খবরঃ
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মিশন চালু হতে যাচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি মিশন চালুর জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই পক্ষ। পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম বাংলাদেশের এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক জাতিসংঘের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছেন।... জেনেভা থেকে প্রচারিত জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের যুক্ততা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ... নতুন এ মিশনটি বাংলাদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেবে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/p8qkafgzxa)
মন্তব্যঃ
আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, বাংলাদেশে পতিত হাসিনার গুম, খুন, আয়নাঘরে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের বিষয়গুলো জানা সত্ত্বেও এক দশকেরও বেশি সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কোন কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। কিন্তু হাসিনার পতনের পর হঠাৎ করে বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার নামে কুমীরের কান্না দেখানো শুরু করেছে। আমরা জানি, ১৯৬০ সালে জাতিসংঘের ছত্রছায়ায় কঙ্গোর কিনশাসায় এবং ১৯৯৪ সালে সোমালিয়া এবং রুয়ান্ডায় গণহত্যার ঘটনা ঘটে যেখানে জাতিসংঘের বাহিনী এই পরিকল্পনাগুলো আগে থেকে জানা সত্ত্বেও ১০০ দিনের মধ্যে ৮,০০,০০০ এরও বেশি তুতসিকে হত্যা করা হয়। ফিলিস্তিনে মার্কিন মদদে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের নৃশংসতম গণহত্যার বিষয়ে, কিংবা কাশ্মির ও ভারতের অভ্যন্তরে মুসলিমদের হত্যা, নির্যাতন, বাস্তুচ্যুত করার বিষয়ে কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের উপর চলমান হত্যা-নির্যাতনের বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য বা কার্যক্রম নেই। এই জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক প্রস্তাবের মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ১৯৯৫ সালে স্রেব্রেনিকা গণহত্যার আসল খুনী ছিল এই জাতিসংঘ, যারা তাদের সুরক্ষার অধীনে থাকা মুসলিমদেরকে সার্বিয়ান হায়েনাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। যার ফলে ৮০০০ মুসলিম নির্মম গণহত্যার ও ৫০০০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এরপর ২০০৩ সালে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ কর ৪ লক্ষাধিক মানুষ হত্যা এবং দেশটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করলেও জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার কমিশন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে! এই সংস্থাটি একদিকে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের জন্য চিৎকার করে কিন্তু অন্যদিকে কয়েক দশক ধরে হার্জেগোভিনা, চীনের জিঞ্জিয়াং, আফগানিস্তান, ইরাক, ইয়েমেন, সুদান, মায়ানমার, সিরিয়া এবং অন্যান্য দেশে মুসলিম গণহত্যার বিরুদ্ধে কখনোই আঙ্গুল তোলেনি।
এই কুখ্যাত সংস্থাটি মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষা কারিকুলামে জেন্ডারিজম, LGBTQ ও সমকামিতার মত পশ্চিমা মূল্যবোধগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কাজ করছে এবং জাতিসংঘ Gender equality এবং ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নামে ‘সমকামিতার অধিকার সমর্থনে প্রতিবছরই রেজিউলুশন পাস করে। সমকামিতার অধিকার প্রতিষ্ঠার এজেন্ডার বিষয়টি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটেই ফুটে উঠেছে (https://www.ohchr.org/en/sexual-orientation-and-gender-identity/about-lgbti-people-and-human-rights)। সুতরাং, জাতিসংঘ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী উপনিবেশ স্থাপন, দখল, গণহত্যা এবং মুসলিম ভূখন্ডে LGBTQ ও সমকামিতার মত পশ্চিমা মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার একটা উপনিবেশবাদী হাতিয়ার। এই কুখ্যাত সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কোন নজির নেই।
দেশের জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের অফিস খোলার চুক্তি করেছে, যা প্রমাণ করে এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী জনগণের ইসলামী আবেগ ও দেশের সার্বভৌমত্বের পরোয়া করেনা। তাই, নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পশ্চিমা উপনিবেশবাদী শক্তি ও জাতিসংঘের মত তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের অবসান ঘটানো সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব পশ্চিমা সমর্থিত সংস্কারপন্থী ও রাজনৈতিক দলগুলো মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করছে এবং জাতিসংঘের মত কুখ্যাত সংস্থার অনুপ্রবেশের বিরোধীতা করছে না বরং এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে তাদের রাজনৈতিক সংহতি পরিত্যাগ করতে হবে।
- কাজী তাহসিন রশীদ