খবরঃ
ফিলিস্তিনিপন্থী গোষ্ঠী ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ সমর্থনের দায়ে জেল যেতে পারেন বৃটেনের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বৃটেনের তরফে এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ। এতে বলা হয়েছে, এই মাসের শুরুতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। .. সোমবার ওয়েস্ট মিনিস্টারে একটি বিক্ষোভে সমর্থন করার অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের হাতে ‘আমি গণহত্যার বিরুদ্ধে, আমি প্যালেস্টেনিয়ান অ্যাকশনকে সমর্থন করি’ লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরুর পর ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বৃটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়েছে। বৃটেনে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীকে সমর্থন বা এর সদস্য হলে সেক্ষেত্রে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। একটি চিঠিতে বৃটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভিভিয়েন স্টার্ন বলেছেন, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন দীর্ঘদিন ধরে সুপরিকল্পিত কৌশলে প্রতিবাদের আড়ালে শিক্ষার্থীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। (https://mzamin.com/news.php?news=169846)
মন্তব্যঃ
গাজায় অবৈধ দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের বর্বর হত্যাকান্ড ধর্ম-বর্ণ-মতবাদ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে ব্যাথিত করছে। সাধারণ মানুষ তাদের সক্ষমতার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদে যোমনঃ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, পণ্য বর্জনসহ ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ’প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ জনগণের চলমান অসংখ্য প্রতিবাদ আন্দোলনগুলোর একটি। আন্দোলনটি ২০২০ সালে গঠিত হয় যার লক্ষ্য— ইসরায়েলের ‘গণহত্যা ও বর্ণবাদী’ শাসনের সঙ্গে জড়িত বহুজাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিহত করা। তাদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে ব্রিটিশ ভূখণ্ডে অবস্থিত এমন অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা ইসরায়েলের জন্য সরবরাহ করে বিভিন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান Elbit Systems, ইতালিয়ান Leonardo, ফরাসি Thales এবং আমেরিকান Teledyne। পশ্চিমা লিবারেল গণতন্ত্রের আদি ধারক বলে গর্বিত বৃটিশ সরকার গণহত্যাকারী ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনটিকে সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে ‘টেরোরিজম অ্যাক্ট ২০০০’ এর আওতায় নিষিদ্ধ করে। উল্লেখ্য, এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত একটা বড় অংশ অমুসলিম এবং যাদেরকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে অপরাধী প্রমাণ করা খুব সহজ নয়। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের গণহত্যা বিরোধী সাধারণ নাগরিকদের এই আন্দোলনকে সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধ করে বৃটেন নিজেকে ইসরায়েলের গণহত্যার সহযোগী প্রমাণের সাথে সাথে পশ্চিমা লিবারেল গণতন্ত্রের পতন উপসর্গ প্রকাশ করলো। পশ্চিমারা যেসকল বিষয়কে তাদের আদর্শের মৌলিক আকীদা হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা‘। অথচ, তারা গাজার সম্মানীত মুসলিমদের হত্যার পক্ষ নিয়ে নিজেদের মূল বিশ্বাসকে কম্প্রমিইজ করছে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমাদের Rule Based World Order এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন তারা আর মানছে না। সাম্প্রতিক সময়ের অবৈধ ইসরায়েলের ইরানে আক্রমণ এবং ভারতের পাকিস্তান আক্রমণ নিয়ে উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রগুলো UN বা অন্যকোন প্লাটফর্মে কোন আলোচনা করে নাই। এমনকি, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো International Court of Justice এর রায়ে গণহত্যায় অভিযুক্ত নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করছে না। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ https://www.kalbela.com/world/middle-east/177673।
পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর শাসকগোষ্ঠীরা পশ্চিমা লিবারেল আদর্শ ত্যাগ করেছে। পশ্চিমের অমুসলিম সাধারণ জনগণও ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের’ মত আন্দোলনের মাধ্যমে পশ্চিমাদের ভ্রান্ত আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করছে। অথচ, দু:খজনক হচ্ছে, এদেশের শাসকগোষ্ঠীসহ মুসলিম বিশ্বের শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন মোড়কে পশ্চিমা লিবারেল আদর্শ জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তাদের জানা উচিত, জনগণ কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে কোন আদর্শ টিকে থাকতে পারে না। পশ্চিমা আদর্শের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। পশ্চিমা আদর্শের পতনের উপসর্গ যখন দৃশ্যমান তখন মুসলিমদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ দেখা যাচ্ছে। মুসলিমরা ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানের জন্য পশ্চিমাদের প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ বা দালালদের সংস্থা যেমনঃ ওআইসির কাছে যাচ্ছে না বরং তারা মুসলিম সেনাবাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের কাছে ফিলিস্তিন, আরাকান ও কাশ্মীর মুক্ত করার জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছে।
- মো: সিরাজুল ইসলাম