বাংলাদেশে কি দক্ষিণপন্থীদের উত্থান ঘটছে?



খবরঃ 

 বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণপন্থী শক্তির সম্ভাব্য উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের ফলেই এমন একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, যেখানে দক্ষিণপন্থী এবং ধর্মভিত্তিক দলগুলো ধীরে ধীরে জনমত পাচ্ছে। ... দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ থেকে সতর্কতা এসেছে যে বিএনপি কিংবা অন্য সেন্ট্রিস্ট দলগুলোকে ধ্বংস করে দিলে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হবে, যার সুযোগ নেবে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। বাস্তবেও তাই হচ্ছে—গণতন্ত্র ও দুর্নীতির নাম এক করে দেখা হচ্ছে। মানুষ আর গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে গণতান্ত্রিক রাজনীতি মানে হচ্ছে লুটপাট, দুর্নীতি... (https://www.kalerkantho.com/multimedia/social-media/2025/07/26/1552785

মন্তব্যঃ 

দেশের পশ্চিমাপন্থী সেকুলার রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অস্তিত্বের সংকট আর ইসলামী শাসনব্যবস্থার জনপ্রিয়তার উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্নতা কারণ তাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ, তথ্য ও উপাত্তেই ফুটে উঠেছে- দেশের জনগণ আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায় না, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আর বিশ্বাস করে না; কারণ জনগণ গণতন্ত্র মানেই দুর্নীতি ও লুটপাটকে বুঝে। জনগণ কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্রকে শাসকগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী এবং উপনিবেশবাদী শক্তির স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দেখে আসছে। গণতন্ত্র যুলুমের শাসনের জন্ম দেয়, কারণ এখানে মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ফলে যারাই ক্ষমতাসীন হয় তারাই এই সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজেদের, কতিপয় পুঁজিপতি ও উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত হয় আর সাধারণ জনগণের উপর যুলুম করে। এখানে যতই ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হোক না কেন, শাসকগোষ্ঠীই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তাই এমন শাসনব্যবস্থা থেকে জনগণের মুখ ফিরিয়ে নেয়াটা স্বাভাবিক। 

এমন বাস্তবতায়, জনগণের মধ্যে ইসলামী রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার ধারণা ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি জনগণের এই আকাংখাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দমন করাকে রাষ্ট্রের শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যাচ্ছে। (বিস্তারিতঃhttps://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-689321)। অন্যদিকে, পশ্চিমাপন্থী সেকুলার রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরাও তাদের ক্ষয়িষ্ণু  গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পতনের ভয়ে ভীত হয়ে জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে আক্রমণ ও ক্রিমিনালাইজ করার চেষ্টা করছে। তারাও পতিত হাসিনার মত ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পদানত সৈনিক হতে চায় কিন্তু তারা এখনও এই শিক্ষা গ্রহণ করেনি যে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ছিল পশ্চিমাদের ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে তার অবস্থান, যার ফলে জনগণ দ্বারা ঘৃণিত হয়ে সে লেজগুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

এমতাবস্থায়, জনগণের ইসলামী শাসনব্যবস্থা দিয়ে শাসিত হওয়ার আকাংখাকে সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দিয়ে দমনকারী অন্তর্বর্তী সরকার সহ এই আকাঙ্ক্ষাকে দক্ষিণপন্থা বলে আক্রমণকারী পশ্চিমাপন্থী দালাল সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাদের সকল রাজনৈতিক সংহতি পরিত্যাগ করতে হবে। এসব দালালদের পশ্চিমাপন্থী রাজনীতি ও নির্লজ্জ দালালী উন্মোচন করে তাদেরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে যাতে তারা বেইমান ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সাব্যস্ত হয়। জনগণকে ইসলামী সংবিধান এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থার দাবীকে আরও জোড়ালো করতে হবে কারণ একমাত্র ইসলামী শাসনব্যবস্থার পুনরুত্থানের মাধ্যমেই পশ্চিমা শক্তি ও তাদের দালালদের দ্বারা পরিচালিত ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘৃণ্য এই প্রকল্পকে মোকাবেলা করা সম্ভব। পশ্চিমা সমর্থিত এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকে থাকার অর্থই হল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত থাকা। তাই দেশের সচেতন জনগণ এবং নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামে নিজেদেরকে অগ্রগামী হিসেবে নিয়োজিত করে ধর্মনিরপেক্ষ কুফর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শীঘ্র পতন নিশ্চিত করা। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই ইসলাম ও মুসলিমদের আবেগ-অনুভূতির এবং ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী যেকোন পশ্চিমা প্রকল্প ও ষড়যন্ত্র থেকে উম্মাহ্‌কে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম।

    -    কাজী তাহসিন রশীদ


Previous Post Next Post