বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

 


খবরঃ

পাঠকদের জন্য উমামা ফাতেমার ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়েছে গত পরশু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো। এনসিপি নামক রাজনৈতিক দলটি গঠনের পর আমি জুলাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো করার দায়বদ্ধতা থেকে এই ব্যানার নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এই ব্যানারটি স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত। তাই আমার উপর অনলাইন, অফলাইনে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করা হয় যাতে আমি এই ব্যানার নিয়ে কাজ না করি। আমি পুরা বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই একটা Goodwill থেকে ব্যানারকে সচল করার চেষ্টা করেছিলাম। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই। যে মানুষগুলার সাথে আমি পাশে দাঁড়ায়ে মিটিং করছি, মিছিল করছি তারাই পরিকল্পিতভাবে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে Smear campaign চালায়।’ (https://www.dhakapost.com/politics/375695)

মন্তব্যঃ

ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থায় আপাতদৃষ্টিতে যত বড় ক্রান্তিকালীন পরিবর্তনই আসুক না কেন, দিনশেষে তা সেই আগের অবস্থাতেই ফিরে যায়। যেমন পাকিস্তানীদের হাতে শোষণ হতে থাকা বাংলাদেশীদের শোষণ থেকে মুক্তি ঘটেনি মুক্তিযুদ্ধের পরেও। অল্পদিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারই শোষক হয়ে দাঁড়ায়। এরপর ক্ষমতার নানা পালাবদল ঘটলেও দুর্নীতিবাজ, অসৎ এবং সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল ছাড়া কাউকেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় এবং সরকারের বিরোধী পক্ষেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারই ধারাবাহিকতায় এই চব্বিশের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া তরুণদের দলও আর্থিক দুর্নীতি, নারী কেলেংকারি এবং অস্ত্র বিতর্কে জড়িত হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, দেশের ঘুণে ধরা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক ধারায় এই নতুন নেতৃত্ব কেন কোনো গুণগত পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হল?

প্রকৃতপক্ষে, বিদ্যমান ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামোর অধীনে গড়ে উঠা প্ল্যাটফর্মগুলোর অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নৈতিকতা নয় বরং লাভ-ক্ষতির হিসাব; আদর্শ নয় বরং ক্ষমতা; সত্য নয় বরং গ্রহণযোগ্যতা ও ব্র্যান্ডিং। যে যত বেশি আপোষ করে, সে তত বেশি উপরে উঠে। কেননা এ ব্যবস্থায় জীবনের উদ্দেশ্য হল কিভাবে কেবল নিজ স্বার্থ সিদ্ধি করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভ করা তথা বিপুল সম্পদ, ক্ষমতা, খ্যাতি অর্জন করা। এটি অর্জন করতে যেকোন নীতি আদর্শ অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা নাই।

তাই সত্যিই যদি আমরা আমাদের সার্বিক অবস্থার গুণগত পরিবর্তন চাই তাহলে আমাদের আদর্শিক পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। সেরকমই একটা আদর্শ হল ইসলাম যা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ব্যক্তিজীবন, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একটি সুনির্দিষ্ট নৈতিক কাঠামোয় পরিচালনা করে। এই কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু হল: "আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জনই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য"। এই রাজনৈতিক কাঠামোই হল খিলাফত যা ইসলাম মেনে চলার পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি হয় নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং কঠোরভাবে ইসলামী মূল্যবোধ পুরো রাষ্ট্রে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করবে। ফলে আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জনগণ এবং শাসক আবশ্যিকভাবে ইসলামের উচ্চতর মূল্যবোধ যেমন তাকওয়া, পরকালের কঠোর জবাবদিহিতার ভয়, ন্যায়পরায়ণতা, সততা, আন্তরিকতা ইত্যাদি দ্বারা পরিচালিত হয়। খিলাফতের অধীনে নীতি ও আদর্শ বিবর্জিত কেউ টিকে থাকতে পারবে না। উদাহরণস্বরূপ আহমেদ পাশা ছিলেন উসমানী খিলাফতের অধীন আলজেরিয়ার এক গভর্নর যার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের উপর অবিচার, ট্যাক্সের অতিরিক্ত চাপ, এবং আর্থিক অনিয়ম , উলামা ও মসজিদের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইস্তানবুল থেকে শারঈ তদন্ত দল পাঠানো হয়। অতঃপর তাকে প্রত্যাহার করে স্থানীয় ন্যায়পরায়ণ গভর্নর নিয়োগ দেয়া হয় (Jamil M. Abun-Nasr, A History of the Maghrib in the Islamic Period)। অতএব যারা সত্যিকারের “নতুন বাংলাদেশ” দেখতে চান, তাদের এই প্রশ্ন নিজেকে করতে হবে: আপনি কি শুধু সরকারের পরিবর্তন চান, নাকি গোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন চান? যদি দ্বিতীয়টি চান, তাহলে ইসলামী খিলাফতই একমাত্র সমাধান।

    -    আলভি আরসালান


Previous Post Next Post