খবরঃ
সংবিধানের ৪৯(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা আইন ও নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রর্দশনের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রধান করে ৬ সদস্যের বোর্ডের প্রস্তাবে সব দল একমত হতে পারেনি। এ বিষয়ে দলগুলো বলছে, নির্বাচিত সংসদে এই আইনের কাঠামো ও বোর্ড সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার অষ্টম দিনের বৈঠকে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-683836)
মন্তব্যঃ
একটি বিচারের জন্য মেজিস্ট্রেট কোর্ট, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পর্যায়ক্রমিক এতগুলো ধাপ পার হয়ে কেউ কোন অপরাধে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর সেই অপরাধীকে যদি রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিতে পারে, তাহলে দেশে ‘বিচার বিভাগ’ থাকার দরকার কী? সেই ক্ষমা যতই আইন ও নীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করা হোক না কেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করে দেওয়ার এখতিয়ার থাকা মূলত বিচার বিভাগের অস্তিত্ব না থাকারই সমার্থক। আর এই ক্ষমা করার এখতিয়ার বলবৎ রাখার ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হয়ে প্রমাণ করেছে, ন্যায়ের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে এরা সবাই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দেউলিয়া অথবা এদের দলীয় সন্ত্রাসীরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে। উভয় ক্ষেত্রেই এরা জনগণের অভিভাবক হওয়া ও নেতৃত্ব প্রদানের অযোগ্য হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে।
মেজিস্ট্রেট কোর্ট, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ এই পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো রাখার পিছনে সেকুলারদের যুক্তি হল কেউ যেন ন্যায়-বিচার বঞ্চিত না হয়। বাস্তবে এই বিচারব্যবস্থা শুধুমাত্র অর্থ ও ক্ষমতার মালিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে ব্যবহৃত হয়। কেননা, এই অথর্ব সেকুলার বিচার ব্যবস্থায় অর্থ ও ক্ষমতার মালিকরা ছাড়া কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রতিকার এফোর্ড করতে পারে না। এরপরও দলীয় সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ অপরাধ করে পার না পেলে তার ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হয় রাষ্ট্রপতি স্বয়ং! বিগত সময়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পাওয়াদের পরিসংখ্যান দেখলেই বিষয়টি ষ্পষ্ট হয়ে যায়। এর বিপরীতে, সাধারণ মানুষ এই নিম্ন-উচ্চ আদালতের গন্ডি ও গোলকধাঁধার মধ্যে বছরের পর বছর ঘুরপাক খায় ও সহায়-সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়। এই পর্যায়ক্রমিক বিচার প্রক্রিয়ার উচ্চ আদালত চাইলে নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে দিতে পারে; তাহলে জনগণের টাকা ব্যয় করে নিম্ন আদালত রাখার দরকার কী? মূলত এই সেকুলার বিচার ব্যবস্থা নিজেকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি কিংবা মহাকাশের ‘ব্ল্যাকহোল’ হিসেবে প্রমাণ করেছে যেখানে ন্যায়বিচার পাবার আশায় এই ‘ব্ল্যাকহোল’ রূপী বিচার ব্যবস্থায় অতল গহ্বরে জনগণ তাদের অর্থ-সময়-জীবন-যৌবন সমস্ত কিছুই হারিয়ে ফেলে, কিন্তু ন্যায় বিচারের দেখা পায় না।
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুর‘আনে বলেন: “আর যারা আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না তারাই জালিম” (সূরা মায়িদা: ৪৫)। আল্লাহ্’র নাযিলকৃত বিধানের (কুর‘আন, সুন্নাহ্, ইজমা আস-সাহাবা ও ক্বিয়াস) মধ্যে মানুষের বিবাদ মিমাংসার জন্য বিচার্য বিষয়ের বিভিন্ন সুষ্পষ্ট সমাধান ও মানদন্ড যেমন রয়েছে তেমনি বয়েছে বিচার ব্যবস্থার সুষ্পষ্ট রূপরেখা। অপরাধের ভিন্নতা অনুযায়ী শাস্তির ধরণেও ভিন্নতা রয়েছে, যা শরীয়াহ ধারা নির্ধারিত। সমকামিতা, যিনা, চুরি, মিথ্যা অপবাদ, ডাকাতি, হত্যা, অঙ্গহানী প্রভৃতির ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীকে ক্ষমা করার কোন এখতিয়ার বিচারক কিংবা খলিফার নেই।
- রিসাত আহমেদ