খবরঃ
আমার ছেলে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, পুরো কলেজে ফার্স্ট হয়। আমার ছেলে সবচেয়ে স্মার্ট— এটুকু বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই শিক্ষকের একমাত্র ছেলে সায়ান বিধ্বস্ত বিমানের আগুনে পুড়ে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। সায়ানের শরীরের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। রাত ৩টা ৫০ মিনিটে মারা যান সায়ান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘এটা কোনো দেশ হলো বলেন। লোকালয়ের ওপর দিয়ে কেন একটি ট্রেনিং বিমান চলবে? বলেন। ‘এ দেশে কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই।এ কারণে আমি আর এ দেশে থাকব না। আমার পুরো ফ্যামিলি এ দেশ থেকে চলে যাব। এদেশের পলিটিশিয়ানরা এদেশটাকে পলিউট করে ফেলছে। আমরা থাকব না এই দেশে’। (https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/07/22/1550615)
মন্তব্যঃ
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সন্তান হারানো শিক্ষক পিতার এই আর্তনাদ এবং প্রচন্ড ক্ষোভে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই ঘটনায় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শাসক ও রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের অনাস্থা ও ক্ষোভের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। শাসকগোষ্ঠীর উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টি আমরা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করছি। বাহ্যিকভাবে উদাহরণস্বরুপঃ আমরা লক্ষ্য করছি গাজায় আমাদের শিশুরা জ্বলন্ত আগুনে পুড়ে মরছে কিন্তু আমাদের দেশ সহ অন্যান্য মুসলিম শাসকরা তাদেরকে রক্ষায় উদাসীন ও দায়িত্ব
হীন থেকেছে। একইভাবে অভ্যন্তরীণভাবে আমাদের দেশেও বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশুরা পুড়ে মরছে কিন্তু শাসকেরা এ ব্যাপারে উদাসীন ও দায়িত্বহীন।
কিন্তু, এক্ষেত্রে জনগণের রাজনীতিবিমুখতা কিংবা দেশত্যাগ কখনোই সমাধান নিয়ে আসবে না, বরং শাসকগোষ্ঠীকে আরও বেপরোয়া করে তুলবে। রাজনীতি শুধু রাজনীতিবিদ ও শাসকদের কাজ নয়, বরং এতে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। শাসকগোষ্ঠী জনগণের ব্যাপারে উদাসীন হলে, জনগণের প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থ কিংবা জনগণের উপর যুলুম করলে জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে শাসককে জবাবদিহি করা এবং শাসকের বিরুদ্ধে হক্ব কথা বলার মাধ্যমে তার যুলুমের টুটি চেপে ধরা। “...সৎকাজের আদেশ করো এবং অসৎ কাজের নিষেধ করো...” [সূরা আলি-ইমরান: ১১০], প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয দায়িত্ব। ইসলাম শাসকদের জবাবদিহিতা করাকে আবশ্যক করেছে এবং অত্যাচারী শাসকদের সামনে হক্ব কথা বলাকে সর্বোত্তম জিহাদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “অত্যাচারী শাসকের সামনে হক্ব কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ” (তিরমিযী)। এই হাদীসটি শাসকের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ এবং যেসব শাসক জনগণের অধিকার হরণ করে অথবা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে কিংবা উম্মাহর যেকোন বিষয়াদি উপেক্ষা করে তাদেরকে কঠোরভাবে জবাবদিহি করার সুস্পষ্ট অর্থবোধক হাদীস। আমরা কি তাদেরকে এই জবাবদিহি করেছি যে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তারা কেন সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ক্রয় করেনি? আমরা কি তাদেরকে এই চাপ দিয়েছি যে তারা কোন যুক্তিতে বিমান বন্দরের রানওয়ের পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা গড়ে তোলার অনুমতি দিয়েছে? আমরা কি এসব রাজনীতিবিদদেরকে এই প্রশ্ন করেছি যারা নিজেদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠিকই সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যখাতকে তারা কেন জরাজীর্ণ অবস্থায় ফেলে রেখেছে? সামরিক ও স্বাস্থ্য খাতকে সংস্কার এবং অত্যাধুনিক করার পলিসি ও প্রস্তাবনা সম্পর্কে আমরা কি অন্তর্বর্তী সরকার ও ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছি? বরং, শাসক ও রাজনীতিবিদদেরকে এসব ব্যাপারে কঠোর জবাবদিহির পরিবর্তে নিষ্ক্রিয় ও নীরব থাকার অনিবার্য ফলাফলই আমরা ভোগ করছি একের পর এক এসব ট্র্যাজেডি ও জাতীয় বিপর্যয়ের সাক্ষী হওয়ায় মাধ্যমে। সুতরাং, উম্মাহ্ হিসেবে আমাদের সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের পরিধি হচ্ছে আমাদের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত উদাসীন এসব ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদেরকে অপসারণ করে তাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করা, এবং পাশাপাশি জনগণের প্রতি যত্নশীল ও দায়িত্ববান শাসক ও শাসনব্যবস্থা তথা আল্লাহ্ প্রদত্ত ইসলামী খিলাফতের শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা। শাসকদের ভয়ে ভীত হয়ে, রাজনীতিবিমুখ হয়ে, কিংবা তুচ্ছ দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিল কিংবা কোন পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে উম্মাহ্ হিসেবে আমাদের সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের শারীআহ্ দায়িত্ব উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “লোকের ভয় যেন তোমাদেরকে হক্ব কথা বলা হতে বিরত না রাখে যখন তা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়; সত্য বলা এবং সৎকর্ম করা কখনই মৃত্যুকে তরান্বিত করে না এবং রিজিককেও সংকুচিত করে না” (আহমদ, ইবনে হাব্বান, ইবনে মাজাহ)।
- কাজী তাহসিন রশীদ