খবরঃ
বিশ্বজুড়ে গত ১০ বছরে মুসলমানদের সংখ্যা অন্য সব ধর্মের সম্মিলিত বৃদ্ধির চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ইসলাম এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের নতুন এক গবষেণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত - এক দশকের উপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। গত সোমবার পিউ রিসার্চের ‘গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ’ শীর্ষক এ গবেষণায় বলা হয়েছে, ইসলাম ধর্মে এই প্রবৃদ্ধি মূলত প্রাকৃতিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফল। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে ধর্মান্তরের ভূমিকা খুবই সামান্য। (https://www.jugantor.com/international-others/964085)
মন্তব্যঃ
মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা নিঃসন্দেহে মুসলিম উম্মাহ্’র জন্য একটি আনন্দের খবর। কিন্তু সাথে সাথে এ প্রশ্নও জাগে যে, এই ক্রমবর্ধনশীলতা কি মুসলিম উম্মাহ্’র বর্তমান দুরবস্থা লাঘবে কোন ভূমিকা রাখবে? মুসলিমদের সংখ্যা যদি ২০০ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ কোটিতে গিয়ে পৌঁছায় তাহলে কি গাজার মুসলিমদের উপর নেমে আসা বর্বরতম নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটবে? কাশ্মীর, আরাকান, উইঘুর - ইত্যাদি অঞ্চলের নির্যাতিত মুসলিমদের দুরবস্থার কি অবসান ঘটবে? মুসলিম বিশ্বের সম্পদ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক বাহিনী - ইত্যাদির উপর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা কি প্রভাবমুক্ত হবে? বাস্তবতা বলছে, এই অবস্থার কোন পরিবর্তনই হবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন আমাদের বর্তমান অবস্থা সমুদ্রের ফেনার মতো? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাবের এই বক্তব্যে, “আমরা তো মর্যাদাহীন লোক ছিলাম, আল্লাহ্ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন ইসলামের মাধ্যমে। সুতরাং, আমরা যদি আল্লাহ্ আমাদেরকে যা দ্বারা সম্মানিত করেছেন তা থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য কোথাও সম্মান খুঁজি তাহলে আল্লাহ্ আমাদেরকে পুনরায় অপমানিত করবেন।” অর্থাৎ যতদিন আমরা ইসলাম দ্বারা শাসিত ছিলাম ততদিন জাতি হিসেবে আমাদের সম্মান ও শৌর্য-বীর্য ছিল, আর যখনই আমরা ইসলামকে পরিত্যাগ করে পশ্চিমাদের দেয়া সেক্যুলার-পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করতে শুরু করলাম তখনই আমাদের দুরবস্থার সূচনা হল। মদীনায় রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কর্তৃক ৬২২ সালে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯২৪ সালে খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ্ ইসলামী ব্যবস্থা দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল। এই দীর্ঘ ১৩শত বছর মুসলিমরা ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান, সামরিক শক্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি, আইনশাস্ত্র, জনকল্যাণ - ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমীহ আদায়কারী এক শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্র।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মুসলিমদের এই রাষ্ট্র মুসলিমদের সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং তা নির্ভর করে রাষ্ট্রটি ইসলাম দ্বারা শাসিত হচ্ছে কিনা এবং এর নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের কর্তৃত্ব মুসলিমদের হাতে আছে কিনা তার উপর। সুতরাং ৯০ শতাংশ অমুসলিম যদি কোন ভূমিতে বাস করে কিন্তু সেখানকার বাস্তবায়িত ব্যবস্থা যদি ইসলাম হয় এবং কর্তৃত্ব যদি মুসলিমদের হাতে থাকে তবে সেই ভূমিকে ‘দার-উল-ইসলাম’ বলা যাবে; কিন্তু যদি ৯০ শতাংশ মুসলিম বসবাসকারী কোন ভূমি যদি কুফর ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয় যদিও এর শাসনভার ও নিরাপত্তা মুসলিমদের হাতে থাকে তবুও সেই ভূমিকে ‘দার-উল-কুফর’-ই বলতে হবে। সুতরাং মুসলিমদের সংখ্যা ইসলামের বাস্তবায়ন ও মুসলিমদের বিজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ না, বরং মুসলিমরা ইসলাম দ্বারা শাসিত হচ্ছে কিনা এবং মুসলিমদের ভূমি দার-উল-ইসলাম কিনা তার উপর নির্ভর করে। সুতরাং, আমাদেরকে সংখ্যাবৃদ্ধির ঘটনার মাধ্যমে সন্তুষ্টি অর্জন করলেই শুধু হবে না, বরং দার-উল-ইসলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ইসলাম বাস্তবায়ন ও এই রাষ্ট্রকে Leading State বানানোর মাধ্যমেই নিজেদের সম্মান ও মর্যাদা খুঁজে নিতে হবে।
- মো. হাফিজুর রহমান