খবরঃ
আনুষ্ঠানিক কোনো বার্তা না পেলেও ট্রাম্প প্রশাসনের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কিছুটা কমবে বলে আশা করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার সদদচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করছি হয়তো কিছু কমাবে। কারণ, আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি খুবই কম, ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বুধবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির বিষয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য ‘বাংলাদেশের চূড়ান্ত অবস্থানপত্র’ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরে (ইউএসটিআর) পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূরীকরণসহ নানা ইস্যুতে একমত হওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনার জন্য ইউএসটিআরের কাছে ২৬-২৭ জুলাই আবারও সময় চেয়েছে বাংলাদেশ। (jugantor.com/tp-lastpage/981638)
মন্তব্যঃ
আমেরিকার মাস্তানীসুলভ তথাকথিত পাল্টা শুল্কের বিপরীতে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মুসলিমদের ছোট করেছে। ট্রাম্পের ভাষায় বলতে গেলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও অনান্য দালাল শাসকদের মত তার ‘পশ্চাদ্দেশে চুমু’ খাওয়ার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের এই কাজ শুধু যে জাতিকে ছোট করেছে তা নাই বরং তাদের এই অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে, শুল্ক পুনঃবিবেচনার জন্য আমেরিকা একটি সামগ্রিক ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি দাবি করছে, যার মধ্যে জ্বালানি এবং নিরাপত্তার মত অতিসংবেদনশীল বিষয়ও অর্ন্তভুক্ত। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চাচ্ছে, সেখানে তাদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় আছে: জ্বালানি উপদেষ্টা, টিবিএস, জুলাই ১৩, ২০২৫)। আশংকার বিষয় হচ্ছে, চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে একটি চুক্তি করেছে যা জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শেষে যে চুক্তি হবে, তা প্রকাশ করা যাবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা, অর্থসূচক, জুলাই ১৪, ২০২৫)। অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাবে, কিন্তু দেশ এবং জনগণ কি আমেরিকার সাথে সম্পাদিত চুক্তির বাহিরে যেতে পারবে? তারা কি ভারতের সাথে সম্পাদিত হাসিনা সরকারের দেশবিরোধী এবং নতজানু চুক্তি বাতিল করতে পেরেছে?
বাস্তবতা হচ্ছে, পাল্টা শুল্কের সব থেকে বেশী ভুক্তভোগী হবে গার্মেন্টস সেক্টর। সস্তা গার্মেন্টস পণ্যের জন্য আমেরিকা আমাদের উপর নির্ভরশীল। আমেরিকা এর থেকে সস্তায় আর কোন দেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য কিনতে পারবে না। তাই শুল্কবৃদ্ধির প্রভাবে আমেরিকার ভোক্তারাই বেশী দামে গার্মেন্টস পণ্য কিনতে বাধ্য হবে। ফলে আমেরিকার জনগণই আমরিকার সরকারকে সিদ্ধান্ত বদলাতে চাপ দিবে। কিন্তু, আমেদের নির্বোধ শাসকেরা এই বাস্তবতা না বোঝে আমেরিকার নিজস্ব দুর্বলতাকে আমাদের উপর আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দিচ্ছে।
কোন একটি নির্দিষ্ট সময়, মুসলিমরা কাফিরদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় নাও থাকতে পারে, কিন্তু মুসলিম শাসকরা কখনোই নতজানু ছিলেন না। উদাহরণস্বরূপ, খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের সময় খিলাফতের নিজস্ব টাকশাল ছিল না। মুসলিমরা রোমানদের মুদ্রা ব্যবহার করতো। একবার, খলিফা রোমান সম্রাটের কাছে একটি চিঠি লিখেন যাতে ইসলামী রীতি অনুসারে তিনি কালেমায় তাওহিদ ও দরুদ শরিফের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য শুরু করেন। রোমান সম্রাট ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন,‘ আপনি চিঠির শিরোভাগে কালেমায়ে তাওহিদ ও দরুদ লিখবেন না। কেননা এটা আমাদের কাছে অপছন্দনীয়। যদি আপনি এই রীতি ত্যাগ না করেন তাহলে আমরা আমাদের টাকশালে এমন সব দিনার ও দিরহাম ঢালাই করব, যেগুলোতে এমন সব অপমানকর কথা লিপিবদ্ধ থাকবে, যা আপনাদের কাছে বিরক্তিকর ঠেকবে।’ এই চিঠি পড়ে খলিফা আব্দুল মালিকের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তিনি নিজস্ব টাকশাল স্থাপন করেন এবং রোমান মুদ্রা ব্যবহার বন্ধ করে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী মুদ্রা চালু করেন। এটাই ছিল একজন মুসলিম শাসকের কাফির সম্রাটের উদ্ধত্যপূর্ণ মাস্তানির জবাব। কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন, “..এবং কিছুতেই আল্লাহ্ মু’মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে বিজয়ী করবেননা” [সূরা আন-নিসা ১৪১]।
- মো: সিরাজুল ইসলাম