উত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন

 


খবরঃ 
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশন বিমান বিধ্বস্তের পরিপ্রেক্ষিত, কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ঘটনা–সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় চিহ্নিত করবে। এই কমিশনকে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আজ রোববার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। (www.prothomalo.com/bangladesh/0bred133mb

মন্তব্যঃ 
প্রতিটি ঘটনা ঘটার পর তথাকথিত তদন্ত কমিশন গঠন করা হলেও আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। রানা প্লাজা (২০১৩) ধ্বসে ১১’শত এর বেশি মৃত্যু, নিমতলী অগ্নিকান্ডে (২০১০) ১২০ এর বেশি মৃত্যু, চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকান্ডে (২০১৯) ৭০ এর বেশি মৃত্যু, বনানীর এফ.আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ড (২০১৯) যাতে ২৫ এর বেশি মৃত্যু, নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় (২০১৮) ৫১ জনের মৃত্যু, প্রতিদিনের সড়ক দূর্ঘটনা, কিংবা লঞ্চ ডুবীতে মৃত্যুর মিছিল - এসবই আমাদের চোখের সামনে ঘটছে এবং আরো ঘটতে থাকবে। আমরা শুধুমাত্র নীরব দর্শক আর ভিকটিম হয়ে সন্তান কিংবা পিতার লাশ বহন করে নিয়ে চলব। আর সরকার মহাশয় রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষনা আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লাশ দাফনের মাধ্যমেই তার দায়িত্ব থেকে অবকাশ লাভ করবে। আর আমরা অপেক্ষা করতে থাকব নতুন কোন অগ্নিকান্ড, সড়ক দূর্ঘটনা কিংবা বিমান পতনের জন্য ! মূলত এই সেক্যুলার পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কাছে আমাদের মত সাধারণ জনগনের জীবনের কোন মূল্যই নেই। এই ব্যবস্থায় জীবনের মূল্য রয়েছে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গোষ্ঠীর আর রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তিবর্গের কিংবা যারা আসন্ন ক্ষমতার ভাগীদার। ফলে, পিরামিডের চূড়ায় অবস্থান করা এসব ব্যক্তিবর্গের মাথা ব্যাথার চিকিৎসা মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে সম্পন্ন হলেও আমাদের সন্তানেরা আগুনে পুড়ে গেলেও কোন বার্ন ইউনিটের ব্যবস্থা থাকে না! 

এই যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানবজীবনের মূল্যগত বৈষম্য সেটা কিন্তু এই ব্যবস্থারই একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট। কারন এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবেই জনগনের দেখভালের দায়িত্ব থেকে দায়মুক্তি নিয়ে নেয়। ফলে সাধারণ জনগনের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে রাষ্ট্র নিজের হাত গুটিয়ে নেয়। এসকল চাহিদা পূরণের দায়ভার জনগনের নিজের। ফলে, আমরা প্রতিবছর কর ব্যবস্থার সংস্কার হতে দেখলেও হাসপাতাল নির্মান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় নির্মান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমন, বেকারত্ব দূরীকরণ, জনগনের নিরাপত্তা বিধান, সড়ক দূর্ঘটনা রোধ কিংবা অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিকল্পিত নগরায়ন ইত্যাদি বিষয়ে কোন সংস্কার দেখতে পাই না। মূলত এই পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রেরই একই অবস্থা কারণ এরা সবাই সেক্যুলার-পূজিবাদী বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিমান দূর্ঘটনা, ২০২০ সালে মহারাষ্ট্রে ভবন ধ্বসে ৪০ জনের মৃত্যু, ২০২১ সালে ফ্লোরিডায় ভবন ধ্বসে ৯৮ জনের মৃত্যু, ২০১৯ সালে দিল্লীর আনাজ মান্ডি অগ্নিকান্ডে ৪৩ জনের মৃত্যু, ২০১৮ সালের ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্প ফায়ারের কারনে ৮৫ জনের মৃত্যু, ২০১৫ সালে জার্মান-উইংস ফ্লাইট দুর্ঘটনায় ১৫০ জনের মৃত্যু - এসবই বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাধারণ জনগনের প্রতি অবহেলার চিত্রই ফুটে উঠে। আর এটা হবারই কথা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।” [আর-রুম-৪১] 

পক্ষান্তরে, ইসলামী রাষ্ট্রদর্শনে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের জীবনের মূল্য সর্বোচ্চ। এখানে একদিকে যেমন নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাসমূহ যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা - এর প্রয়োজন মেটানোর দায়ভার খলিফার অন্যদিকে প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধানও খলিফার অন্যতম দায়িত্ব। সর্বোপরি একজন নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল প্রয়োজন অর্থাৎ বস্তুগত ও আধ্যাত্নিক সবকিছুই রাষ্ট্র অর্থাৎ খলিফা ব্যবস্থা করতে বাধ্য। এই গুরুত্ব আমরা এই হাদীস থেকেও বুঝতে পারি, “হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাবা ঘর তাওয়াফ করতে দেখলাম এবং তিনি বলছিলেন, “কত উত্তম তুমি হে কাবা! আকর্ষণীয় তোমার খোশবু, কত উচ্চ মর্যাদা তোমার (হে কাবা), কত মহান সম্মান তোমার। সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আল্লাহর নিকট মুমিন ব্যক্তির জানমাল ও ইজ্জতের মর্যাদা তোমার চেয়ে অনেক বেশি। আমরা মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে সুধারণাই পোষণ করি।” (ইবনে মাজাহ ২/৩৯৩২)” সুতরাং নাগরিকদের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যা যা করণীয় খলিফা তা করতে বাধ্য। ফলে, অগ্নিকান্ড কিংবা বিমান দুর্ঘটনার মত বিষয়কে এড়াতে পরিকল্পিত নগরায়ন, রাষ্ট্রজুড়ে জনসংখ্যার সমানুপাতিক বিন্যাস, কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশস্ত রাস্তা নির্মান ও একাধিক লেন স্থাপন ইত্যাদি কার্যকরী পদক্ষেপ হাতে নিতে খলিফা বাধ্য। 

    -    মোঃ হাফিজুর রহমান 
Previous Post Next Post