৪০ বছরে এমন সংকট দেখিনি: এ কে আজাদ

 


খবরঃ

৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট কখনো দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী নেতা ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ।’অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে এ কে আজাদ বলেন, ‘আপনারা বলছেন, সাত-আট মাসের জন্য দায়িত্বে আছেন। এরপর চলে যাবেন। কিন্তু তখন আমরা যাব কোথায়? আমাদের কার কাছে ফেলে রাখছেন।’ (https://www.prothomalo.com/business/economics/qq4nfrv78o )

মন্তব্যঃ

শুধুমাত্র শুল্ককেন্দ্রীক জটিলতায় রফতানি খাতে অনিশ্চয়তা তৈরীর কারণে নয়, এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ জ্বালানী ও বিদ্যুৎ সংকট, রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে চরম ঘুষ বাণিজ্য, দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, ব্যাংকিং খাতে তারল্যসংকট, প্রায় ১০০ বিলিয়ন বৈদেশিক ঋণের বোঝা এবং অসহনীয় দ্রব্যমূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চরম দু:সময় পার করছে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র পোশাক রফতানি খাত নয় বরং অর্থনীতির সকল সূচকে বাংলাদেশ চরম সংকটে রয়েছে। এই বাস্তবতায় কেউ কেউ হাসিনা সরকারের সময়ের দুর্নীতি ও অপশাসনের উপর দোষ চাপিয়ে দায়মুক্তি পাবার চেষ্টা করছে। আবার কেউ কেউ নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিকে সকল সমস্যার মূল বলে অভিহিত করে জনগণকে মিথ্যা আশা দেখিয়ে বলছে, দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশের শাসনক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতে প্রদান করলে সকল অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। বাস্তবতা হল, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহন করলেও দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কোন সমাধান সম্ভব নয়। কারণ, সমস্যা কোন বিশেষ সরকার বা বিশেষ ব্যক্তির শাসনে নয়, বরং মূল সমস্যা হল দেশের বিদ্যমান পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থার অস্তিত্ব।

পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা বহাল রেখে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে দেশের ব্যবসায়ীক পরিবেশের কোন পরিবর্তন হবে না। নতুন সরকারও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে ক্রমাগত টাকা ছাপাবে, রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর জন্য ভ্যাট-ট্যাক্স-শুল্ক বাড়াবে, গ্যাস বিদ্যুতের দাম আরো বাড়াবে, ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র হাতবদল হবে, দেশের উৎপাদনমুখী খাতের উপর বিদেশীদের নিয়ন্ত্রণ আগের মতই বহাল থাকবে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর ধ্বংসাত্মক শর্তগুলোকে মেনে নেওয়ার অজুহাত হিসেবে সেই পুরোনো যুক্তিগুলোকে নতুন মোড়কে জনগণের সামনে হাজির করা হবে। যদি কোন নির্বাচিত সরকার আসে তাহলে তারাও পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা থেকে জনগণের দৃষ্টিকে আড়াল করবে এবং বলবে “আমরাতো কেবল দায়িত্বগ্রহণ করলাম, আমাদেরকে আরো কটা বছর সময় দিতে হবে”, “১৭ বছরের জঞ্জাল ১৭ মাসে ঠিক করা সম্ভব নয়” ইত্যাদি। পুঁজিবাদের ট্রিকল ডাউন ব্যবস্থার ছাড়া সম্পদ বন্টনের অন্যকোন উপায় তাদের জানা নেই, যার ফলে তারা অর্থনীতির সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে অর্থনৈতিক সংকট ও জনদুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিবে।

দেশের ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে বিরাজমান অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, হতাশা ও বিক্ষুব্ধতা দূর করার একমাত্র উপায় হয় আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থার ‘ইসলামী অর্থনৈতিক মডেল’। যদিও হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এই অর্থনৈতিক মডেল অর্ধপৃথিবীকে সমৃদ্ধির শিখড়ে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু অর্বাচিন ও অজ্ঞরা তা জানে না। এই অর্থনৈতিক মডেল দেশের ব্যবসায়ী সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতাদেরকে অনুকূল ব্যবসায়ীক পরিবেশই শুধু প্রদান করবে না, বরং এর মাধ্যমে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা ও পুরষ্কার লাভ করতে পারবেন। তাই, এই ব্যবসায়ী নেতাদের উচিত উসমান ইবনে আফফান (রা.) ও আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.)-দের আদর্শকে অনুসরণ করে এই ঐশী অর্থনৈতিক মডেলকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে খিলাফত শাসনব্যবস্থাকে পুন:প্রতিষ্ঠার কাজকে পূর্ণাঙ্গ সাহায্য-সহযোগীতা করা। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন: “মানুষ হল স্বর্ণ ও রৌপ্যের অনুরূপ ধাতুর মত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তাদের মধ্যে জাহিলিয়াতে বসবাসরত অবস্থায় যে শ্রেষ্ঠ, ইসলামের মধ্যেও সে শ্রেষ্ঠ হবে যদি সে তা (ইসলামকে) পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন ও গ্রহণ করে” (সহীহ বুখারী)

    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post