খবরঃ
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এর বৃত্তি নিয়ে পড়ার জন্য গাজা থেকে জর্ডান হয়ে ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কথা ছিল এ বছরের মাঝামাঝি। কিন্তু হঠাৎ করেই গত জুনে চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন কর্তৃপক্ষকে ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের প্রায় দুই বছর আগে দেয়া আগমনী ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের কথা জানায়। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/k9vuj1lhy9 )
মন্তব্যঃ
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান জানিয়েছেন, ইসরাইল ও তার মিত্রদেশের অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা পড়বে না। এইউডব্লিউ তহবিলের বড় উৎস ইসরাইলের মিত্ররা। রাষ্ট্রদূত বলেন, এইউডব্লিউ’র প্রতিষ্ঠাতা চ্যান্সেলর হলেন চেরি ব্লেয়ার, যার স্বামী যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার ‘রিভেরা’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, যার একমাত্র লক্ষ্য হলো- যেকোনও উপায়ে গাজা উপত্যকাকে জাতিগতভাবে নির্মূল করা [দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ আগষ্ট ২০২৫]। ভিসা বাতিলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ইউসুফ রামাদানের কথা শুনে মনে হতে পারে, ফিলিস্তিন সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার উভয়েই গাজাবাসীর জীবন ও সম্মানের সুরক্ষায় আপোসহীন। ফলে প্রথমে ভুলে ভিসা দিয়ে ফেললেও যখনই জানা গেলো যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ইসরাইলের মিত্রদের সহযোগীতায় চলে তখনই তারা গাজার মেয়েগুলোকে এই অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়া থেকে রক্ষা করেছেন! যা নিতান্তই হাস্যকর যুক্তি, কারণ বাংলাদেশ সরকার ও ফিলিস্তিন দূতাবাসের না জানার কোন কারণ নেই। তাছাড়া, ইসরায়েল ও তার মদদপুষ্ট দেশসমূহের অর্থায়নের এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কেন বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিল এবং ফিলিস্তিন দূতাবাস কেন কখনোই এবিষয়ে আগে প্রতিবাদও জানায়নি? বাংলাদেশ সরকার কেন অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের সুরক্ষায় লেবানন সীমান্তে নৌবাহিনী প্রেরণ করলো? ফিলিস্তিন দূতাবাস কখনোই এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানায়নি।
তাই, প্রকৃত অপমান ও লজ্জাতো এই দুই সরকারের জন্যই যারা উভয়েই নিজেদের লজ্জাজনক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ফিলিস্তিনের জনগণকে শুধু পরিত্যাগই করেনি বরং তাদের উপর চলমান ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, অবরোধ, ক্ষুধার্ত রেখে মেরে ফেলা ইত্যাদি ভয়ংকর অপরাধে সহযোগিতা করছে। এই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ হচ্ছে পিএলও-এর উত্তরসূরী, যারা ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের বৈধতা দিয়ে নিজের ভুমি, মানুষ ও ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসরাইল, ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের তথাকথিত অথরিটি পায়! সেই থেকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নয় বরং তাদের পক্ষে দখলদারীর বিরুদ্ধে কাজ করা ফিলিস্তিনী আন্দোলনগুলোর বিপক্ষে কাজ করে আসছে। তাদের অবস্থা নির্লজ্জতার এমন তলানিতে পৌঁছেছে যে, গাজায় চলমান গণহত্যার জন্য তারা প্রতিরোধকারী যোদ্ধাদের দায়ী করে এবং তারা হত্যাকারী ইসরাইলকে নয় বরং প্রতিরোধকারী যোদ্ধাদেরকে চাপ প্রয়োগ করছে অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য! তাদের আশা যে, এতে করে তারা ইসরাইল ও তাদের মিত্র বিশেষত আমেরিকার দয়ায় টু-ষ্টেট সমাধানের আওতায় গাজার অথরিটিও বুঝে পাবে। গত ৩০শে জুলাই আরব লীগের ২২টি সদস্য দেশ, পুরো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ আরও ১৭টি দেশ জাতিসংঘ আয়োজিত এক সম্মেলনে ফিলিস্তিনি অথরিটির পক্ষে এমন ঘোষণা দেয়। ঐ ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “Governance, law enforcement and security across all Palestinian territory must lie solely with the Palestinian Authority, with appropriate international support,” [CNN, 30 July 2025]। বলাবাহুল্য হাসিনা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার, বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার বায়তুল মাক্বদিস ও তার অধিবাসীদের বিষয়ে একই নীতি গ্রহণ করেছে। তারা উপরে উপরে ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দিলেও টু-ষ্টেট সমাধান মেনে নেয়ার মাধ্যমে অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র স্বীকার করে নিয়ে ইসলাম ও ফিলিস্তিনের মুসলিমদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের শিক্ষাবৃত্তি দেয়া কিংবা কিছু ত্রাণ পাঠানো এই গণহত্যা থেকে তাদের মুক্তি মিলবে না কিংবা তাদের প্রতি আমাদের ঈমানী দায়িত্ব পালনও করা হবে না। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি এবং মসজিদ আল-আকসার মুক্তির জন্য আমাদের এমন উদ্যোগ নিতে হবে যা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যলেঞ্জ করে পশ্চিমাদের দালাল শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করতে পারে। এটি অনুধাবন করতে পেরে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুজতাহিদে মুত্বলাক্ব ত্বাকী উদ্দীন আন-নাভাহানী (রহ.) বলেছিলেন, “ইসরাইল হচ্ছে আরব শাসকদের ছায়া, ফলে এই শাসকদের অস্তিত্ব বিলীন হলে তাদের ছায়াও বিলুপ্ত হবে”। তিনি ১৯৫৩ সালে হিযবুত তাহ্রীর নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেন। যে দলটি মুসলিম বিশ্বজুড়ে জাতিরাষ্ট্রগুলোর এই লজ্জাহীন শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতা উন্মোচন করে যাচ্ছে এবং ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ব্যবস্থা নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
