বাংলাদেশের সাথে নিরাপত্তা বিষয়সহ ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র : জ্বালানি উপদেষ্টা


খবরঃ

নিরাপত্তা বিষয়সহ বাংলাদেশের সাথে প্রথমে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এরপর ট্যারিফ (শুল্ক) ও নন-ট্যারিফ (অশুল্ক) বিষয়ে আলোচনা হবে… (https://dailynayadiganta.com/printed-edition/ZfMmTdpoL6UK)

মন্তব্যঃ

একটি রাষ্ট্রের শাসক গোষ্ঠী যতদিন রাষ্ট্রটিকে ‘subservient state’ বা অনুগত রাষ্ট্র বানিয়ে রাখবে, ততদিন ‘বিশ্ব-মাস্তান’ আমেরিকা এভাবেই সুযোগ নিবে। আমরা দেখেছি, আমাদের শাসকগোষ্ঠী উপনিবেশবাদীদের আদেশে যুগের পর যুগ ধরে আমাদের অর্থনীতিকে পরনির্ভরশীল বানিয়ে রেখেছে। তারা উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ এর ঋণের শর্ত হিসেবে এ দেশের সম্ভাবনাময় পাট শিল্পকে ধ্বংস করে পরনির্ভরশীল পোশাক খাতের বিকাশ ঘটিয়েছে, যেখানে কাঁচামাল, মেশিনারিজ থেকে শুরু করে এমনকি উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। যেমন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, ৩,৬১৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানির বিপরীতে ১৪৪০ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছিল, যা মোট রফতানির প্রায় ৪০%। এই পরনির্ভরশীলতা এতটাই ভয়াবহ যে, সামান্য শুল্ক বাড়িয়ে দিলে এখানে লক্ষ লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়ে। এবং তারপর সেই বেকারত্ব ঠেকাতে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিতে হয়। যেমন, বর্তমানে আমেরিকা শুল্কের ফাঁদে ফেলে তথাকথিত নিরাপত্তা চুক্তির নামে (যেসব চুক্তিতে সামরিক ইকুইপমেন্ট, উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ ক্রয়, বন্দর, সাইবার সিকিউরিটির মতো সার্বভৌমত্বের জন্য স্পর্শকাতর বিষয়গুলো রয়েছে) দেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। 

আমাদের শাসকগোষ্ঠী মার্কিনীদের সাথে এ ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে মার্কিনীদের নির্লজ্জ দালাল হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যেখানে এ ধরনের শাসকদেরকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছে ‘They are kissing my ass’। এ সকল নির্লজ্জ শাসকগোষ্ঠী একদিকে আমাদের সাথে প্রতারণা করছে এই বলে যে ‘তারা জনগণের সেবক’, ‘রাষ্ট্রের মালিক জনগণ’ অন্যদিকে তারা বলছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শেষে যে চুক্তি হবে, তা প্রকাশ করা যাবে না’। মূলত তারা এ ধরনের নির্লজ্জ কাজ করতে পারছে বর্তমান স্রষ্টা বিবর্জিত এই সেকুলার রাজনৈতিক ব্যবস্থার কারণে। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের শাসকদেরকে জবাবদিহিতা করার কিংবা তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে জনগনের প্রশ্ন তোলার কোন প্রাতিষ্ঠানিক উপায় নেই। 

তাই এসব সার্বভৌমত্ব বিনাশী ও পরাশক্তিসমূহের সাথে গোলামী চুক্তিসমূহের অবসানের জন্য এবং পরাশক্তিসমূহের দালাল শাসকদের থেকে পরিত্রানের জন্য, আমাদেরকে এমন শাসন ব্যবস্থার অধীনে শাসিত হতে হবে যেখানে পদ্ধতিগতভাবেই শাসকদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়। এক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আদিষ্ট ‘খিলাফত’ শাসন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এই শাসন ব্যবস্থায় ‘মজলিস আল উম্মাহ’ (জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান, যারা শাসকদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করে), বিচার ব্যবস্থার মাজালিম আদালত এবং জনগণের মধ্যে প্রোথিত ‘আমর বিন মারুফ, ওয়া নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ’র সংস্কৃতি, সর্বোপরী আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নিকট জবাবদিহিতার ভয় শাসকদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। এ কারণে শাসক জনগণের প্রকৃত অভিভাবকের ন্যায় দেশের অর্থনীতিকে ও সার্বভৌমত্বকে উপনিবেশবাদী বা কুফর শক্তির আধিপত্য থেকে মুক্ত করে আত্মনির্ভরশীল গড়ে তোলে। যেমন, ইতিপূর্বে খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে থাকাকালীন সময়ে ভারতবর্ষের জিডিপি ছিলো সমগ্র বিশ্বের জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ। আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র হওয়ার সাথে সাথে এই রাষ্ট্র কুফর শক্তিগুলোকেও পদানত করে। ইতিহাস সাক্ষী, এই খিলাফত ব্যবস্থা রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) এর পবিত্র হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছোট্ট ‘মদিনা’ নামক রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সমগ্র কুফর শক্তিসমূহকে পরাজিত করে একক ইসলামি ভূখণ্ড গড়ে তুলেছিল।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post