খবরঃ
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে ইসলাম, কোরআন-সুন্নাহ’র বিপরীতে শরিয়তবিরোধী কোনো আইন করবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিএনপির লিয়াঁজো কমিটির সঙ্গে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।… (https://www.jagonews24.com/politics/news/1042500)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ইসলাম’ যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সেটা সালাহউদ্দিন আহমদের মত সেকুলার (স্রষ্টাবিবর্জিত) রাজনৈতিক ধারার রাজনীতিবিদের বক্তব্যে আবারো প্রমাণিত। এই শক্তির উৎস হলো এদেশের নব্বই শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর একক ইসলামী আক্বীদা। এ উপমহাদেশে ৭০০ বছরের মুসলিম শাসনের কারণে, ইসলামী আক্বীদা এদেশের সমাজে ও পরিবারগুলোতে বংশ-পরম্পরায় গভীরভাবে প্রথিত। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের হাতে পতনের পর থেকে সুদীর্ঘ ৩০০ বছর কুফর সেকুলার শাসনব্যাবস্থা দ্বারা শাসিত হওয়ার পরও ইসলামী আক্বীদা ও চিন্তাসমূহকে ধ্বংস করা যায়নি। এদেশের মানুষ ইসলামবিদ্বেষী হয়ে বা ইসলামকে পরিত্যাগ করে গণতন্ত্রের মতো পশ্চিমা কুফর মতবাদগুলোকে গ্রহণ করেনি। বরং পশ্চিমা কুফর উপনিবেশবাদীরা ও তাদের অনুগত দেশীয় অনুচররা ‘গণতন্ত্র’ কিংবা ‘সেক্যুলারিজম’কে এদেশে ফেরী করছে ‘এগুলো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না’ আখ্যা দিয়ে।
কিন্তু ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরের মতোই এই শক্তিকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেকুলার বন্দোবস্তের এই বর্তমান রাজনৈতিক ময়দানে তারা তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে বারবার অন্ধকারে হাতরে বেড়িয়েছেন। তারা কুফর শাসনব্যবস্থা বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ উদ্ভূত ‘কুর‘আন অবমাননা’, ইসলামবিরোধী নারী নীতি আইন, নাস্তিক বিরোধী আন্দোলন, মূর্তি (ভাস্কর্য) বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি ইস্যুতে বর্তমান কুফর সেক্যুলার শাসনব্যবস্থার নিকট প্রতিকার দাবি করেছেন। অনেকে ইসলামী সংবিধান প্রতিষ্ঠার জোরালো দাবীর বদলে কুফর সংবিধানের বিসমিল্লাহ্ সংযোজনে তুষ্ট থেকেছেন। অবশেষে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিতদের দ্বারা সেক্যুলার রাজনৈতিক ময়দানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে কেন্দ্র করে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক ধারায় ব্যাপক বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। কারণ সেক্যুলার রাজনীতির নোংরা পাঁকের পুতিময় গন্ধ এদেশের মানুষ বিএনপি ও আওয়ামী শাসনের মধ্যেই দেখে ফেলেছে। এগুলোতে ইসলামী রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এদেশের মানুষ ভালো চোখে দেখেনি। তখন এদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ তাদেরকে পরিত্যাগ করেছে। যার ফলে সেক্যুলারর রাজনৈতিক ময়দানের নির্বাচনের লড়াইয়ে ইসলামপন্থীরা সবসময় ‘আন্ডারডগ’ই রয়ে গিয়েছেন।
পশ্চিমা কুফর শক্তি ও তাদের দেশীয় অনুচররা সেক্যুলার বন্দোবস্তের রাজনৈতিক ব্যবস্থাতে অংশগ্রহণ করলে, ইসলামপন্থীদেরকে ‘মূল ধারার ইসলামী শক্তি’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এর সামান্য ব্যতিক্রম হলে দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। আর বুদ্ধিভিত্তিক ও রাজনৈতিক ইসলামী আদর্শিক চর্চাকে ‘জ*ঙ্গি*বাদ’ বা ‘স*ন্ত্রা*সবাদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর এই সুযোগে বর্তমানের সালাহউদ্দিন কিংবা বিগত হাসিনার মতো সেক্যুলার পোস্টারবয় কিংবা পোস্টারগার্লরা ইসলামপন্থীদের সাথে আয়োজিত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহন করে ইসলামী শক্তিগুলোকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করেছে।
মূলত ইসলামের শক্তি, এর আক্বীদা এবং এই আক্বীদা থেকে উৎসারিত বিভিন্ন চিন্তা, মতবাদ এবং হুকুমের মধ্যে নিহিত যা খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়। যেগুলো কুর‘আন এবং সুন্নাহ্’র মধ্যে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এসবের ভিত্তিতে ইসলামে রয়েছে এক অনন্য ও স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে রাষ্ট্রের একজন মানুষেরও ক্ষুধার্ত থাকার কারণে শাসকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। ইসলামে রয়েছে শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতি, যার ফলে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এর পবিত্র হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া খিলাফত রাষ্ট্র মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর সময়ের মধ্যে রোমান ও পারস্যের মতো পরাশক্তিগুলোকে পদানত করে একটি একক ও শক্তিশালী ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছিল। তাই সেক্যুলারর রাজনৈতিক ময়দান বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম প্রতিষ্ঠা তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ময়দানে সকল মুসলিমদের একত্রিত হতে হবে। তখন সেক্যুলারর রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের পথপ্রদর্শক ও প্রভুগোষ্ঠী পশ্চিমা শক্তিগুলো জনসম্পৃক্ততা ও জনসমর্থনের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে। আর তখন সালাহউদ্দিন কিংবা হাসিনার মত সেক্যুলার রাজনীতিবিদরা শরীয়ত বিদ্বেষী সেক্যুলার শাসন ‘ক্ষমতায় গিয়ে শরীয়ত বিরোধী আইন তৈরি করবে না’-এমন প্রতারণামূলক খেলা আয়োজনের সুযোগ পাবে না।
- জহিরুল ইসলাম
