জুলাই সনদের খসড়ায় রয়েছে যে ৭ অঙ্গীকার

 


খবরঃ

জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।… ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। (https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/07/28/1553871)

মন্তব্যঃ

কোন দায়িত্বশীল অভিভাবকের অভিভাবকত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন ‘ন্যারেটিভ’ বা ‘আখ্যান’ তৈরি করা লাগে না, তেমনি দায়িত্বশীল শাসকদেরও তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণকে মিথ্যা বুঝ দেওয়ার জন্য কোন ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করতে হয় না। সাধারণত রাজনৈতিক ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করা হয়, (১) আখ্যানের নায়ক, (২) পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তিবর্গ বা জনগোষ্ঠী এবং (৩) খলনায়কদের চিহ্নিত করে। যেমন, বিগত হাসিনা সরকারের সময় খলনায়ক বানানো হয়েছিল জঙ্গিবাদের নামে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনগোষ্ঠীকে, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্টিং অপারেশন চালিয়ে কিংবা জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ভুক্তভোগী বানানো হয়েছিলো সাধারন ও নিরাপরাধ জনগণকে, আর ন্যারেটিভের নায়িকা সেজেছিলো হাসিনা নিজেই। এসব আখ্যান তৈরিতে হাসিনা মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

আর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ন্যারেটিভগুলোর নায়ক হলো নবগঠিত এনসিপি নেতৃবৃন্দ বা তথাকথিত ‘মাস্টারমাইন্ড’রা, খলনায়ক হলো পতিত হাসিনা সরকার, আর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। এই অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পেরে সব দায়ভার ‘ফ্যাসিস্ট’ হাসিনার কাঁধে তথা আখ্যানের খলনায়কদের কাঁধে চাপিয়ে একের পর এক ন্যারেটিভ তৈরি করছে। এমনকি জনগণ দাবী নিয়ে রাস্তায় নামলেও তাদের ভেতর খলনায়কদের দোসর(?) খুঁজে বের করে সেই ন্যায্য আন্দোলনকে নস্যাৎ করেছে! অর্থাৎ যারাই সরকারের বিরোধিতা করবে তারাই হয়ে যাবে ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠ-পোষক। যেমন, ৭ মার্চের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কিংবা মাইলস্টোন কলেজের ট্রাজেডির প্রেক্ষিতে আন্দোলনে জনগণ রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললে, সেখানে ফ্যাসিবাদের দোসরদের(?) সরকার খুঁজে বের করেছে এবং সেই আন্দোলনকে নস্যাৎ করেছে। 

আর নিজেদের অবদান বলতে এক বছর পর আশাহত জনগণকে ব্যাপক আয়োজন করে ‘জুলাই সনদ’ নামক একটি বড় ন্যারেটিভ উপহার দিচ্ছে। এই জুলাই সনদ নামক ‘ঘোড়ার ডিম’-এর সাথে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার দূরতম সম্পর্কও নাই। এই ‘ঘোড়ার ডিম’ মূলত জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সুবিধাভোগী শ্রেণীর দায়মুক্তি ও ক্ষমতা ভাগাভাগির রাস্তা এবং পরিত্যক্ত, ঘৃণিত ও আমাদের সকল সমস্যাসমূহের মূল কারণ স্রষ্টা বিবর্জিত এই ‘সেক্যুলার’ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার একটি অঙ্গীকারনামা। এটা সেই সেক্যুলারিজম যেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাসিনা তার জুলুমের রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বৈধতা পেয়েছিল, ইসলাম এবং মুসলিমদের দমন-নিপীড়ন করতে পেরেছিল, জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণের দাবীকে উপেক্ষা করতে পেরেছিল এবং উপনিবেশবাদী মার্কিন-ভারতের গোলামিতে আমাদেরকে বাধ্য করতে পেরেছিল। হাসিনা পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও একই ধারা চলমান রেখেছে এবং পরবর্তী যুগেও যেন এটা (সেক্যুলারিজম) চলমান থাকে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এই ‘জুলাই সনদ’ দিয়ে। 

আজকে গণআন্দোলন পরবর্তী সময়ে যদি সেক্যুলারিজম’কে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ইসলামকে বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে জনগণ তার প্রকৃত অভিভাবক পেত। কারণ আল্লাহ্‌’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার জনগণের জন্য দায়িত্বশীল”। খিলাফত ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যই যেহেতু জনগণের দেখাশোনা করা, সেহেতু এখানে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য কোন শাসকের ন্যারেটিভ এর ফাঁদে জনগণকে ফেলে ‘জুলাই সনদ’ কিংবা ‘সংস্কার’ এর মিথ্যা বুঝ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) থেকে শুরু করে প্রায় ১৪০০ বছর ধরে মুসলিম শাসকদের ন্যারেটিভের প্রয়োজন পড়েনি। তারা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র হুকুম অনুযায়ী জনগণের প্রতি তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। এই কারণে আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) এর মতো শাসকগণের জন্য আজও প্রতি জুম্মা খুতবায় দোয়া হয়।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post