গাজায় গ্রেটা থুনবার্গের ‘ম্যাডলিন’ জাহাজ আটক, ইসরায়েলের হেফাজতে সকল কর্মী




খবরঃ

গাজা অভিমুখে মানবিক সহায়তা বহনকারী ‘ম্যাডলিন’ নামের জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে আটক করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। জাহাজটিতে থাকা ১২ জন শান্তিপূর্ণ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বখ্যাত জলবায়ু আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ। ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর উদ্যোগে পরিচালিত এই জাহাজটি যখন গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার (প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল) দূরে অবস্থান করছিল, তখন ইসরায়েলি কমান্ডো বাহিনী এটি জব্দ করে। এরপর জাহাজটিকে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাজটিতে করে ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো হচ্ছিল। (দৈনিক জনকন্ঠ, Newslink: https://rb.gy/xsmmy5

মন্তব্যঃ

অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের নির্মম হত্যাকান্ড এবং অবরোধ গাজাবাসীর আত্মবিশ্বাসকে একটুও টলাতে পারেনি। তাদের এই দৃঢ়তা ইহুদীদের উন্মাদ করে তুলেছে। তারা খাদ্যসহ জরুরী পণ্য সরবরাহ চেইন বন্ধ করে ক্ষুধাকে গাজাবাসীর বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। নজিরবিহীন এই বর্বরতা বিশ্বের সকল বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, মার্চ ফর গাজা, মার্চ টু গাজা, ইসরায়েল-আমেরিকার পণ্য বর্জনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে গাজার মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। গাজা অভিমুখে মানবিক সহায়তা বহনকারী জলযান ‘ম্যাডলিন’ ছিল এই রকম অসংখ্য প্রতিবাদের একটি। নিঃসন্দেহে এটা একটি অসীম বীরত্বপূর্ণ কাজ কারণ এখানে জীবন হারানোর সম্ভবনা ছিল। কিন্তু, সাধারণ জনগণ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাজার মুসলিমদের মুক্ত করতে তাদের সাধ্যের মধ্যে সবটুকু করার চেষ্টা করলেও আরব ভূ-খন্ডসহ মুসলিম শাসকরা যাদের হাতে গাজার জনগণকে মুক্ত করার প্রকৃত সক্ষমতা (সামরিক বাহিনী) রয়েছে তারা গাজাবাসীকে মুক্ত করার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং, তারা বিভিন্নভাবে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে। অবৈধ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজাবাসী যখন না খেয়ে মৃত্যুবরণ করছে তখন আবু লাহাবের বংশধর জর্ডানের বাদশাহ্‌ আব্দুল্লাহ্‌ ফল এবং সবজি পাঠিয়ে অভিশপ্ত ইসরায়েলের সৈন্যদের হৃষ্টপুষ্ট করছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ https://www.freshplaza.com/europe/article/9649322/major-sources-of-fruit-and-vegetable-imports-in-israel/)। মিশরের ফেরাউন সিসি এবং তুরস্কের প্রতারক এরদোয়ানও পিছিয়ে নাই। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ turkishminute.com/2025/05/23/turkey-was-the-5th-largest-exporter-to-israel-in-2024-despite-trade-ban-un-data/ )। এই আরব শাসকরাই হচ্ছে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রকৃত ফাস্ট লাইন আব ডিফেন্স। হিযবুত তাহ্‌রীর-এর প্রতিষ্ঠাতা বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও স্কলার শেখ তাকিউদ্দিন আন-নাবাহানী (রহ.) অবৈধ ইসরায়েলের সাথে আরব শাসকদের সম্পর্ক বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “অবৈধ ইসরায়েল হচ্ছে বিশ্বাসঘাতক আরব শাসকদের ছায়া। এই আরব শাসকদের পতনের সাথে সাথে ইসরায়েলেরও পতন হবে, কারণ শরীরের অস্তিত্ব বিলীনের সাথে সাথে ছায়ার অস্তিত্ব বিলীন হয়”। অন্যান্য মুসলিম শাসকরাও, আরব শাসকদের থেকে ভিন্ন নয়। 

সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ, পণ্য বর্জন, এমনকি ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙার চেষ্টা সহ তাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকা কোন চেষ্টা অবশিষ্ট রাখে নাই, আর অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের শাসকেরা ইসরায়েলকে রক্ষায় তাদের কোন চেষ্টা অবশিষ্ট রাখে নাই। এটা প্রমাণিত হয়েছে, মুসলিম সেনাবাহিনী ব্যাতীত গাজাবাসীর মুক্তির আর কোন পথ অবশিষ্ট নাই। গাজায় সামরিক অভিযান পরিচালনা মুসলিম সামরিক অফিসারদের জন্য একটি শারীআহ্‌ দায়িত্ব। মুসলিম শাসকরা আল্লাহ্‌’র এই অকাট্য আদেশ পালন না করে, মুসলিম সেনাবাহিনীকে কমান্ড দেয়ার ম্যান্ডট হারিয়ে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতার প্রশ্নে সৃষ্টির আনুগত্য নয়।” (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩৬৯৬)। এই সকল নতজানু এবং বিশ্বাসঘাতক শাসকরাই উম্মাহ্‌’র মুক্তির পথে প্রকৃত বাঁধা। তাই, এই সকল শাসকদের উৎখাত করে ন্যায়নিষ্ঠ খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খলিফার কমান্ডের অধীনে আসা মুসলিম সেনা অফিসারদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। কারণ শারী‘আহ্‌’র একটি গুরুত্বপূর্ণ কায়দা (মূলনীতি) হচ্ছে: “ওয়াজিবের জন্য যা জরুরী তা করাও ওয়াজিব”; উদাহরণস্বরূপ, ওজু করা সুন্নত, কিন্তু যেহেতু, ফরজ সালাতের পূর্বে ওজু অত্যাবশ্যক, তাই এক্ষেত্রে ওজু করাও ফরজ। সুতরাং, পবিত্রভূমি ফিলিস্তিনসহ সকল মুসলিম ভূমি মুক্ত করতে নিষ্ঠাবান সেনাঅফিসারদের নিকট খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী জানাতে হবে। খলিফা মুসলিম সেনাবাহিনীকে অভিযানে প্রেরণের মাধ্যমে ফিলিস্তিনসহ সকল দখলকৃত মুসলিম ভূমি মুক্ত করবেন। ইনশা’আল্লাহ্‌।   

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post