দেশের ইতিহাসে প্রথমবার ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’

 


খবরঃ

দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক বিষয়ে ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ (এনডিএ) সই হতে দেখলেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “বিষয়টি ইতিহাসে এই প্রথম দেখলাম— একটি বিষয়কে নন-পেপার না করে সরাসরি এনডিএ করা হয়েছে। যার ফলে এটি এখন একটি বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়েছে। এখন যদি বাংলাদেশ কোনও লবিস্ট নিয়োগ করে, তার কাছেও এ তথ্য প্রকাশ করা যাবে না”। রাজধানীর একটি হোটেলে দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত ‘ইউএস রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। (www.banglatribune.com/business/news/907866/দেশের-ইতিহাসে-প্রথমবার-‘নন-ডিসক্লোজার)

মন্তব্যঃ

দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা এনডিএ হল বাণিজ্য সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্যকে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের হাতে চলে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া। মূলত কোন প্রতিযোগী দেশ যেন এই বাণিজ্য-তথ্যকে ব্যবহার করে কোন তুলনামূলক সুবিধা (comparative advantage) কিংবা প্রতিযোগীতামূলক সুবিধা (competitive advantage) পেতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য এনডিএ করা হয়। এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে যে বাণিজ্য সংক্রান্ত স্পর্শকাতর কোন তথ্যগুলো প্রকাশ হয়ে গেলে প্রতিযোগীরা বাড়তি সুবিধা নিতে পারে? এই তথ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হল শুল্ক হার, কোন পণ্য লেনদেন হবে, কি পরিমাণে লেনদেন হবে, পণ্যের দাম ইত্যাদি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে শুল্কহার, পণ্যের নাম, পণ্যের পরিমান ও দাম নিয়ে সরকারিভাবে উন্মুক্তভাবে আলোচনা হচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে ‘এনডিএ আছে আর কিছু বলা যাবে না’!! এর অর্থ হচ্ছে এই এনডিএ-এর সাথে কোন অর্থনৈতিক সমীকরণ জড়িত না এবং প্রতিযোগী দেশের ব্যবসায়িক সুবিধা পেয়ে যাওয়ার কোনই সম্পর্ক নেই। ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই চুক্তি হল মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মত দীর্ঘমেয়াদী দাসত্বের চুক্তি ও দেশের জনগণের কাছে থেকে তা লুকানোর জন্য ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা এনডিএ করা হয়েছে। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরুদ্দীন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়টিকে (বাণিজ্য চুক্তি ও এনডিএ) তার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছে। মূলত: বিশ্বরাজনীতিতে কোন অযাচিত সিদ্ধান্ত কিংবা অযৌক্তিক কাজ করার সময় যুক্তরাষ্ট্র “জাতীয় নিরাপত্তা” শব্দটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়। বাস্তবতা হল বিশ্বের কোথাও এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের “জাতীয় নিরাপত্তার” জন্য কোন হুমকি নেই যা এই রাষ্ট্রটির অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করতে পারে। যা আছে তা হল যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী বা কলোনিয়াল স্বার্থ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাষ্ট্রটির বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বারবার “জাতীয় নিরাপত্তা” শব্দটি ব্যবহার করে তার লুণ্ঠনের শিকার রাষ্ট্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোকে ব্যাকফুটে রাখার নীতি গ্রহণ করেছে।

জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে এনডিএ করার ক্ষেত্রে একটি ডিসক্লোজিং পার্টি থাকে যে নিরাপত্তার স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ার করে এবং একটি রিসিভিং পার্টির থাকে যে তথ্য গ্রহন করে ও গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোন ধরনের সামরিক অস্ত্রসস্ত্র কিংবা সরঞ্জাম আমদানি করে না। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন স্পর্শকাতর তথ্য বাংলাদেশের হাতে থাকার সম্ভাবনা শূন্য। যেটা থাকতে পারে তা হল মায়ানমার ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যে সাম্রাজ্যবাদি স্বার্থ রয়েছে সে সংক্রান্ত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও মাঠপর্যায়ের কৌশল, যা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। সাম্প্রতিক টাইগার-লাইটনিং সামরিক মহড়া সেটারই ইঙ্গিত বহন করে। কেবলমাত্র আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কিংবা সামরিক দাসত্ব থেকে বাংলাদেশের জনগণকে মুক্তি দিতে পারে এবং শব্দের খেলার মত দুর্বল ‘কূটনৈতিক চাল’-কে অকেজো করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের “জাতীয় নিরাপত্তাকে” বাস্তবিক অর্থেই আটলান্টিকের ওপারের বিষয়ে পরিণত করতে পারে।

    -    রিসাত আহমেদ 


Previous Post Next Post