খবরঃ
বাংলাদেশে চীনের নানামুখী কূটনৈতিক ও কৌশলগত তৎপরতায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং অন্যান্য কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশকে জানানোর পাশাপাশি চীনের প্রভাব বলয় থেকে ঢাকাকে বেরিয়ে আসতে নানাভাবে চাপ তৈরি করছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি ট্রেড নেগোসিয়েশনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার পেছনে চায়না ফ্যাক্টরই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। ট্রেড নেগোসিয়েশনের সময়ে চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা কমানোর জন্য বাংলাদেশকে রীতিমতো চাপ দেওয়া হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ব্যাপারে সচেতন রয়েছে চীন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ ব্যাপারে আমার দেশকে বলেছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে ঢাকার সঙ্গে জোরালো অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখবে বেইজিং। (https://www.dailyamardesh.com/amar-desh-special/amdrgttznduql)
মন্তব্যঃ
ইয়েলো এবং ইয়াংযি নদীর অববাহিকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মূল চীনকে বহির্বিশ্বের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য দেশটি ঐতিহাসিকভাবে তার চারপাশের অনেকগুলো বাফার অঞ্চলকে ব্যবহার করছে। ডেং সিয়াওপিং এর অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে গত ৪৫ বছর যাবত এই চীন ব্যাপক উন্নতি করে এবং বিশ্বের মূল উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। এই বাড়ন্ত অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য ট্রেড রুটগুলোকে সুরক্ষা করা চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের এই অভুতপূর্ব উত্থানে শংকিত আমেরিকা চীনকে নিয়ন্ত্রণ করাকে তার অন্যতম ফরেন পলিসি অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করে ২০১১ সালে ‘Pivot to Asia’ পলিসি গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২০১৬-১৮ সাল নাগাদ ভারত এবং ভারত মহাসাগরকে যুক্ত করে আমেরিকা ‘Pivot to Asia’ পলিসিকে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নামে মহাপরিকল্পনায় রুপান্তর করে। এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকা চীনের নিরাপত্তা বলয়কে দুর্বল করার জন্য তাইওয়ান ও মিয়ানমারকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। যেজন্য আমেরিকা ২০২২ সালে ‘Burma Act’ গ্রহণ করে এবং আরাকান আর্মিকে তার প্রক্সি শক্তি হিসেবে নির্বাচন করে। অন্যদিকে, চীন তার বাণিজ্য রুটের ঝুঁকি কমানোর জন্য মালাক্কা প্রণালীর বিকল্পের অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করছে। যা চীনের Belt and Road Initiative (BRI) এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ China-Myanmar Economic Corridor (CMEC) প্রকল্পে স্পষ্ট হয়েছে। এসব বাস্তবতায় এটা স্পষ্ট যে, এই দুটি প্রভাবশালী শক্তির আগ্রহের কারণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাজার বা সম্পদ নয় বরং বঙ্গোপসাগরের কোলের এর কৌশলগত অবস্থান।
সিরিয়া, ইউক্রেন এর মত ভুমিগুলোকে আমরা দেখেছি, যেগুলোকে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তির প্রদর্শনীর প্রতিযোগীতায় ধ্বংস করে দিয়েছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে পার্টনার বানিয়ে কিংবা ট্রেড ডেফিসিট কমিয়ে এই দেশ দুটিকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। যারা প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলক শক্তিশালী দেশের দিকে ঝুঁকে কিংবা উভয়ের মধ্যে ব্যালেন্স করে দেশের বিদেশ নীতি তৈরী করতে বলে তারা হয় বোকার স্বর্গে বসবাস করছে কিংবা তারা দেশের স্বার্থের বিপরীতে অন্য কারো স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। এসব অন্ধ থিংকট্যাংকরা ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি ইসলামের মত আমাদের আরেকটি কৌশলগত শক্তিকে দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না। ফলে তারা নতজানু হয়ে অন্য প্রভাবশালী ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর তাবেদারী করা ছাড়া নিজেকেই শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার বাস্তব কোন প্রকল্প দেখতে পায় না। অথচ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সুস্পষ্টভাবে বলেন: “আর যদি তারা তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তবে তারা তোমাদের শত্রু হবে এবং তাদের হস্ত ও রসনাসমূহ প্রসারিত করে তোমাদের অনিষ্ট সাধন করবে……” (সুরা আল-মুমতাহিনা ২)।
ইসলামী রাষ্ট্রে পরিবর্তিত হওয়ার ফলে মদিনা যেভাবে অন্য প্রভাবশালীদের উপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র দুর্বল রাষ্ট্র থেকে দ্রুততম সময়ে একটি নেতৃত্বশীল শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়েছিল আমাদের জন্য সমাধান এবং সম্ভাবনাও সেরকম। ইসলামই কেবল আমাদের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, শ্রেণীগত, জাতিগত যেকোন বিভক্তি দূর করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভেতর থেকে শক্তিশালী করতে পারবে। এবং ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্র মদিনা রাষ্ট্রের মত ইসলাম বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য সবার মাঝে তুলে ধরে, শক্তিশালী ডিপ্লোম্যাসি, শক্তিশালী সেনাবাহিনী ইত্যাদির মাধ্যমে উপনিবেশবাদী প্রভাবশালী দেশগুলোর হাত থেকে একের পর এক ভুমিকে মুক্ত করে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষ সকলকে যুলুম থেকে মুক্ত করবে।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
