খবরঃ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আনুষ্ঠানিকভাবে পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরের নৃশংস গণহত্যার বিচারের কোনো প্রতিশ্রুতির উল্লেখ নেই। এ কারণে হতাশা ও বিস্ময় ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।… ঘোষণাপত্র পাঠকালে হেফাজত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এমনটি হয়েছে। ফলে এটি যে সচেতনভাবে করা হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।… ওলামায়ে কেরাম ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা এতে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা হতাশ ও বিস্মিত! সামনে দিন আরো আছে। এই উপেক্ষার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের মনে থাকবে।… (https://www.manobkantha.com.bd/news/national/634082/জুলাই-ঘোষণাপত্র-নিয়ে-হতাশ-হেফাজতে-ইসলাম)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তথাকথিত ‘কৌশল’ এর নামে সেক্যুলার রাজনীতির ফাঁদে পা দেওয়া ইসলাম এবং মুসলিমদের জন্য অপমানজনক। সেক্যুলার রাজনৈতিক ব্যবস্থাটি এমন যে, এটি কাফির উপনিবেশবাদী শক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, সুরক্ষিত এবং সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রিত। এটি উপনিবেশিক ব্রিটেন কর্তৃক আমাদের উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের ধ্যান-ধারণায় এদেশে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগ, তারপর কালক্রমে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং সর্বশেষ নবগঠিত এনসিপি- ইত্যাদি নামে রাজনীতি করছে। অন্যদিকে, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের পরবর্তী যুগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নব্য উপনিবেশবাদীদের মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থাও হলো এই সেক্যুলার আক্বিদার ভিত্তিতে প্রণীত ‘পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা’। উপনিবেশবাদীরা সর্বশেষ পতিত হাসিনাসহ তাদের অনুগত বিভিন্ন সেক্যুলার শাসক দ্বারা ইসলাম এবং মুসলিমদের দমনে ব্যর্থ হয়ে মুসলিমদেরকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মেনে নেয়ার শর্তে সেইখানে তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। এই রাজনৈতিক বন্দোবস্তে একদিকে যেমন খিলাফত (মুসলিম উম্মতের ঐক্যবদ্ধ একক রাষ্ট্র), জি*হা/দ (ইসলামী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি), শরিয়াহ্ আইন ইত্যাদির পক্ষে অবস্থান নেওয়া নিষিদ্ধ, অন্যদিকে তেমন সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি কুফর চিন্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াও নিষিদ্ধ। অর্থাৎ এখানে বাতিলের সাথে হক্বের আপোষ করে বাতিল মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। অথচ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিয়ম হচ্ছে, “বরং আমি মিথ্যার উপর সত্য নিক্ষেপ করি, ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা বিলুপ্ত হয়…” (সুরা আল-আম্বিয়াঃ ১৮)
তাই কুফর বন্দোবস্তের সবকিছু ‘আপাতত টিকে থাকার কৌশল’ হিসেবে মেনে নিয়ে, সেখানে অংশগ্রহণ শুধুমাত্র কুফরের হস্তগুলোকেই (সেক্যুলার আক্বিদার রাজনৈতিক দলগুলোকে) শক্তিশালী করে। এই অংশগ্রহণ কুফরের অগ্রযাত্রার পালে হাওয়া দেয়। তখন এত আমল-মেহনত-ত্যাগ-তিতিক্ষা-সবর কোনটাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে কোন কাজে আসে না।
তাই ব্যক্তিগত আমলের সাথে সাথে রাজনীতিতে চলার পথও ওহী (আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান) দ্বারা দেখানো পথ হওয়া উচিত। এটা কোন বাস্তবতা থেকে নেওয়া উচিত নয়, কারণ এদেশে বর্তমান বাস্তবতার পথগুলো কুফর শক্তিসমূহ কর্তৃক সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। আমাদেরকে সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র, নারী ক্ষমতায়নের নামে নারীকে ভোগ্যপণ্যে রূপান্তর, ফ্রিডম, ইনক্লুসিভনেস, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, মার্কিন বন্ধুত্ব তথা মার্কিন উপনিবেশবাদের গোলামী ইত্যাদি মিথ্যার বন্দোবস্তের ওপর খিলাফত, ইসলামী আইন, ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধারনা, সামাজিক ব্যবস্থার ধারনাসমূহ, শরিয়াহ, একক শাসন-কর্তৃত্বে সমগ্র ইসলামী ভূখণ্ড-ইত্যাদি চিন্তাগুলোকে ছুড়ে দিতে হবে। এগুলোর পক্ষে শক্তিশালী জনমত তৈরি করতে হবে। সর্বশেষ আল্লাহ্’র রাসূলের (সঃ) পদ্ধতি অনুসরণ করে শাসন ক্ষমতা ও ব্যবস্থার মূল ‘স্তম্ভ’ বর্তমান যুগের ‘সাদ ইবনে মুয়াজ’ তথা সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের সহায়তায় ইসলামি রাষ্ট্র বা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহ্’র রাসূল (সঃ) সমগ্র আরব উপদ্বীপ জুড়ে ইসলামের পক্ষে জনমত তৈরি করার পরে, বারে বারে প্রত্যাখ্যাত হয়েও সামরিকভাবে শক্তিশালী আরব গোত্রগুলোর নিকট তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান নিয়ে গিয়েছিলেন। যা এই হুকুমের ফরজ হওয়ার ব্যাপারে শারীআহ্’র অকাট্য দলিল। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর জন্য এই পথই অনুসরণ করা উচিত। তখন উপনিবেশবাদী কুফর শক্তি কর্তৃক নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেক্যুলার বন্দোবস্তের দলগুলোকে ক্ষমতা কিংবা রাজনৈতিক শক্তি অর্জনে সহায়তার পর অতঃপর আশানরূপ ফল না পাওয়ার হতাশায় ভুগতে হবে না।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম
