খবরঃ
বহুল আলোচিত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গত বছরের ১ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট। এর আগে ২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন বাবর সহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও তারেক রহমান সহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে রায় ঘোষণা করেন। (https://www.itvbd.com/national/207965/তারেক-রহমানসহ-সব-আসামি-খালাসের-বিরুদ্ধে)
মন্তব্যঃ
শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে কিংবা প্রকৃত ন্যায়বিচার চাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতা বলছে ‘তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করাটাই অন্যায় হয়েছে’, এই মর্মে রায় ‘উৎপাদন’ করা ছাড়া সরকার পক্ষের এই আপিলের অন্যকোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। ‘হাইকোর্টের মূল রায় আপিল বিভাগের রায়েও বহাল আছে এবং সম্পূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিএনপি নেতারা বেকসুর খালাস পেয়েছে’ এটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এত আয়োজন। কারণ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল না করলে এই মামলায় আপিল বিভাগের শুনানী ও রায় প্রদানের কোন আইনী সুযোগ নেই।
কিন্তু সত্যনিষ্ঠ দল হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর পলাতক হাসিনার দমনমূলক ও বেআইনী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার কোন আপিল করেনি! (কোন পদক্ষেপ নেয়নি, বরং হাসিনার সিদ্ধান্ত বলবৎ রেখেছে)। উপরন্তু, এই বেআইনী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আদেবনকারীকে অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার তরিৎগতিতে গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন বিনাবিচারে কারাগারে আটকে রাখে। সেই আটক ও মামলাকে বেআইনী ঘোষণা করে হাইকোর্টের তরফে কোন আদেশ জারি করা দূরে থাক, আইন মেনে ন্যায়ানুগ জামিন দিতেও তারা সরকারের ভয়ে ভীত! কারণ, এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থায় সরকার ও আদালতের পুরো বন্দোবস্তটিই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিকগোষ্ঠীর ক্ষমতার পথকে সুগম করা এবং তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কাজ করে। জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির দাবি সেখানে নিভৃতে কাঁদে। নাহলে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৪ বছর পর ঢাকার ‘দ্রুত (!) বিচার ট্রাইব্যুনালে’ ২০১৮ সালে রায় ঘোষণার পরেও বিএনপি নেতা কায়সার কামাল কিভাবে বলেন যে “২০১৮ সালে তড়িঘড়ি করে রায় দেওয়া হয়েছে; justice hurried, justice buried”!
আদালতের কাগুজে রায়ে যতই দায়মুক্তি আসুক না কেন, জনগণ সবসময়ই বিশ্বাস করে যে আওয়ামী-বিএনপি গোষ্ঠীর নেতারা ক্ষমতার জন্য যেকোন অন্যায় ও অপকর্মে নির্দ্বিধায় জড়িত হতে পারে। জনগণের এই বিশ্বাস শতভাগ সঠিক বলে বারবার প্রমাণ করেছে তারা।
আর এটা জনগণের সামনে দিবালোকের মত পরিষ্কার যে, যখন যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তারা তাদের দলীয় স্বার্থে ও ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে কিছু সামরিক অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করেছে। হাসিনার দুষ্কর্মের সহযোগী ক্ষমতাধর আর্মি ও পুলিশ অফিসারদের অনেকেই এখন জনগণের ঘৃণা ও অভিশাপ নিয়ে জেলে আছে, ফেরারী হয়েছে কিংবা সুস্পষ্ট অপরাধের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘাপটি মেরে আছে বা ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করছে। বিএনপি সরকারের আমলের ক্ষমতাধর মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম, আইজিপি মো: আশরাফুল হুদা, আইজিপি শহুদুল হক প্রমুখকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় প্রায় দেড়যুগ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, কেউ কেউ ‘দল-পরিত্যক্ত’ অবস্থায় জেলেই মৃত্যুবরণ করেছে। জনগণ দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছে যে, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর নেতৃস্থানীয় অফিসাররা সামান্য পদপদবি ও তুচ্ছ অর্থের মোহে হয় বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি ও গোলামী করে, যার জন্য পুরো বাহিনীর প্রতি জনগণের ঘৃণা ও অবিশ্বাস জন্মেছে। তাদের এই ‘সুপ্রতিষ্ঠিত’ অসম্মান থেকে চিরমুক্তি দিতে পারে আসন্ন নব্যুয়তের আদলের খিলাফত রাষ্ট্র। বাংলাদেশে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্য ও অফিসাররা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে, “আমরা এখন কোন দল কিংবা মানুষের গোলামী করি না, এখন আমরা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ্’র গোলামী করি”।
- রাজীব আহমেদ