গণঅভ্যুত্থানের সরকার’ বলে নিজেদের দাবি করা কোন সরকারের এসকল ষড়যন্ত্রে পা দেওয়া উচিৎ নয়।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম