খবরঃ
মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।…মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎ হচ্ছে আগামী ১৩ জুন। লন্ডনের স্থানীয় সময় সকালে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।…বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাক্ষাৎকে স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। প্রত্যাশা করছি যে, এটা বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংকটগুলো আছে তা কাটিয়ে উঠতে পারে। একইসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি, সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট এ অবস্থায় সেটি একটা বড় ইভেন্ট, এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। যদি সব কিছু সঠিকভাবে চলে তাহলে নিঃসন্দেহে এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। (https://www.jugantor.com/politics/963566)
মন্তব্যঃ
ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের পর জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল, তারা আর পুরনো অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না। কিন্তু, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, তারা জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি থেকে মুক্তি পায়নি। দেশের রাজনৈতিক, বুদ্ধিজীবি ও মিডিয়া অঙ্গণের প্রচারণা থেকে মনে হচ্ছে যেন, বাংলাদেশে যেন একটাই সমস্যা, আর সেটা হচ্ছে ইলেকশন ফেব্রুয়ারী নাকি এপ্রিলে। এমনভাবে জাতীয় আলোচনা তৈরি করা হয়েছে যেন বিএনপি আর প্রধান উপদেষ্টার একমত হওয়াটাই বাংলাদেশের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান, তথাকথিত টার্নিং পয়েন্ট। অথচ, এই গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্টের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা কি? জনগণের বিশ্বাস এবং আবেগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর আলাপ কি এই আলোচনার অংশ? জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের কোন পলিসিগত পরিবর্তন এর দিকনির্দেশনা এখানে থাকবে? পশ্চিমা অপসংস্কৃতি এলজিবিটিকিউ-এর প্রতীক ‘রেইনবো নেশন’ ধারণার প্রবক্তা আর বন্দর দেয়ার জন্য উদগ্রীব দুই পক্ষ কি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য চিন্তিত? বেকারত্ব, শিক্ষার ভগ্নদশা, স্বাস্থ্যসেবার অব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কোন কিছুর সমাধান কিভাবে হবে তার কোন রূপরেখা কি এই আলোচনার উদ্দেশ্য? ভারতীয় আধিপত্য মোকাবেলা এবং ভারতের সাথে হাসিনার করা দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল কিংবা পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার কিভাবে করা যায় তা কি এই আলোচনার বিষয়বস্তু। না!
মূলতঃ তথাকথিত এই টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে, দ্রুত ক্ষমতার ভাগাভাগি ও সমঝোতা নিশ্চিত করা, যাতে তারা এই অঞ্চলে মার্কিন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ থাকে, যেটা কিছুদিন পূর্বেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিল, বন্দর ও করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত কেবল নির্বাচিত সরকারের। ধর্মনিরেপক্ষ জীবনব্যবস্থার রাজনীতিতে ক্ষমতার মধু খাওয়াই মুখ্য বিষয়, জনগণের দেখভাল করা না। হাসিনার ফেলে যাওয়া আইন ধারাবাহিকভাবে চলমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এবং রিলে রেসের মত তা কার হাতে যাবে সেটাই তাদের আলোচ্য বিষয়।
বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ হল মুসলিম। তাদের বিশ্বাস এবং আবেগ হল ইসলাম। ইসলামে রাজনীতি বা সিয়াসাহ-এর অর্থ হচ্ছে জনগণের দেখাশোনা করা- অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে। এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার কোন অতিরিক্ত সুবিধা নেই, কারণ আইন এখানে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা দ্বারা সুনির্ধারিত। তাই, নিজে আইন তৈরি করে সুবিধা নেয়ার যে ক্ষমতা এবং এই ক্ষমতায় যাওয়ার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তা পুরোপুরি অনুপস্থিত। তাই জনমানুষের ভাগ্যের একমাত্র টার্নিং পয়েন্ট তখনই আসবে যখন এই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা খিলাফতের ছায়াতলে আসবে। হযরত উমর (রাঃ) দ্বিতীয় খলিফা হওয়ার পর উম্মাহ্’র প্রতি উদ্দেশ্য করে বললেন: “হে মানুষ, তোমাদের কেউ যদি আমার চরিত্র, লেনদেন বা কর্মকাণ্ডে কোনো বক্রতা (বিকৃতি) দেখতে পাও, তাহলে তা সোজা করে দিও।” “এসময় একজন লোক সভার মধ্য থেকে চিৎকার করে বলল: আল্লাহ্’র কসম, যদি আমরা আপনার মধ্যে কোনো বক্রতা দেখি, তবে আমরা তা আমাদের তলোয়ার দিয়ে সোজা করে দেব।” উমর (রাঃ) তখন বললেন: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্’র, যিনি এই জাতির মাঝে এমন মানুষ রেখেছেন যারা উমরের বক্রতা তাদের তলোয়ার দিয়ে সোজা করে দেবে”।
- জাবির জোহান