খবরঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম স্বাধীন বা মুক্ত আছে-এটা মনে করার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। গত ১০ জুলাই ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ ইউটিউব চ্যানেলে সাংবাদিকতায় ‘ভিউ’ এবং ‘ভয়’ শিরোনামে এক টকশোতে এ মন্তব্য করেন তিনি। খালেদ মুহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় ওই টকশোতে আরও উপস্থিত ছিলেন টকশো সঞ্চালক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাজী জেসিন। (https://mzamin.com/news.php?news=170592)
মন্তব্যঃ
সত্যকে সত্যের মত করেই পক্ষপাতদুষ্টতা এড়িয়ে জনসম্মুখে নিয়ে আসাই গণমাধ্যমের অন্যতম দায়িত্ব। এটার জন্যই মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বারবার আসছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তুলনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভয়াবহ পরাধীন। সত্যিই কি তাই? আমরা কি আদৌ মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম বলে কিছু দেখতে পাচ্ছি? হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নারী শিশুদের হত্যার পরেও হারেটস পত্রিকায় শিরোনাম “ইসরায়েলের যুদ্ধের ৬৫২তম দিন”। ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে কি যুদ্ধ চলছে?? Amazon, IBM, Microsoft, Volvo, British Petroleum, Unilever সহ হাজারের উপর কর্পোরেট কোম্পানী গাজায় নারী-শিশুদের হত্যায় তথ্যপ্রযুক্তি ও অর্থায়নে সরাসরি জড়িত- এই তথ্য কোন গণমাধ্যম জনসম্মুখে আনেনি কিন্তু এসব কোম্পানিতে কর্মরত অনেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এই কোম্পানিগুলোর পলিসি উন্মোচন করে দিয়েছে প্রকাশ্য সভা সমাবেশে প্রতিবাদ করে। ২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমণের আগে The New York Times ও অন্যান্য মূলধারার মার্কিন মিডিয়া ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র (WMD) আছে বলে প্রচার চালায় কোন প্রমাণ ছাড়াই। পরবর্তীতে যা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। ৯ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত হয়। বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলোর তথাকথিত গণতন্ত্রে একটু অন্যথা হলেই পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া সরব! কিন্তু তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁরা সরব না। মূলতঃ ঔপনিবেশিক স্বার্থ এবং মুনাফাকে নিশ্চিত করে সংবাদ পরিবেশন করাই সকল গণমাধ্যমের কার্যপ্রণালী। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোকে রাষ্ট্রীয় পলিসির বাইরে কাজ করার কোন অনুমতি দেয়া হয় না। তথাকথিত উন্নত বিশ্বের বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে অর্থায়ন করে বড় বড় অস্ত্র, ওষুধ ও প্রযুক্তি সেবাদাতা কোম্পানিগুলো। তাই কর্পোরেট স্বার্থরক্ষাও তাদের অন্যতম দায়িত্ব। বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলোর গণমাধ্যমও এই ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে নয়। পশ্চিমাদের আশীর্বাদপুষ্ট প্রধান উপদেষ্টা যখন “মন খুলে প্রতিবাদ করুন” বলেও প্রতিবাদ করার কারণে ইউটিউবারকে গ্রেপ্তার করা, হাসিনার কালো আইনগুলো বহাল রেখে হাসিনার ধারাবাহিকতাগুলো বয়ে নিয়ে যাওয়া, বুদ্ধিবৃত্তিক ইসলামি রাজনৈতিক চিন্তাকে “জঙ্গি” তকমা দেয়া ইত্যাদি জারি রাখেন; তখন এসব কাজগুলো গণমাধ্যমকে “মুক্ত ও স্বাধীনতা”র বার্তা দেয় না। বরং তারা নীতিনির্ধারকদের পদলেহন ও নিজেদের উপর সেলফ সেন্সরশিপ চাপিয়ে নেয়। বেসরকারি গণমাধ্যমও মুনাফা যেদিকে বেশি সেই মোতাবেক সরকারের সাথে মিলেমিশে সংবাদ উপস্থাপনে বাধ্য। তাই ঔপনিবেশিক স্বার্থ ও পুঁজিবাদী মুনাফা নিশ্চিত করতে গিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রকৃতপক্ষে একটা মিথ বা কাল্পনিক চিন্তা মাত্র।
একটা জীবনব্যবস্থার অংশ হয়ে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা কোন গণমাধ্যমের পক্ষেই সম্ভব না। তাই পুঁজিবাদি দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই বিশ্বব্যবস্থার গণমাধ্যম ঔপনিবেশিকতা ও পুঁজিবাদের পুঁজির নিশ্চয়তাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়। কিন্তু ইসলামি জীবনব্যবস্থায় এটাই বিশ্বাস করা হয় যে যিনি স্রষ্টা তিনিই তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে ভালো জানবেন। তাই এই ভিত্তিতে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফতে গণমাধ্যম বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত বিধি বিধানের সীমানা (হারাম-হালাল) রক্ষা করছে কিনা রাষ্ট্র তা খেয়াল রাখবে। ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের ষড়যন্ত্র রাষ্ট্র ও উম্মাহ্’র নিকট উন্মোচন করবে। রাষ্ট্র এবং গণমাধ্যম এর মধ্যে কোন স্বার্থের দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হবে না। কারণ উভয়ের স্বার্থ একই- আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি এবং উভয়ই শারী‘আহ্ নীতিমালা দ্বারা আবদ্ধ। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখ্য- “রাষ্ট্রের কোন নাগরিকের মিডিয়ার মালিকানা প্রাপ্তির জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। বরং প্রচার মাধ্যম দপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করাই যথেষ্ট, যাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানতে পারে এই মিডিয়াটি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। যেকোন মিডিয়ার মালিক ও সম্পাদককে ঐ মিডিয়ার প্রকাশিত যে কোন প্রকাশনার ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে তাদেরকে অন্য যেকোন নাগরিকের মত শারীয়াহ লংঘনের ব্যাপারে কঠোর জবাবদিহি করা হবে”।
- জাবির জোহান