খবরঃ
দেশে গত এক দশকে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এর কোনোটিতে পাইলট আহত বা নিহত হয়েছেন। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এক দশকে একের পর এক প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার পরও মৌলিক পরিবর্তন আসেনি বিমান বাহিনীর বহরে কিংবা নীতিনির্ধারণে। যুক্ত হয়নি আধুনিক যুদ্ধবিমান। পুরনো প্রযুক্তির এয়ারক্রাফট দিয়েই চলছে বাহিনীর কার্যক্রম। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে তিনবারই ছিল এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান। বর্তমানে এ ধরনের বিমানের দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেছে অ্যারোস্পেস গ্লোবাল নিউজ (এজিএন)। [https://bonikbarta.com/bangladesh/7Lef4fHMoiFKUEcE]
মন্তব্যঃ
এই চিত্র শুধু বিমান বাহিনীর নয়, বরং সম্পূর্ণ সশস্ত্র বাহিনীর। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২২ সময়কালে অস্ত্র আমদানী আগের পাঁচ বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশের সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোনো কাঠামোতেই পড়ে রয়েছে। যুদ্ধপ্রযুক্তি বা প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জায়গাটি থেকে গেছে অবহেলিত।
ইংরেজরা যখন এই উপমহাদেশ দখল করে শাসন শুরু করলো, তখন তারা আমাদেরকে শোষণ-জুলুম করতে ব্যবহার করেছিল আমাদেরই লোক। কিছু লোককে তারা দালাল হিসেবে তৈরী করে এবং তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিল আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে। পরবর্তীতে উপমহাদেশের মানুষের বৃহৎ আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশরা উপমহাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেও, সুকৌশলে তারা জনগণের উপর তাদের দালালরূপী শাসকদের ক্ষমতায় বসাতে সক্ষম হয়। এজন্যই উপনিবেশবাদের ঐতিহ্য ধারণ করা ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা কিংবা দেশকে Super/World power করার কোনো ভিশন থাকে না। বরং তারা সামরিক বাহিনীকে ততটুকুই শক্তিশালী করে যতটুকুতে তার উপনিবেশিক প্রভুর স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকবে অথবা তার সেই প্রভু যতটুকু চাইবে। তাই, আজকে আমরা দেখতে পাই, ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্যের বেলায় মুসলিম সেনাবাহিনীকে অলসভাবে ব্যারাকে বসিয়ে রাখা হয়, কিংবা রাস্তাঘাট মেরামত করার কাজে তাদের পাঠানো হয়; এবং পশ্চিমাদের প্রয়োজনে তাদের স্বার্থ উদ্ধারে জাতিসংঘ মিশনে প্রেরণ করা হয়। তাই, সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার কোনো প্রচেষ্টা এই সকল শাসক থেকে কখনোই দেখা যায় না এবং যাবেও না। যতটুকু তারা করার কথা বলে বা দেখায় সেটা Outdated/ Phase out machineries ক্রয়ের মাধ্যমে জনগণের টাকা লুটপাট করে নিজেদের পকেটে নেয়ার জন্য কিংবা বিদেশীদের খুশি করতে তাদের prescribed arms and ammunition ক্রয় করে, যা পুরোটাই তাদের শর্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন।
বহিঃশক্তির আগ্রাসন মোকাবেলা এবং বিশ্বের বুকে নেতৃত্বশীল জাতি হতে একটি শক্তিশালী ও আধুনিক সামরিক বাহিনীর কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে, যাতে এটি সকল দ্বীনের (জীবনব্যবস্থার) উপর বিজয়ী হয়…” [সূরা আস-সফঃ ৯] এবং “আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থের মধ্য থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহ্’র শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন...” [সূরা আল-আনফালঃ ৬০] - এই আয়াতদ্বয়ের আলোকে এক সুবিশাল ও অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনী প্রস্তুত করতে বাধ্য; এবং সেই আধুনিকায়ন অন্য কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম কিনে নয়। কারণ তারা বিক্রি করা অস্ত্র, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং গোলাবারুদের ধরণ এবং পরিমাণের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বিদেশী নির্ভরশীলতা বন্ধ করে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সংগ্রহ ও উদ্ভাবনের ব্যবস্থা করবে। সামরিক সক্ষমতায় অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের সাথে সমান থাকার জন্য এবং এমনকি তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়ন ও অস্ত্র তৈরি করা বাধ্যতামূলক। কুরআন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৭ অনুযায়ী – “সামরিক বাহিনীকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চমাত্রায় সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে। এ বাহিনীর বুদ্ধিমত্তার মাত্রা যতোটা সম্ভব উচ্চমাত্রায় উন্নীত করতে হবে।” এবং অনুচ্ছেদ ৬৯ অনুযায়ী – “সামরিক বাহিনীকে ইসলামি সেনাবাহিনী হিসেবে দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য আবশ্যিকভাবে যথেষ্ট পরিমাণ যুদ্ধোপকরণ, সরবরাহ এবং যন্ত্রপাতি প্রদান করতে হবে।” ফলে, খিলাফত রাষ্ট্রের জন্য অস্ত্র এবং যুদ্ধ যন্ত্রপাতি এবং খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু নিজেই তৈরি করা বাধ্যতামূলক। এটি অর্জন করা সম্ভব নয় যদি না রাষ্ট্র সামরিক ও বেসামরিক উভয় ধরণের ভারী শিল্প উৎপাদনকারী কারখানা তৈরি করে। এর জন্য খিলাফত রাষ্ট্র প্রথমে সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ধরণের ভারী শিল্প উৎপাদনকারী কারখানা তৈরি করবে যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান, ট্যাঙ্ক, কামান, যুদ্ধজাহাজ, সাঁজোয়া যান, পারমাণবিক অস্ত্র, উপগ্রহ, মহাকাশযান তৈরি ও গবেষণা হবে। এভাবে অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনীর বিশাল এক বহর তৈরী করা সম্ভব হবে, যারা মহান দ্বীন ইসলামকে পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দিয়ে এটাকে সবার উপর বিজয়ী করবে, ইনশা’আল্লাহ।
- শামীর শাহাদাত