খবরঃ
এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। ...বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। (www.prothomalo.com/politics/tu3fv5jfsi )
মন্তব্যঃ
২০২৪ এর ৫-ই আগস্ট জালিম শেখ হাসিনার ১৫ বছরের জুলুমের শাসনের অবসানের মধ্যে দিয়ে জনগণের বিপুল আশা-আকাঙ্ক্ষায় ভর করে আসা অন্তর্বর্তী সরকার গত একবছরে জনগণের আশা-আকাংখার খুব বেশি প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকার যেমন বিরোধীমত কিংবা জনরোষকে দমন এবং সামাজিক মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা বন্ধে “সাইবার অপরাধ, গুজব, ‘রাষ্ট্রবিরোধী’, ফেক নিউজ রোধ”, সার্বভৌমত্ব বিরোধী কর্মকান্ডের সমালোচনা রোধে “উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত…”, বিরোধীদলকে দমনে “বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্র বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির অপতৎপরতা” এবং ইসলামকে দমনে “জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা” নামক ন্যারিটিভ দাঁড় করিয়ে জনগণের উপর বছরের পর বছর দমন নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে ঠিক তেমন চিত্র আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের মাঝে দেখছি। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক হচ্ছে, গত সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে ৩৫ জন নিহত এবং ১৬০ জনের মত ভয়াবহ দগ্ধ হওয়ার বিপরীতে সরকারী অব্যস্থাপনা এবং দায়িত্বহীনতার দরুন যখন জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও জনরোষ তৈরি হয়, তখন আমরা দেখতে পাই ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিষয় বাদ দিয়ে বৈঠক করে বলছেন, “ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার... এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে”, “পতিত শক্তি নির্বাচনের আয়োজনকে ভন্ডুলের চেষ্টা করছে”...ইত্যাদি। শেখ হাসিনা সরকার বিতাড়িত হলেও তার লিগ্যাসি ইউনূস সরকার ঠিকই ধরে রেখেছেন। শেখ হাসিনা যে কালো আইনগুলোর মাধ্যমে বিরোধীমত বা দলকে নানান ন্যারিটিভ তৈরি করে দমন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার তার কোনটিই এখনো বাতিল করেননি।
মূলত, রাষ্ট্রীয় ন্যারিটিভ তৈরি করে জনগণকে দমন-নিপীড়ন ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটা মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে, শাসকগোষ্ঠীর কিছু প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে, (১) প্রচারণা বা প্রপাগান্ডা (Propaganda)-এক্ষেত্রে, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্য বিকৃত করে বা একতরফাভাবে উপস্থাপন করে জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। (২) নিয়ন্ত্রিত বয়ান(Controlled Narrative)-যেখানে সরকার ভিন্নমতকে "রাষ্ট্রবিরোধী", "ষড়যন্ত্র", "উগ্রপন্থী", "বিদেশি এজেন্ডা" ইত্যাদি বলে আখ্যা দেয়। (৩) কলঙ্কিতকরণ (Demonization) এ পদ্ধতিতে সরকার ভিন্নমতের ব্যক্তিদের বা গোষ্ঠীগুলোকে সমাজের শত্রু, নিরাপত্তার হুমকি, বা অরাজকতা সৃষ্টিকারী হিসেবে উপস্থাপন করে। এবং (৪) জাতীয় নিরাপত্তা যুক্তি (National Security Excuse )- সরকার এক্ষেত্রে ভিন্নমত দমনকে বৈধ করতে, “জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে”, “স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য”, “উন্নয়নের পথে বাধা রোধের জন্য” যুক্তি দাড় করায়। হাসিনা সরকার এমনটিই করেছিলো এবং ড. ইউনূস সরকার ব্যতিক্রমহীনভাবে তাই করছে।
এমন দমন-নিপীড়নের যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাতে আমরা বারংবার আটকাচ্ছি এর থেকে রক্ষা পেতে দরকার এমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা যা জনগণকে জুলুমের বিরুদ্ধে হক কথা বলতে, শাসককে জবাবদিহিতা করতে বাধ্যতামূলক করেছে। পাশাপাশি, শাসকের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে জনগণের দেখশোনা সুষ্টুভাবে পরিচালনা করার। আর তা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর বরকতময় হাত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আল্লাহ্ প্রদত্ত ইসলামি রাষ্ট্রীয় তথা খিলাফত ব্যবস্থা। ইসলামে “সর্বোত্তম জিহাদ হলো জালিম শাসকের বিরুদ্ধে হক কথা বলা”। (তিরমিজি)। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেছেন: "যে শাসক ইনসাফ করে, তাকে সাহায্য করো। আর যে জুলুম করে, তাকে রুখে দাও। এটা তার সাহায্যই বটে”
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম