মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক




খবরঃ 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মার্কিন কূটনীতিকের আমন্ত্রণে গুলশানে তার বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সনদসহ রাজনৈতিক দলের সংলাপ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর এরিক গিলান। অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও কমিশন সদস্য মনির হায়দারসহ কয়েকজন কমিশন সদস্য।(https://www.ittefaq.com.bd/746650/মার্কিন-রাষ্ট্রদূতের-বাসায়-ঐকমত্য-কমিশনের-বৈঠক)   

মন্তব্যঃ 

জনগণ আশা করেছিল সংবিধান সংশোধন এবং জুলাই সনদের খসড়া তৈরি সহ গোটা রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ার যে ঐক্যমত্য কমিশন নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা তাদের সকল কর্মকাণ্ডে মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের মতো বিদেশী শক্তির আধিপত্যের বিরোধিতা প্রদর্শন করবে। জনগণ আশা করেছিল তাদের রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন সুপারিশ ও প্রস্তাবনায় বিদেশীদের আগ্রাসনমুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রুপরেখা স্থান পাবে। কিন্তু ঐক্যমত্য কমিশনের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদুতের বৈঠক জনগণের এই প্রত্যাশাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। কারণ একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র কখনোই তার রাজনীতিতে বিদেশী প্রেসক্রিপশন ও হস্তক্ষেপকে অনুমোদন করতে পারে না। সেই সাথে ঐ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধির সাথে সংলাপ ও বৈঠকের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জনগণ যে বিদেশী আগ্রাসনমুক্ত বাংলাদেশ ২.0 দেখার জন্য গণঅভ্যুত্থানে রক্ত দিয়েছিল সেই স্পিরিটকে এই তথাকথিত ঐক্যমত্য কমিশন ধারণ করে না। তাদের রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রকে বিদেশী আগ্রাসনমুক্ত করার কোন পরামর্শ ও পরিকল্পনা স্থান পায়নি। একটা শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে কিভাবে দেশকে মার্কিন-বৃটেন-ভারতের মত বিদেশী শক্তির আধিপত্য থেকে মুক্ত করা সম্ভব, সে ব্যাপারে তারা কোন রাজনৈতিক দলকে সংলাপে অংশ নেওয়ার আহবান করেনি। এছাড়া তারা তাদের রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণের ইসলামী শাসনব্যবস্থা দিয়ে শাসিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে। অতঃপর রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের মত বিষয়গুলো নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদুতের সাথে বৈঠক করে তারা প্রমাণ করেছে যে, তারা মার্কিনীদের প্রেসক্রিপশন ও হস্তক্ষেপ নির্ভর একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত জনগণের উপর বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। একই চিত্র আমরা ধর্মনিরেপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও দেখতে পাচ্ছি। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো এই ঐক্যমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে ক্ষমতার ভাগাভাগির জন্য পশ্চিমা দুতাবাস সহ সাবেক ও বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদুতদের সাথে ঘন ঘন বৈঠক করছে।  মার্কিনপন্থী এসব রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক ইসলাম ও খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিকে দক্ষিণপন্থা ও উগ্রবাদ আখ্যা দিয়ে তা মোকাবেলার জন্য তাদের মার্কিন প্রভুকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার দাবি সহ ভারতকে শত্রু রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য কোন দাবি দাওয়া উত্থাপন করেনি। ভারত ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিনীদের অন্যতম সহযোগী হওয়ায় মার্কিনীদের দ্বাসত্বনির্ভর এসব রাজনৈতিক দলগুলো ভারতের প্রতিও তাদের আনুগত্য বজায় রেখেছে। ফলশ্রুতিতে চলমান রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিদেশী আগ্রাসনমুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ২.0 প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা গণঅভ্যুত্থানে জনগণের অন্যতম প্রত্যাশা ছিল।  

বহিঃশত্রুর আগ্রাসন ও আধিপত্যনির্ভর রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ২.0 প্রত্যাশা করে লাভ নেই। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ২.0’র রুপকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে বিদেশী রাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশননির্ভর দ্বাসত্বের রাজনীতি পরিত্যাগ করে স্বাধীন একটা রাজনৈতিক আদর্শকে আকড়ে ধরতে হবে সেই আদর্শের লেন্স দিয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি সহ জীবনের সার্বিক বিষয়গুলোকে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামের রাজনৈতিক আদর্শ ও সেই আদর্শনির্ভর রাজনীতির ধারা চালু করাই হচ্ছে একমাত্র বিকল্প। ইসলামী রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গী হল অভ্যন্তরীণভাবে জনগণের দেখভাল করা এবং বাহ্যিকভাবে বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে জনগণকে রক্ষা করা। সুতরাং, একমাত্র ইসলামের রাজনীতিই হল জনগণের স্বার্থ ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার রাজনীতি। ইসলামের দৃষ্টিতে মার্কিন-বৃটেন-ভারত হচ্ছে শত্রু রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্রকে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের কান্ডারী হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাদের প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী যেকোন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করা শরীয়াহ্‌ দৃষ্টিতে হারাম। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, “মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরুপ করবে, তাদের সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না” (সুরা আলি ইমরানঃ ২৮)।

       -    কাজী তাহসিন রশীদ



Previous Post Next Post