খবরঃ
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে কর্তৃত্ববাদের পতন হলেও এক বছর আগে ছাত্র-জনতা যে প্রত্যাশা নিয়ে গণআন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তা পূরণ হয়নি৷ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার হয়নি৷ দেশকে গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শক্তিগুলো নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানগত কারণে বৈরি অবস্থানে যাওয়ায় সামাজিক বৈষম্য নিরসনে সরকারকে খুব একটা চাপে রাখতে পারেনি বলেও মত দিয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
(https://www.dw.com/bn/কর্তৃত্ববাদের-পতনেও-কমেনি-বৈষম্য/a-73326140)
মন্তব্যঃ
বৈষম্য বা যুলুম থেকে মুক্তির আশায় সাধারণ মানুষের রক্ত বন্যা বইয়ে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করা এবং অতঃপর বৈষম্য বা যুলুম দূর না হওয়া এটা নতুন নয়। এদেশে ১৯৬৯, ১৯৯০ তে আমরা একই বাস্তবতা দেখতে পেয়েছি। অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহতেও এমন অনেক ঘটনা দেখা গেছে, যার সবচেয়ে বিখ্যাতটি হলো ২০১১-১৩ সালে হওয়া ‘আরব বসন্ত’। এধরণের ব্যর্থতার কারণও অস্পষ্ট ও অঘোষিত নয়। বিপ্লব কিংবা গণঅভ্যুত্থানকে কেবলমাত্র অন্যায়ের প্রতিবাদ, স্বাধীনতা ও সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবী, প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মত দাবীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। বিপ্লবকে একটি সত্যিকারের পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সামগ্রিক আদর্শিক চিন্তার উপর প্রতিষ্ঠিত ‘রাজনৈতিক প্রকল্প’ থাকা আবশ্যক। সেই প্রকল্পে থাকবে জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিভংগী এবং এই দৃষ্টিভংগী থেকে উৎসারিত আইনী ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি এটা ভুলে গেলে চলবে না যে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের প্রকৃত ধারক হচ্ছে বিদেশী উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহ, তাই বিপ্লবোত্তর ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের মধ্যে উপনিবেশবাদীদের যে হাতিয়ারগুলো রয়েছে সেগুলো নির্মূল করাই হবে প্রথম কাজ।
এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসক হাসিনা বিদায় হলেও বিপ্লবোত্তর সরকারে কাফের উপনিবেশবাদীদের কর্তৃত্ব রয়ে গেছে, বরং নতুন করে বিশেষ করে আমেরিকার প্রভাব আরও বেড়েছে। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াও পরিচালিত হচ্ছে তাদেরই প্রকল্প অনুযায়ী। আমাদের বিপ্লবগুলোকে হাইজ্যাক করে যেকোন আমূল পরিবর্তনকে ঠেকানোর জন্য উপনিবেশবাদীরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে। তাদের প্রতিটি প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের ‘নিয়ন্ত্রণ ও স্বার্থ’ সুরক্ষা করা। এবং উপনিবেশবাদীদের ‘নিয়ন্ত্রণ ও স্বার্থ’ নিশ্চিত হওয়ার অর্থই হচ্ছে আমাদের জনগণের উপর বৈষম্য বা যুলুম চালু থাকা। অথচ আমরা জানি ইসলাম সকল যুলুমকে নিশ্চিহ্ন করে। ইসলামের যুলুম দূর করার সেই আদর্শিক রাজনৈতিক প্রকল্প হচ্ছে ‘খিলাফত ব্যবস্থা’। কারণ ইসলামে ‘শাসন’ ক্ষমতাধরদের খুশি করে ক্ষমতা ধরে রাখার একটি অবারিত সুযোগ নয়, বরং জান্নাত-জাহান্নামের সাথে সম্পৃক্ত করা একটি বিশাল দায়িত্ব। একইসাথে, খলিফার কোন আইনী ইন্ডেমনিটি নাই, তার উপরও পূর্ণাংগভাবে ইসলামি আইন প্রয়োগ হয়। এছাড়া মুমিনদের নিষ্ঠাবান জবাবদিহিতার চোখ খলিফাকে সবসময় পাহারা দেয়। অন্যদিকে উপনিবেশবাদীদের ব্যবস্থা শাসকগোষ্ঠীকে আইন প্রণয়নের স্বাধীনতা দেয় আর ইসলাম আইন প্রণয়নকে কেবলমাত্র আল্লাহ্ সুবাহানাহু তা‘আলার নিকট সীমাবদ্ধ করে দেয়।
বলাবাহুল্য দেশে যখন মানুষ বৈষম্য বা যুলুম থেকে মুক্তির জন্য বিপ্লব করছে। কাফির উপনিবেশবাদীরা নিজেদের ‘নিয়ন্ত্রণ ও স্বার্থ’ রক্ষায় গণতান্ত্রিক ধারায় (যেমন তিউনিসিয়া) হোক কিংবা কর্তৃত্ববাদী শাসকের (যেমন মিশর) মধ্যেমেই হোক কিংবা বিপ্লবকে গৃহযুদ্ধের দিকে (যেমন সিরিয়া, সুদান) নিয়ে গিয়ে হোক যেকোন মূল্যে মুসলিমদের পূর্ণাংগ বিপ্লবের প্রকল্প ‘খিলাফত’কে যেকোনভাবে ঠেকিয়ে রাখতে মরিয়া। তাই বৈষম্য বা যুলুম থেকে সত্যিকারের মুক্তির জন্য বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রশাসনের যেকোন প্রতারণামূলক উপনিবেশবাদী প্রকল্পের ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। এদের অনেকে এখন ইসলামের মোড়কে কল্যান রাষ্ট্রের কথা বলছে। অতীতে আমরা দেখেছি মিশরে তারা কিভাবে খিলাফতকে ঠেকানোর জন্য সাময়িক সময়ের জন্য একটি ইসলামি দলকে ক্ষমতায় আসতে দিয়েছিল। অর্থাৎ ইসলামের আদর্শিক রাজনৈতিক প্রকল্প খিলাফতের বাস্তবায়নের দিকে এই বিপ্লবকে না নিয়ে গেলে বিপ্লবকে চুড়ান্ত ব্যর্থতা থেকে বাঁচানো সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “…তারপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে যখন আল্লাহ্ সুবাহানাহু তাআলা চান; অতঃপর আবার আসবে খিলাফত- নব্যুয়তের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন