খবরঃ
দেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এই আশ্বাস দেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে নেতারা যেখানেই ফ্যাসিবাদ, সেখানেই সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলার ঘোষণাও দিয়েছেন। (https://www.jugantor.com/national/981203)
মন্তব্যঃ
রাষ্ট্র যখন তার দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতার কারণে শিশুদের পরোক্ষভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল তারা এতগুলো শিশুর জন্য সরকারকে কড়া জবাবদিহিতা চাইবে। তারা জিজ্ঞেস করবে- গত এক বছরে কেন এখনো সরকার পর্যাপ্ত এম্বুল্যান্স দিয়ে আহতদের হাসপাতালে নেয়ার সুব্যবস্থা পর্যন্ত করতে পারল না? কেন নারী সংস্কারে প্রবল উৎসাহী সরকার রাষ্ট্রের সামরিক সংস্কারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালো না? কেন যৌনকর্মী ও এলজিবিটিকিউ-দের সরকারী অনুদান দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিষ্পাপ শিশুদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে জনগণের কাছে হাত পাতা লাগল? কেন আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রাজউক আর মাইলস্টোন কলেজ মিলে এরকম উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকায় শিশুদের স্কুল বানানোর জন্য কোন প্রকাশ্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলো না? কেন দাদার আমলের সামরিক প্রশিক্ষণ প্লেন এখনো আমাদের আকাশপথে উড়ছে? কেন জনবহুল এলাকায় বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে? এই একই বিমান এর আগেও একাধিকবার দুর্ঘটনায় পর্যবসিত হয়ে একাধিক সাহসী ও সম্ভাবনাময় পাইলটের করুণ মৃত্যু ঘটিয়েছে। তা নিয়ে তদন্ত হয়েছে, রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৈরি থাকা রিপোর্টে কেন মনোনিবেশ করলেন না যেটা রাষ্ট্রের জন্য খুবই স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ? কেন হাসিনার চলে যাওয়া ও হাসিনা থাকাকালীন কোন গুণগত পরিবর্তন জনমানুষের জীবনে এলো না?
কিন্তু তারা এই প্রশ্নগুলো না করে আহত শিশুদের এবং তার বাবা-মাদের সাথে সহমর্মিতার নাটক করেছে। ‘ভোটখোর’ ‘ফুটেজখোর’ গালি খেয়েও তারা দলবল নিয়ে আহতদের দেখার জন্য হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় বাঁধা তৈরি করেছে। দিনশেষে যেখানে সরকারকে জবাবদিহি করার দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল তা না করে সকলের সামনে হাসিনার নকল ভূত দেখিয়ে সরকারের সাথে একজোট বেঁধেছে।
ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলার রাজনীতি হল স্বার্থ ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি। এক বছর আগে যালিম হাসিনার প্রতি জনগণের ক্ষোভ ও আবেগকে তারা কাজে লাগিয়েছে, কিন্তু সেটা কতটা জনগণের স্বার্থে আর কতটা তাদের ক্ষমতার মসনদে বসার স্বার্থে তা সবারই জানা। বছর ঘুরতে না ঘুরতে, মানুষ যখন সরকারের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা নিয়ে জবাবদিহিতা করছে, তখন তাদের উচিত ছিল সরকারকে জবাবদিহিতায় জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়া। কিন্তু তা না করে তারা এবার জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার যুযুর ভয় দেখিয়ে। তাই সেক্যুলার রাজনীতি হল জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি। শুধুমাত্র স্বার্থ এবং ক্ষমতার রাজনীতি।
কিন্তু ইসলামে বিষয়টা অন্যরকম। ইসলামে রাজনীতি অর্থ হল – আভ্যন্তরীণভাবে জনগণের দেখভাল করা ও বহিঃশক্রর হাত থেকে রক্ষা করা। জনগণের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন খলিফা। আর খলিফা ও তার পরিষদকে জবাবদিহিতার দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলিমের। উম্মাহ্’র মতামত যেন খলিফা পর্যন্ত পৌঁছায় তার জন্য থাকে মজলিস-আল-উম্মাহ্। মজলিস-আল-উম্মাহ্-এর নিজস্ব কোন উদ্দেশ্য থাকে না ক্ষমতায় যাওয়ার। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থায় ক্ষমতায় যাওয়া মানে নিজের খুশিমত আইন বানানোর ক্ষমতা পাওয়া আর ইসলামে ক্ষমতা মানে আল্লাহ্’র হুকুমের সীমানা (হালাল-হারাম) রক্ষা করার দায়বদ্ধতা পাওয়া। যেহেতু নিজের খুশিমত আইন বানানো যায় না তাই এখানে নিজের স্বার্থ বলে কিছু থাকে না। জনস্বার্থ রক্ষাই হয়ে দাঁড়ায় একমাত্র লক্ষ্য। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে” [সূরা আলি-ইমরানঃ ১১০]
- জাবির জোহান