কেউ যদি নির্বাচনের বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক: প্রধান উপদেষ্টা

 


খবরঃ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছেন, সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর বাসভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।… তিনি বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। কেউ যদি নির্বাচনের কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে এই জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক’।(https://www.prothomalo.com/politics/5f08e4v84x)

মন্তব্যঃ

অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক স্রষ্টা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা বহাল রেখে, নির্বাচনের আয়োজন করে জাতিকে আবারও কোন এক জালিমের হাতে তুলে দিয়ে বিপদে নিমজ্জিত করা হচ্ছে। কারণ বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হচ্ছে একটা প্রতারণার ফাঁদ, যেখানে জনগণকে এই বলে বুঝ দেওয়া হয় যে, ‘তারা রাষ্ট্রের মালিক’, ‘তারা বা তাদেরই প্রতিনিধিরা আইন প্রণেতা’, ‘তারাই শাসক নির্বাচন করে’ ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ সীমাবদ্ধ। এই সীমাবদ্ধ মানুষ কখনো অন্য মানুষের বাস্তবতা বুঝবে দূরে থাক, তার নিজের বাস্তবতাও অনেক সময় সে বুঝতে অক্ষম। তাই তাকে আইন বা বিধান প্রণয়ন ও কার্যকর করতে দেওয়া হলে, সে এমন আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করে, যেন সবার আগে তার স্বার্থ উদ্ধার হয়। যেমন, এদেশে ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজেদের স্বার্থে ১৯৭৪ সালে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’-এর মত বিভিন্ন আইন করে জনগণকে গুম-খুন-নির্যাতন করার বৈধতা নিয়ে নেয়, যা পরবর্তী কোন ক্ষমতাসীনরাই বাতিল করেনি। অর্থাৎ এখানে নির্বাচন আয়োজনই করা হয়, জনগণ যেন নিজেরা ঠিক করে নেয়, কোন জালিম তাদেরকে শাসন করবে। যেই জালিম ৪-৫ বছরের জন্য জনগনের মালিক হয়ে যাবে। যা খুশি তাই করবে এবং সুযোগ থাকলে তার ক্ষমতা আরও প্রলম্বিত করবে। বিগত হাসিনা সরকার তার উৎকৃষ্ট উদাহরন।

আবার আমাদের দেশের আইনের বা বিধানের ভিত্তি যেখানে উপনিবেশবাদী ‘ব্রিটিশ সংবিধান’ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান নব্য-উপনিবেশিক মার্কিন প্রভাব যেখানে প্রবল, সেখানে অবস্থাতো আরো ভয়াবহ। এখানে আইন প্রণয়ন বা বিধান কার্যকরের ক্ষেত্রে মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের স্বার্থকে জনগণের স্বার্থের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়। এ কারণে এদেশে পিলখানা সেনা অফিসার হত্যার বিচার করা হয় না, কিংবা বিগত সরকারগুলোর আমলে করা ভারতের সাথে দাসত্বের চুক্তিসমূহ বাতিল হয় না, অথবা বিশ্ব ব্যাংকের ‘স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট’ পলিসি অনুযায়ী মার্কিন ও ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে উৎপাদন বন্টন চুক্তি অনুসারে মূল্যবান গ্যাস সম্পদ লুটের সুযোগ দেওয়া হয়।

তাই বর্তমান ব্যবস্থার অধীনে, নির্বাচন হোক বা না হোক, জাতি ইতিমধ্যে গভীর বিপদে নিমজ্জিত অবস্থায় আছে। জাতি একের পর এক জালেমের খপ্পরে পড়ছে। আর এই বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র ইসলামী ‘খিলাফত’ ব্যবস্থা, যেখানে সীমাবদ্ধ মানুষের হাতে আইন বা বিধান প্রণয়নের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় না। সরাসরি আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়া তা’য়ালা কর্তৃক প্রদত্ত আইন ও সংবিধানই এখানে বাস্তবায়ন করা হয়। এই ব্যবস্থায় শাসক নির্বাচনের ভিত্তি হচ্ছে, কে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা’র বিধানগুলোকে সবচেয়ে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে- তার উপর ভিত্তি করে। এখানে শাসক জনগণের অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হন, যিনি জনগণের উপর কখনও জুলুমতো করেনইনা, বরং জনগণ তাদের অধিকার ভুলুন্ঠিত হলে শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারবে। আর আল্লাহ্‌’র (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) বিধানে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, মুসলিমদের শত্রু রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব না করার ব্যাপারে। তিনি (সুবাহানাহু ওয়া তা’য়ালা) বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না…” (মুনতাহিনাঃ১)। তাই খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করলে একদিকে যেমন, মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের মতো শত্রুরা আমাদের উপর কর্তৃত্ব করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে না, অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী সীমাবদ্ধ মানুষেরও আইন তৈরি করার রাস্তা বন্ধ হবে। ফলে জনগণও যুলুমের শিকার হবে না। 

    -    মো: জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post