ভারত কেবল মুসলিমদের ‘বিদেশি’ বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাচ্ছে

 

\

খবরঃ

ভারত থেকে বাংলাদেশে যাঁদের ঠেলে পাঠানো হচ্ছে তাঁরা মুসলিম এবং বাংলাভাষী। আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভুক্তভোগীদের অবস্থা নিয়ে ২৪ জুন আল–জাজিরার প্রতিবেদনে এসব বলা হয়। গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের ঘটনার পরই ভারতে মুসলিম ধড়পাকড় বেড়ে যায়। তথাকথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে মুসলিমদের বিতাড়নের প্রচার-প্রচারণা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। (https://www.prothomalo.com/world/india/7e69ylxjnl)

মন্তব্যঃ

উপরের খবরে এটা স্পষ্ট যে, ভারত-বাংলাদেশ বিষয়টির সাথে ইসলাম ও মুসলিম বিষয়টি আলাদা করার কোন সুযোগ নাই। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নীতি ঠিক করতে গেলে বিষয়টির বৈশ্বিক কৌশলগত রুপও অনুধাবন করা প্রয়োজন। মানচিত্র ও জনসংখ্যার বিন্যাস, ইতিহাস ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশল এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখলে এটা সহজেই বুঝা যায় যে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের অবস্থান ও মধ্যএশিয়া হতে দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলে ভারতের অবস্থান ঠিক সেরকমই। উভয়ই ‘মুসলিম ভুমি’ অর্থাৎ একসময় ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফতের অংশ ছিল। বৃটিশরা উভয়কে দখল করে মুসলিমরা যাতে পূনরায় ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সেজন্য একই প্রকৃতির দুটি ‘প্রক্সি রাষ্ট্র’ তৈরি করে। পরবর্তীতে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং নিজেদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে ইসরাইল এবং ভারত উভয়কে যমজ বোনের মত ব্যবহার করেছে। আমেরিকার Indo Pacific Strategy, National Security Strategy সহ নানা কৌশল নির্ধারণী দলিলে এবং US-Israel Strategic Partnership Act, QUAD, 2+2 Dialogue ইত্যাদি অংশিদারিত্ব দলিলে এটা স্পষ্ট করে বলা আছে। 

আমেরিকা তথা পশ্চিমা কাফিরদের স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের ভুমিকা যেভাবে এখন পরিপক্ক হয়েছে এই অঞ্চলে ভারতের ভুমিকাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিশেষত এই অঞ্চলে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রকল্প খিলাফতের দাবী যত বাড়ছে, আমেরিকার হয়ে ভারতের মুসলিম নিধন তত স্পষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগে ভারতে এসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড এই অঞ্চল নিয়ে বলে, “ইসলামী সন্ত্রাসবাদীরা নানা দেশে 'ইসলামী খেলাফতে'র আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায়– কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ”। আমেরিকার এই লক্ষ্য পূরণে ভারত এঅঞ্চলে ইসরাইলের মত একই ধরণের পদ্ধতিতে এবং অংশিদারিত্বে কাজ করছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক আজাদ এসার লিখিত বই “Hostile Homelands: The New Alliance Between India and Israel”-এ এরকম অংশিদারিত্বের নানা দিক উঠে আসে। দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র বাণিজ্য, যৌথ অস্ত্র উৎপাদন, নজরদারি প্রযুক্তি এবং যৌথ সামরিক মহড়া মুসলিম নিধনে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI) এর তথ্য মতে, ২০২১ সালে ইসরাইলের মোট অস্ত্র রপ্তানির ৪৩% ভারতে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ এবং ইসরাইল-ইরান যুদ্ধে আমেরিকার লক্ষ্য অর্জনে ভারত ও ইসরাইলের ভুমিকা এবং এই লক্ষ্য পূরণে দেশদুটির পারস্পারিক সম্পর্কের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ইরান ইতিমধ্যে মোসাদকে সহযোগিতার অভিযোগে অনেক ভারতীয়কে গ্রেফতার করেছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই দুই জাতির ব্যাপারে বলেন, “আপনি অবশ্যই ইহুদী এবং মুশরিকদেরকে মুসলিমদের প্রতি শত্রুতায় সমগ্র মানবমন্ডলীর মধ্যে সবচেয়ে কঠোর পাবেন” [সূরা আল-মায়েদাঃ ৮২]। 

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শাসকরা যেমন ফিলিস্তিনসহ আশপাশের দেশসমূহের মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। একইভাবে এই অঞ্চলের শাসকগোষ্ঠীও ভারত, মিয়ানমার এবং দেশের ভিতরের মুসলিমদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে মুসলিমদের কঠোর শত্রু ভারত ও তাদের সর্দার আমেরিকার নানা ভুরাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রকল্পে একসাথে কাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান আমেরিকার সাথে এবং ভারতের সাথে বৈঠক করছে। খলিল ও প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আমেরিকান প্রকল্প যেমন ‘রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিপীড়নকারী আরাকান আর্মিকে সহায়তা করা’ ও ‘মুসলিম নিধনকারী ভারতের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা’ ইত্যাদি কাজ করার জন্য নানা সমঝোতা করছে। অথচ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর হাদিস অনুযায়ী মুসলিমের এক ফোঁটা রক্তের মর্যাদা কা’বার চেয়ে বেশী। এই ঈমানী দায়িত্ব পালনে ও পবিত্রতা রক্ষায় এই বিশ্বাসঘাতক শাসকগোষ্ঠীকে সরিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আমাদের জন্য আর কোন দ্বিতীয় রাস্তা নাই। খিলাফত মুসলিমদের সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তি যা আমেরিকা-বৃটেনসহ পশ্চিমা কাফেরগোষ্ঠী এবং ইসরাইল-ভারতের মত মানবতাবিরোধী শয়তানী কোয়ালিশনের হাত থেকে পুরো মানবজাতিকে উদ্ধার করবে। 

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন


Previous Post Next Post