মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত ২২, আহত দেড় শতাধিক

 


খবরঃ 

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শিক্ষার্থীসহ অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/accident-fire/news-687626)।

মন্তব্যঃ  

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অসংখ্য নিহত এবং আহত হওয়ার এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। এই ঘটনাটি শুধুই একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত দায়িত্ব অবহেলার বহিঃপ্রকাশ, যা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অন্তর্নিহীত বৈশিষ্ট্য। প্রশ্ন জাগে, প্রায় পাঁচ কোটি জনগণের ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরের আকাশে কীভাবে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ বিমান উড়তে পারে? বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ছাত্র-ছাত্রীদের স্বজনরা তাদের সন্তানদের পোড়া শরীরে পানি ছিটানোর জন্য পানি কিনতে গেলে এক লিটার পানির দাম ৬০০ টাকা, সন্তানদের হাসপাতালে নিতে বাহন খুঁজতে গেলে একটি সিএনজির ভাড়া ১,০০০ টাকা, একটি এ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। এর কারণ, সরকার তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় জরুরি সেবা প্রদান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অথচ, আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক দলের আন্দোলনকারীদের উপর শীতল পানি ছিটিয়েছে! এটি স্পষ্ট যে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেবলমাত্র ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, জনগণের জীবনের মূল্য এদের কাছে একেবারেই নগণ্য। এই ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী কেবল অর্থ, পদমর্যাদা, ক্ষমতা ও তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যস্ত থাকে। তারা জনগণের দেখাশোনার ব্যাপারে এতটাই উদাসীন যে, এখনো ১৯৬৬ সালের সোভিয়েত আমলের তৈরি এফ-৭ যুদ্ধবিমান সামরিক প্রশিক্ষণে ব্যবহার করছে যা প্রতিনিয়ত বিদ্ধস্ত হয়ে জনজীবনকে বিপন্ন করছে (দেখুনঃ “৩৪ বছরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ৩২টি বিমান দুর্ঘটনা” ইত্তেফাক, ২১ জুলাই, ২০২৫), অন্যদিকে এসব বিমান বহিঃশক্তির সামরিক হুমকির মুখে একেবারেই অকার্যকর। আমরা দেখেছি, পতিত হাসিনা আমেরিকা, ভারত এবং ব্রিটেনের প্রতি নতজানু নীতি গ্রহণ করেছিলো। তাই, দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্যবহার করে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বদলে মাতারবাড়িতে আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক প্রকল্পের অংশ হিসেবে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করলেও আমাদের সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণে কোনো সামরিক কারখানা কিংবা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান অন্তর্বকালীন সরকারও হাসিনার মত উপনিবেশবাদী মার্কিনীদের প্রতি নতজানু নীতিতে হাটছে। যেমন, বিডা (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান, চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেছে, আমাদের আর “ট্যাঙ্ক, স্পেসশিপ বা ফাইটার জেট” তৈরির প্রয়োজন নেই (Jagonews24.com, ৯ এপ্রিল, ২০২৫)। এ থেকে স্পষ্ট যে, স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের জীবনের নিরাপত্তা মুখ্য বিষয় নয় বরং শাসকগোষ্ঠির স্বার্থ এবং উপনিবেশবাদীদের স্বার্থরক্ষাই মুখ্য বিষয়। 

অথচ, ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থা জনগণের দায়িত্বকে ইবাদত হিসেবে দেখে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “ইমাম বা খলিফা হচ্ছেন রাখালের মতো, তিনি তাঁর অধীনস্থদের জন্য দায়িত্বশীল” (সহীহ বুখারী) । খলিফা উমর (রা.) বলেছেন: “ফোরাত নদীর তীরে যদি একটি কুকুরও হোঁচট খেয়ে মারা যায়, তাহলে আমি মনে করি আল্লাহ্‌ এর জন্য উমরকে জিজ্ঞেস করবেন।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের নিরাপত্তার পাশাপাশির  পশুপাখির নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করে। সুতরাং, মাইলস্টোন কলেজের এই করুণ বিমান দুর্ঘটনা শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনা নয়; এটি একটি ব্যর্থ শাসনব্যবস্থার নগ্ন প্রকাশ। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বদলে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শাসনব্যবস্থা খিলাফতই হতে পারে দেশের জনগণের জন্য প্রকৃত মুক্তির পথ। 

    -    মোঃ জাফর আহমেদ


Previous Post Next Post