খবরঃ
বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন। অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/4h9ne5em42)
মন্তব্যঃ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরাকান আর্মির জন্য করিডোর তৈরির প্রবল আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে, চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনাল আমেরিকার আশীর্বাদপুষ্ট কোম্পানিকে দিতে, আমেরিকান বিদেশি কোম্পানিকে গ্যাস উত্তোলনে আগাম অনুমতি দিতে যে উদগ্রীবতা আমরা দেখেছি সে তুলনায় জনস্বার্থ এবং জনসম্পদ রক্ষার্থে ততটাই ব্যর্থতা দেখছি। বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ব্যক্তিত্বকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা বানানোর পরেও পরিবেশের কোন উন্নয়ন তো দূরে থাক, সাদাপাথরের মত বৈচিত্র্যময় জলাশয়ের পাথর লুট ঠেকাতেও ব্যর্থ এই সরকার। জনস্বার্থ, জনসম্পদ এবং জননিরাপত্তাসহ সকল ক্ষেত্রেই এই ‘শহুরে সরকার’ শহরেই যেমন ব্যর্থ, তেমনি শহরের বাইরে তার ব্যর্থতা আরো প্রকট। এই ব্যর্থতার পিছনে কারণ কি? অনেক সুশীলদের কাছ থেকে এরকম উত্তর এসেছে যে যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয়, তাই বারংবার তাদের সামনে নানা রাষ্ট্রীয় সংকট আবির্ভূত হচ্ছে। কিন্তু আদতে ব্যাপারটা কি এমন যে এই অনির্বাচিত সরকার খুবই জনমুখী কল্যাণকর কাজ করতে চাচ্ছেন আর জনগণ তার দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে প্রত্যেকটা জনকল্যাণকর কাজে বাঁধার সৃষ্টি করছে? ব্যাপারটা কি আদৌ এমনও কিনা যে অতীতে নির্বাচিত সরকার খুবই জনমুখী কার্যক্রম করেছেন আর জনগণ সেই আশায় দিন গুনছে যে কবে আসবে তাদের ভোটে জেতা নতুন সরকার? উত্তরটা হচ্ছে – না। মূল সত্য হল নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত উভয় সরকারই জনগণের কাছে বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধ না, বরং তারা দায়বদ্ধ তাদের পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের কাছে। উপনিবেশবাদীদের চাওয়া-পাওয়া মিটিয়ে সাদা পাথরের মত বাকি জিনিস দেশীয় ক্ষুদ্র পুঁজিপতি ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়াই হল ধর্মনিরপেক্ষ শাসকের কাজ। পার্থক্য হল- নির্বাচিত সরকারকে “সংসদ-সংসদ খেলা” খেলা লাগে আর ৫ বছর পর ভোটের নাটক সাজানো লাগে, যা অনির্বাচিত সরকারের লাগে না। তাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিগতভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকরা কখনো করে না। “জনবিচ্ছিন্নতা” ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর একটা স্বাভাবিক ‘বাইপ্রোডাক্ট’ বৈশিষ্ট্য।
আমরা যদি পদ্ধতিগতভাবেই “জনবিচ্ছিন্নতাকে” “জনসম্পৃক্ততায়” রূপান্তর করতে চাই, তাহলে আমাদের জনগণের সত্যিকারের মালিক অর্থাৎ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম এবং তাঁর দেয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে খিলাফতকে বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ এখানে শাসক বা খলিফা মূলতঃ জনপ্রতিনিধি নন, আল্লাহ্’র প্রতিনিধি। আল্লাহ্’র হুকুমকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নই হবে তার কাজ। মানুষের সৃষ্টিকর্তার তৈরি জীবনব্যবস্থাই তো হবে সবচাইতে “জনসম্পৃক্ত” জীবনব্যবস্থা। “যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই কি জানবেন না, তিনি তো অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শি এবং সম্যক অবগত।” [সূরা মুলকঃ ১৪]। তবে খলিফা যেন স্বেচ্ছাচারী না হতে পারেন, তার জন্য খিলাফত কাঠামোর মধ্যেই আছে মজলিস আল উম্মাহ্, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং জনগণ। প্রত্যেক কাঠামোর সদস্যের দায়িত্ব থাকবে যেন তারা শরীয়াহ্’র ভিত্তিতে শাসককে দায়িত্ব পালনে জবাবদিহি করেন। নয়তো মৃত্যুর পরে শাসকসহ প্রত্যেক নাগরিককে শরীয়াহ ভাঙ্গার ভয়ানক জবাবদিহি করতে হবে। জীবনের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গিই খিলাফত রাষ্ট্রকে করেছে একটা জনমুখী রাষ্ট্র। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। শাসক তার প্রজার ব্যাপারে দায়িত্বশীল, এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, এবং তাকেও প্রশ্ন করা হবে। একজন নারী তার স্বামীর গৃহে ও সন্তানদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, এবং তাকেও জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন চাকর তার মালিকের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকেও প্রশ্ন করা হবে।”
- জাবির জোহান
